জাতীয় বেতন স্কেলে আগের তুলনায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মর্যাদাগত ও আর্থিক সুবিধা কমানো যাবে না। সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেলকে যে নামই দেয়া হোক না কেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মর্যাদাগত ও আর্থিক সুবিধা অক্ষুন্ন রাখতে হবে। বিদ্যমান সুবিধা বাড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট সময় অন্তর বেতন স্কেল দেয়া হয়, কমানোর জন্য নয়। যদি জাতীয় বেতন স্কেলের মাধ্যমে সরকারি কর্মকর্তাদের মর্যাদার হানি ঘটে বা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয় তবে তা কোনোভাবেই মেনে নেয়া হবে না। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে প্রকৃচি-বিসিএস সমন্বয় কমিটি একথা জানিয়েছে।
সংগঠনটি বলছে, জাতীয় বেতন স্কেল-২০১৫ তে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল রাখা হচ্ছে না। একইসঙ্গে চাকরিজীবীদের জন্য আইনগত অধিকার হওয়া সত্ত্বেও বার্ষিক বেতনবৃদ্ধি একবছরের জন্য স্থগিত রাখা হচ্ছে। এছাড়াও ক্যাডার কর্মকর্তাদের জন্য চাকরিতে যোগদান স্কেল হিসেবে অষ্টম গ্রেড এবং নন ক্যাডার কর্মকর্তাদের জন্য নবম গ্রেড করার মাধ্যমে নতুন করে বৈষম্য সৃষ্টি করা হচ্ছে। প্রকৃচি-বিসিএস সমন্বয় কমিটি এসব বিধান কোনাভাইে মেনে নেবে না। এসব অনিয়ম দূর করে মর্যাদা ও আর্থিক সুবিধা বহাল রেখে অতিদ্রুত জাতীয় বেতন স্কেলের প্রজ্ঞাপন জারির জোর দাবি জানাচ্ছে।
প্রকৃচি-বিসিএস সমন্বয় কমিটি বার বার জানিয়েছে যে, সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বন্ধ করা হলে কর্মকর্তাদের মধ্যে এমনকি একই ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্যে চরম মর্যাদাগত ও আর্থিক বৈষম্য সৃষ্টি হবে। সকল ক্যাডার ও সার্ভিসে পদোন্নতির সুষম ব্যবস্থা না থাকায় সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল চালু করা হয়। অনেক বছর যাবত এ ব্যবস্থা চালু রয়েছে। এ বিষয়ে কোনো মহল থেকে কখনোই আপত্তি জানানো হয়নি। অপরদিকে সরকারের বিশেষ পদ হিসেবে চিহ্নিত উপসচিব থেকে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত পদগুলোতে সুপারনিউমারারি পদ সৃজন করে অনুমোদিত পদের চেয়ে অধিক সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদান করা হচ্ছে।
এতে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা লাভবান হলেও অন্যান্য ক্যাডারে সুপারনিউমারারি পদ সৃজন না করায় কর্মকর্তারা পদোন্নতি বঞ্চিত হয়ে বছরের পর বছর একই পদে কাজ করছেন। এ বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে দাবি জানানো সত্ত্বেও কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। অথচ সুপারনিউমারারি পদ সৃজনের মাধ্যমেও পদোন্নতির সুষম অবস্থা সৃষ্টি করা সম্ভব। সুপারনিউমারারি পদ সৃজন বা পদোন্নতির সুযোগ সৃষ্টি না করে সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বন্ধ করে দেয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। প্রকৃচি-বিসিএস সমন্বয় কমিটি সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল সুবিধা বহাল রাখা ও সকল ক্যাডারে সুপারনিউমারারি পদ সৃজনের জন্য আবারও জোর দাবি জানাচ্ছে।
বার্ষিক বেতনবৃদ্ধি একজন কর্মকর্তার চাকরিগত আইনানুগ অধিকার। এ অধিকার বন্ধ করা হবে আইন পরিপন্থী কাজ। সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপিল বিধিমালা-১৯৮৫ অনুযায়ী কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের শাস্তি হিসেবে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি স্থগিত রাখা হয়। বলা হচ্ছে, ১ জুলাই সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন বৃদ্ধি হিসেব গণনার জন্য বার্ষিক বেতনবৃদ্ধি এক বছরের জন্য স্থগিত রাখা হচ্ছে। অথচ বেতন নির্ধারণকালে একটি ইনক্রিমেন্ট যোগ করে এর সহজ সমাধান করা যায়। এতে সরকারের আর্থিক সংশ্লেষও নগণ্য।
আমরা আরও বিস্ময়ের সঙ্গ লক্ষ্য করছি যে, জাতীয় বেতন স্কেল-২০১৫ তে প্রথম শ্রেণির সরকারি চাকরিতে যোগদানের ক্ষেত্রে ক্যাডার কর্মকর্তাদের জন্য অষ্টম গ্রেড ও নন ক্যাডার কর্মকর্তাদের জন্য নবম গ্রেড নির্ধারণ করা হচ্ছে। এ ব্যবস্থা চালু করা হলে গোটা জাতির জন্য এক ভয়ানক বিপর্যায় ডেকে আনবে। সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে অধিকাংশই নন ক্যাডার কর্মকর্তা। মেধা ও যোগ্যতার মাপকাঠিতে কোনোভাইে নন ক্যাডার কর্মকর্তাগণ ক্যাডার কর্মকর্তাদের তুলনায় নিম্নমানের নয়।
এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে সাধারণত মেধাবীরাই যোগদান করে থাকেন। দেশের খাদ্য ও আমিষের উৎপাদন বৃদ্ধি, বিদ্যুৎখাতের অগ্রগতি, যোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নয়ন এবং বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে মেধাবীরা নিয়োজিত থেকে দেশের উন্নয়নে অনন্য অবদান রেখে যাচ্ছে। তারা সবাই নন ক্যাডার কর্মকর্তা। চাকরিতে যোগদানের ক্ষেত্রে এমন মর্যাদাহানি করা হলে মেধাবীরা বৈজ্ঞানিক বা গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠানে যোগদানে নিরুৎসাহিত হবেন। এ ছাড়া সরকারি প্রকৌশলীদের মধ্যে ৮০ ভাগই নন ক্যাডার কর্মকর্তা। তাই প্রথম শ্রেণির সরকারি চাকরিতে যোগদানের ক্ষেত্রে এমন বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা চালু করা হলে এক ভয়াবহ বিপর্যায় দেখা দেবে। প্রকৃচি-বিসিএস সমন্বয় কমিটি প্রথম শ্রেণির সরকারি চাকরিতে যোগদানের এমন বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা চালুর তীব্র প্রতিবাদ এবং এ উদ্যোগ বন্ধ করার জোর দাবি জানাচ্ছে।
প্রকৃচি-বিসিএস সমন্বয় কমিটি মনে করে, একজন অপশোদার ব্যক্তি সকল বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হতে পারেন না, যা আমাদের দেশের আমলাতন্ত্রে বিদ্যমান। বিশ্বের কোথাও এমন আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থা নেই। ঔপনিবেশিক ধাঁচের আমলাতন্ত্রের কারণে বাংলাদেশের অগ্রগতি কম হয়েছে। স্বাধীন দেশের উপযোগী গণমুখি প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা হলে দেশের উন্নয়ন আরও গতিশীল হবে। তাই বিদ্যমান আমলাতন্ত্রের পরিবর্তে স্বাধীন দেশের উপযোগী গণমুখি, কল্যাণ ও সেবাধর্মী প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এ জন্য কৃত্য পেশাভিত্তিক প্রশাসনের বিকল্প নেই।
প্রকৃচি-বিসিএস সমন্বয় কমিটির যৌক্তিক দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আগামী১৯ ডিসেম্বর, শনিবার, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এসময়ের মধ্যে দাবি বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ নেয়া না হলে আন্দোলনের বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।