রেকর্ড শব্দটাই অস্তিত্ব। চিরস্থায়ী হওয়ার সুযোগও নেই। ওয়ানডে ক্রিকেটে অনেক আগেই রেকর্ড বুকে ঢুকেছে পড়া আয়ারল্যান্ড দলের সর্বোচ্চ সংগ্রহ ছিলো ৩০৯ রান। বিশ্বক্রিকেটে যা ১১তম সেরা ইনিংস। ঢাকাতে যে আগের রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলবে, তা অনুমেয় ছিলো না। বৃহস্পতিবার জাপানের বিপক্ষে তাই হলো, ৩১১ রান করে সেরা ১০’এ ঢুকে গেলো।
বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল এখনো রেকর্ডের দৌড়ে নেই। হাঁটি হাঁটি পা পা করে চলতে শিখেছে। বেড়ে উঠতে সময় লাগবে। ভালো ভাবে চলতে শেখার আগেই যে বোলতে শিখেন বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটাররা, তা জানা ছিলো না। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষ খেলা নিয়ে কথার খৈ ফোটালেন জাতীয় দলের অধিনায়ক। একপেশে বক্তব্যে সমীহ শব্দটাকেও তুলে দিলেন। বলেন কি না, আয়ারল্যান্ডের চেয়ে তারা ভালো দল এবং তারাই জিতবেন! “আমরা কালকে (বুধবার) তাদের খেলার ভিডিও দেখেছি। দেখে অনেক কিছুই বুঝতে পারলাম, কোথায় দুর্বল, কোথায় ভালো খেলে। তারা ব্যাটিং খুব ভালো করে কিন্তু সোজা সোজা খেলে। আরেকটা জিনিস হচ্ছে ফিল্ডিংয়ে একটু দুর্বল। আমি মনে করি তাদের দলের চেয়ে আমাদের দল অনেক ভালো। আমরা জিতবো।”
দেশের মানুষ তাদের জন্য কায়মনে প্রার্থনাও করছেন। সত্যিই যেন তাই হয়। কিন্তু বাস্তবতা এবং পরিসংখ্যান দেখলে আশার ভেলা পানি পাচ্ছে না। সেই ১৯৮৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিচরণ আইরিশ নারী ক্রিকেট দলের। ১৯ বছর পরে যে সুযোগ পেয়েছে তাদের পুরুষ ক্রিকেট দল! আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আইরিশ নারী দলের বয়স এখন ২৪ বছর। সংখ্যার হিসেবে প্রাপ্ত বয়স্ক। ওহ বলা হয়নি, আইরিশ দলের একটি টেস্ট ম্যাচ খেলারও অভিজ্ঞতা আছে। ২০০০ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচটি খেলেছিলো।
বাংলাদেশে নারী ক্রিকেট দলের আত্মপ্রকাশ ২০০৭ সালে। এখনো ওয়ানডে দলের স্বীকৃতি পাইনি। বিশ্বকাপ বাছাই প্রতিযোগিতা থেকে ওই মর্যাদার আসনে যাওয়ার ইচ্ছে থেকেই আয়ারল্যান্ডকে হারানোর স্বপ্ন দেখছেন স্বাগতিক দলের খেলোয়াড়রা। জাপানকে ১০ উইকেটে হারিয়ে এক পা অগ্রসর হয়েছে। শুক্রবার আইরিশদের হারাতে পারলেই শুধু পা নয় পুরো শরীরটাই ওয়ানডে দলের কাতারে দাঁড় করিয়ে দিতে পারবে। ‘বি’ গ্রুপের তৃতীয় দল হিসেবে অগ্রগামী হওয়ার সুযোগও তৈরি হবে। আসলে সবই তো মুখে মুখে হচ্ছে, বাস্তবে তা ধরা দিলেই হয়। সালমা খাতুন তো আশাবাদি,“অভিজ্ঞতায় তারা এগিয়ে। কিন্তু আমাদের বোলিং অনেক ভালো। ফিল্ডিংও ভালো। আমি মনে করি বোলিং, ফিল্ডিং এবং ব্যাটিং দিয়েই জিতবো।”
সালমা বোধহয় খেলার জোরের চেয়ে মনের জোরে একটু বেশিই এগিয়ে। কথাতেই তা স্পষ্ট,“তারা পাকিস্তানের সঙ্গে ১৪০ করেছে। আরেকটা ম্যাচে ৫৫ বা ৬০ রান করেছিলো। আমি মনে করি আমাদের দল তাদের চেয়ে অনেক ভালো এবং আমরা জিতবো। জাপানের সঙ্গে তারা ৩১১ রান করেছে। আমরা আগে ব্যাটিং করলে তাদের চেয়ে বেশি রান করতাম।”
সালমা না হয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সঙ্গে খুব বেশি পরিচিত নয়। কিন্তু কোচ মমতা মাবেন, তিনি তো ভারতের অধিনায়ক ছিলেন। তিনিও বাংলাদেশ দলকে আইরিশ দলের চেয়ে এগিয়ে রাখলেন। এবং তার দল জিতবে বলে জানিয়ে দিলেন।
আইরিশ অধিনায়ক ইসাবেল জয়েস অবশ্য জানালেন,“হোম কন্ডিশনে খেলায় বাংলাদেশ দল চেষ্টা করবে ভালো খেলতে। তারা বেশি স্পিনার খেলাবে। কিন্তু ওয়ানডে মর্যাদা ধরে রাখতে হলে আমাদেরকে ছয় দলের মধ্যে থাকতে হবে। গ্রুপের সবচেয়ে দুর্বল দলের বিপক্ষে আজ জয় পেয়েছি। পরের ম্যাচেও আমাদেরকে অবশ্যই জিততে হবে।”
বিকেএসপির যে মাঠে শুক্রবার খেলা হবে কোন দল চাইলে সেখানে রানের বন্যা বয়ে দিতে পারে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই ওপেনার সেঞ্চুরি পেয়েছেন ওই মাঠে। স্টেফানি টেলর করেছেন ১০৭ রান আর জুলিয়ানা নেরো ১০০ রানের ইনিংস খেলেছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ করে চার উইকেটে ২৭৬ রান। ওই মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকা ৩৪৩ রানের ইনিংস খেলেছে পাঁচ উইকেটে। বিকেএসপির ওই মাঠে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১৮০ থেকে ১৯০ রান যথেষ্ট মনে করছেন সালমা। বলেন,“পরের ম্যাচে আমরা যদি আগে ব্যাটিং পাই, তাহলে আনেক বেশি পেশাদারিত্ব দেখাতে হবে। আমাদের লক্ষ্য ১৮০ বা ১৯০ রান।”
আসলে বাংলাদেশ দলের তো ওই পর্যন্তই রান তোলার অভিজ্ঞতা আছে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৮৮ রানই ইনিংসে তাদের সর্বোচ্চ। কখনো ২০০ রান করতে পারেনি। সেখানে আয়ারল্যান্ড আগে বোলিং করলে কোন দলকেই ২০০ রান করতে দেয় না। রেকর্ড তাই বলে। তারচেয়ে বড় পাঁচটি বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা আছে আয়ারল্যান্ডের। যাদেরকে হারিয়ে ওয়ানডে মর্যাদা পেতে চায় বাংলাদেশ তারা এরই মধ্যে ১০২টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে ফেলেছে।
সে যাই হোক, উভয় দলের জন্য গ্রুপে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যে দল জিতবে তাদের অবস্থান হবে গ্রুপের তৃতীয়। বাংলাদেশ জিতলে ওয়ানডে মর্যাদা পাবে। আয়ারল্যান্ড হেরে গেলে তাদের কপাল পুড়বে।