জাল দলিল লুকাতে ডাকাতি মামলা

জাল দলিল লুকাতে ডাকাতি মামলা

612জাল দলিল লুকাতে ডাকাতির ঘটনা সাজিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগে বরগুনায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।

মঙ্গলবার সকালে বরগুনা প্রেসক্লাবে উপস্থিত হয়ে তারা বলেন, জাল দলিলের মাধ্যমে পৈত্রিকসূত্রে পাওয়া সকল জমি রেকর্ড করে নিয়ে দু’টি পরিবারের ২০ জন সদস্যকে পথে বসিয়েছেন বরগুনা সদর উপজেলার গৌরীচন্না ইউনিয়নের মধ্য খাজুরতলা গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য রমনী মোহন মিস্ত্রী।

ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য দিলীপ সাওজাল জানান, রমনী মোহন মিস্ত্রী জাল দলিলের মাধ্যমে তারই মামা যোগেন্দ্র নাথ রায় এবং জোতিন্দ্র নাথ রায়ের প্রায় আট একর জমি নিজের নামে রেকর্ড করে নেন। দীর্ঘদিন পরে যোগেন্দ্র নাথ ও জোতিন্দ্র নাথ রায়ের ওয়ারিশগণ এ বিষয়ে আদালতে জাল দলিলের অভিযোগ এনে মামলা  (দেঃ মোঃ নং ১৩৪/১৫) দায়ের করলে আদালত রমনী মোহন মিস্ত্রীকে তার পক্ষের কাগজপত্র নিয়ে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়।

আদালতের এ নির্দেশনার একদিন পরেই রমনী মোহন মিস্ত্রী তার বাড়িতে একটি ডাকাতির ঘটনা সাজিয়ে গত ২০ নভেম্বর বরগুনা থানায় একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। যার নম্বর জিআর ২৮/৫৪০। এ  মামলায় রমনী মোহন মিস্ত্রী তার বিরুদ্ধে দায়ের করা দেওয়ানি মামলার বাদী পক্ষের লোকজনকে আসামি করেন এবং তার সকল দলিলপত্র ও গহনাপাতি লুট করে তাকে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী পরিবারের অপর এক সদস্য সন্ধ্যা রানী জানান, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী দলিলপত্র দেখাতে পারবেন না বলে সুপরিকল্পিতভাবে রমনী মোহন মিস্ত্রী তার বাড়িতে এ ডাকাতির ঘটনা সাজিয়ে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। অন্যদিকে যাতে বিরোধী পক্ষ তার বিরুদ্ধে কোনো দেওয়ানী মামলাও চালাতে না পারেন তাই তাদের আসামি করে পুলিশের চোখে অপরাধী করে রেখেছেন।

সন্ধ্যা রানী আরও বলেন, রমনী মোহন মিস্ত্রীর দায়ের করা সেই মিথ্যা ডাকাতি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

এ সকল বিষয়ে একই গ্রামের স্থানীয় অধিবাসী ও অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক চিত্তরঞ্জন বিশ্বাস বলেন, যোগেন্দ্র নাথ রায় এবং রমনী মোহন মিস্ত্রী সম্পর্কে মামা ভাগ্নে। মামা যোগেন্দ্র রায় এক সময় একটি হত্যা মামলার আসামি হয়ে দীর্ঘদিন ভারতে পলাতক ছিলেন। এই ফাঁকে ভাগ্নে রমনী মোহন মিস্ত্রী তার স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া দানপত্র তৈরি করেন এবং যোগেন্দ্র রায়ের সকল সম্পত্তি দলিলমূলে রেকর্ড করে নেন। বিষয়টি স্থানীয় অধিবাসীদের অনেকেরই জানা।

তিনি আরও বলেন, রমনী মোহন মিন্ত্রী আদালতে তার জাল দলিল দেখাতে পারবেন না বুঝেই তার বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা সাজিয়ে এ মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন বলে তাদের ধারণা।

রমনী মোহন মিস্ত্রীর অপর একজন প্রতিবেশী উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা দুলাল চন্দ্র বালা বলেন, রমনী মোহন মিস্ত্রী তার বাড়িতে ডাকাতির ঘটনায় তার বিরোধী পক্ষের উত্তম কুমার এবং গোবিন্দ বৈরাগীসহ আরও অনেকের নাম দিয়ে মামলা করেছেন। যাদের বাড়িও একই স্থানে।

তিনি আরও বলেন, ঘটনার দিন রমনী মোহনের বাড়ি যখন ডাকাতি সদৃশ কোনো ঘটনা ঘটছিলো তখন তিনি এ মামলার প্রধান আসামি উত্তম কুমার এবং গোবিন্দ বৈরাগীকে তাদেরই ঘর থেকে ঘুম থেকে ডেকে তোলেন এবং রমনী মোহনের বাড়িতে কিছু একটা ঘটছে বলে অবহিত করেন।

এ বিষয়ে উত্তম কুমার এবং গোবিন্দ বৈরাগী বলেন, ঘটনার দিন তারা নিজ নিজ বাড়িতেই ঘুমিয়ে ছিলেন। বিষয়টি সবারই জানা। তারপরও তাদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে মিথ্যে মামলা দেয়া হয়েছে। সে মামলায় এখন তারা গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তারা আরও জানান, এ মামলায় তাদেরই অপর আরেক খালাতো ভাই সঞ্জয় মিস্ত্রী যে কিনা রাজধানী ঢাকায় পড়াশোনা করেন তাকেও আসামি করা হয়েছে।

অভিযুক্ত রমনী মিস্ত্রীর সঙ্গে কথা বললে তিনি তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি কোনো মিথ্যে মামলা করেননি। তার বাড়িতে মুখোশ পড়া লোকজন এসে ডাকাতি করেছে তাও এলাকাবাসী দেখেছে। মুখোশ পড়া ডাকাতদের মধ্যে উত্তম, গোবিন্দ এবং সঞ্জয় মিস্ত্রী ছিল কিনা তা আপনি নিশ্চিত হলেন কী করে এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি রমনী মিস্ত্রী।

এ বিষয়ে বরগুনা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে। এ বিষয়ে পক্ষ বিপক্ষের অভিযোগ তারা শুনেছেন। পূর্ণ তদন্ত শেষ হলে প্রকৃত বিষয়টি বেরিয়ে আসবে বলে তিনি জানান।

জেলা সংবাদ