বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালনা পর্ষদের (বোর্ড অব ডিরেক্টরস) সদস্যরা সংস্থার দৈনন্দিন কাজে হস্তক্ষেপ করছেন। শুধু তাই নয়, পরিচালনা পর্ষদের সভার নামে লাখ লাখ টাকা উত্তোলন করছেন।
অনুসন্ধানে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় পরিচালনা পর্ষদের অনেক বেশি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতসব সভার পরেও এয়ারলাইন্স একটি লোকসানি প্রতিষ্ঠান।
বিমান সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এয়ার মার্শাল জামাল উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ দায়িত্ব গ্রহণ করে। বর্তমান পর্ষদ যখন দায়িত্ব নেয় তখনো বিমানের রিজার্ভে ৫শ কোটি ছিল। এই পর্ষদের অধীনে গত তিন বছরে বিমান ৩শ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে বিমানের দেনা রয়েছে ৬শ কোটি টাকা।
বিমানের এক কর্মকর্তা জানান, বিমানের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানের পদটি একটি অনারারি পদ। বিগত ৩৮ বছরের বিমানের পরিচালনা পর্ষদের দায়িত্ব পালনের জন্য চেয়ারম্যান কোনো বেতন-ভাতা নেননি। কিন্তু জামাল উদ্দিন আহমেদ পর্ষদের চেয়ারম্যান হওয়ার পর প্রতি মাসে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা বেতন নিচ্ছেন, বিমানের প্রধান কার্যালয় বলাকায় নিয়মিত অফিস করেন।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা এর আগে সভায় উপস্থিতির জন্য সম্মানি পেতেন ১ হাজার টাকা। জামাল উদ্দিন আহমেদের পর্ষদ দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রতিটি পর্ষদ সভা যোগদানের জন্য সদস্যদেরকে ৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। আগে মাসে একটি সভা হতো আর এখন কোনো কোনো মাসে একাধিক সভা হয়ে থাকে।
বিমানের অন্য একটি সূত্র জানায়, পর্ষদের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন আহমেদ বিমানের দৈনন্দিন কাজে হস্তক্ষেপ করছেন। বিমানের পদোন্নতি, বদলি, শাস্তিসহ সব ধরনের কাজ তার নির্দেশে হয়।
জানা গেছে, পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের দিয়ে ২১টি সাব-কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই সাব-কমিটির সভায় যোগদান করলে প্রত্যেক সদস্য পান ৫ হাজার টাকা। প্রতি মাসে পর্ষদের সাব-কমিটির ৩ থেকে ৪টি সভা হয়ে থাকে। এভাবে বিগত ৩ বছরে এসব সভার নামে পর্ষদ সদস্যরা কোটি টাকার বেশি বিমান থেকে উত্তোলন করেছেন।
বিমানের এক পর্ষদ সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আগে বিমান ছিল কর্পোরেশন। এখন এটি কোম্পানি। আগের কর্পোরেশনের অনেক নিয়ম-কানুনই এয়ারলাইন্সে নেই। তাই আগের সবকিছুর সঙ্গে তুলনা করা উচিত নয়।
সূত্র জানায়, নিয়মানুযায়ী বিমান পর্ষদের কর্মকাণ্ড নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে সীমিত থাকবে। কিন্তু সম্প্রতি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ক্যাটারিং সার্ভিস ও বিমান পোল্ট্রিতে একটি করে মোট দু`টি পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা হয়, যার চেয়ারম্যান হিসেবে আছে পর্ষদের সদস্যরা। ক্যাটারিং সার্ভিস ও বিমান পোল্ট্রির পর্ষদ চেয়ারম্যান হিসেবে আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা ব্যবহার করছেন, যা সম্পূর্ণ বিধি বহির্ভূত।
বিমানের অন্য এক সদস্য বলেন, পর্ষদ সদস্যরা আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি সক্রিয়। যে কারণে বিমানের আয় বেড়েছে। বিমানের লোকসান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আয় বেড়েছে। সেই সঙ্গে ব্যয়ও বেড়েছে। যে কারণে লোকসান হচ্ছে। এজন্য পর্ষদ সভায় ব্যয় সংকোচন নীতি পাস করা হয়েছে। এটি সঠিকভাবে কার্যকর করতে পারলে লোকসানের বৃত্ত থেকে বিমান বেরিয়ে আসবে।