মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা বিদেশিদের সম্মান জানানোর দ্বিতীয় পর্বে বাছাই করা ১৩২ জনের মধ্যে ১১০ জনকে আমন্ত্রণ জানাতে পেরেছে সরকার। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি এ তথ্য জানান।
এদের মধ্যে ২৯ ভারতীয় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান আছে বলেও জানান তিনি।
বিদেশিদের সম্মাননা জানানোর এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে গিয়ে কিছু ‘নিরাপত্তা ঝুঁকি’ থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) তাজুল ইসলাম।
মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা বিদেশিদের সম্মাননা জানানোর বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তাজুল ইসলাম এ কথা বলেন।
ডা. দীপু মনি সম্মাননা জানানো বিষয়ক জাতীয় কমিটির সভাপতি।
অনুষ্ঠানে জামায়াতে ইসলামীর কাউকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বলে জানিয়ে দীপু মনি বলেন, ‘জামায়াতের ২ সংসদ সদস্যকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।’
দীপু বলেন, ‘স্বাধীনতার সময় যারা পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তাদের সম্মান জানানোর প্রয়োজন আছে, জাতির পক্ষ থেকে সম্মান জানানোর প্রয়োজনও আছে।’
৫৬০ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকা করা হয় বলে তিনি জানান। সেখান থেকে ১৩২ জনকে দ্বিতীয় পর্বের জন্য বাছাই করা হয়।
দীপু মনি বলেন, ‘এর বাইরেও ‘অবিস্মরণীয় ভূমিকা’ রেখেছেন এমন অনেকেই আছেন।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, এই ১৩২ জনের মধ্যে সাবেক রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবিসহ কয়েকটি সংগঠন রয়েছে।
রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ২৭ মার্চ তাদের হাতে সম্মাননা তুলে দেবেন।
আমন্ত্রণ জানানো ১১০ জনের মধ্যে ৭৫ জন সরকারের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে ঢাকা আসছেন। এদের মধ্যে ২১ জন স্বশরীরে বাকি ৫৪ জনের প্রতিনিধি আসছেন।
সঠিক ঠিকানা না জানা এবং কেউ বেঁচে না থাকা বা পরিবারের কেউ আসার মতো না থাকায় ১৩২ জনের সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো যায়নি।
দীপু মনি বলেন, ‘কেউ মারা গেছেন, কারও আবার ঠিকানা জানা যায়নি।’
তাজুল ইসলাম বলেন, ‘৭৫ জনের বাইরে দু’একজন বাড়তেও পারেন।’
শনিবার আসছেন ৩২ জন।
তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক একটি অনুষ্ঠানের কারণে আমন্ত্রিতরা আসতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।’
এই সম্মাননা জানানোর প্রথম অনুষ্ঠিত পর্ব হয় গত বছরের ২৫ জুলাই সোনিয়া গান্ধীর হাতে সম্মান জানানোর মধ্য দিয়ে।
জাতীয় কমিটি প্রায় ২ বছর ধরে কাজ করে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হাতে হাত ধরে কাজ করে।’
দীপু বলেন, ‘সম্মাননা জানানোর বিষয়টি একটি চলমান প্রক্রিয়া। এখানেই শেষ নয়।’
তিনি বলেন, ‘অনেকেরই নাম দীর্ঘ তালিকায় আছে, এই তালিকায় আসেনি।’
৫৬০ জনের অবদানই অনস্বীকার্য বলেও মন্তব্য দীপু মনির।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রীরা যখন বিদেশ সফরে যাবেন তখন ওইসব দেশে দূতাবাসের মাধ্যমে অনুষ্ঠান আয়োজন করে সম্মাননা জানানো হবে।’
অন্যদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মিজানুর রহমান, ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব মুস্তফা কামাল, চিফ অব প্রটোকল খন্দকার তালহা, বহিঃপ্রচার অণুবিভাগের মহাপরিচালক মাসুদ মাহমুদ খন্দকার প্রমুখ।
পাকিস্তানি নাগরিকের বাংলাদেশি নাগরিকত্বের আবেদন:
পাকিস্তানি নাগরিক আসগর খান বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার আবেদন করেছেন বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে সরাসরি এখনও আবেদন আসেনি।’
তিনি বলেন, ‘আমি পত্রিকান্তরে দেখেছি।’
তার আবেদন পাওয়া গেলে বিবেচনা করা হবে বলে জানান দীপু মনি।
আইএসআইয়ের বক্তব্য প্রসঙ্গ
পাকিস্তানের কাছে ট্রান্সক্রিপ্ট চেয়েছি বলে জানান দীপু মনি।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য আমরা দেখেছি বলে মন্তব্য করে দীপু মনি বলেন, ‘ট্রান্সক্রিপ্ট পাওয়ার পর দেখা যাবে।’
সৌদি কর্মকর্তায় সৌদি তদন্ত
বাংলাদেশে যে কোনও চাঞ্চল্যকর ঘটনায় বিদেশিদের তদন্তের জন্য আনা হয়। সেভাবেই সৌদি কর্মকর্তা খুনের ঘটনায় সৌদি আরবের প্রতিনিধি পাঠানোর কথা সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়েছি।
দিন তারিখ ঠিক হয়নি তবে সৌদি আরবের তদন্ত দল আসবে।
বিরোধীদলের অনীহা
বিদেশিদের সম্মাননা জানানোর এই বিষয়টিতে বিরোধীদলের অনীহা রয়েছে বলে মন্তব্য করেন দীপু মনি।
তিনি বলেন, ‘আমি ব্যক্তি দীপু মনি নই, আমি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।’
দীপু বলেন, ‘দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবমাননা করা হলে পুরো দেশকেই অবমাননা করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘সৌদি আরব নিয়ে বিরোধীদল যেভাষায় জাতীয় সংসদে কথা বলেন, তখন বোঝা যায় থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসে।’
দীপু বলেন, ‘নেতিবাচক অপরাজনীতিকে প্রতিহত করতে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রস্তুত।’
পাকিস্তানিরাও সম্মাননা পাবেন
পাকিস্তানের হাতে গোনা কয়েকজন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। তাদেরও পর্যায়ক্রমে সম্মাননা জানানো হয়েছে।
মানিক সরকার বিতর্ক
ত্রিপুরার বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারকে সম্মাননা দেওয়া নিয়ে ত্রিপুরার একটি গোষ্ঠীর বিরোধিতা প্রসঙ্গে দীপু মনির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।
মানিক মুক্তিযুদ্ধকালীন একজন যুব নেতা ছিলেন বলে মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ত্রিপুরার শুধু একজন নয় আরও কয়েকজনকে দেওয়া হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পুরো ত্রিপুরার মানুষের প্রতিই এই সম্মাননা। যারা বিরোধিতা করেছেন, তারা না জেনেই করছেন।’
মুক্তিযুদ্ধকালীন মানিক সরকারের ভূমিকার প্রশংসা করে তাজুল ইসলাম জানান, মানিক সরকার আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অনেক করেছেন।
তিনি বলেন, ‘ত্রিপুরার শচীন্দ্রলাল সিংহ এই সম্মাননা পাচ্ছেন।’
‘কাকে সম্মাননা দেওয়া হবে, তা ঠিক করবে বাংলাদেশ’ বলেও মন্তব্য করেন তাজুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানসূচি:
২৪ তারিখ থেকেই মূলত অতিথিরা আসতে শুরু করেছেন। হোটেল সোনারগাঁও ও রূপসী বাংলায় তারা উঠেছেন।
২৫ মার্চ তাদের বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ও মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শনে নিয়ে যাওয়া হবে। এছাড়া শিখা চিরন্তনের তাদের নিয়ে যাওয়া হবে।
এর বাইরে নৌভ্রমণের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
২৬ মার্চ জাতীয় স্মৃতি সৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনের ব্যবস্থা রয়েছে। সেদিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের জন্য মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করা হয়েছে।
স্বাধীনতা দিবসের দিন বিকেলে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং সন্ধ্যার পর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অতিথিদের সম্মানে তাদের নৈশভোজে অংশ নেবেন।
২৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সম্মাননা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
২৮ মার্চ থেকে তারা দেশে ফিরে যাওয়া শুরু করবেন। যদিও কেউ কেউ কয়েকদিন এদেশে আরও কয়েকদিন থাকতে আগ্রহী।