জন্মস্থান বাংলাদেশকে বিদেশ করে মঙ্গলবার দুপুরে নতুন দেশ ভারতে চলে গেলেন ৩০টি পরিবারের ১৫২ জন। গত রোববার ১৪টি পরিবারের ৪৮ জন ও সোমবার দুপুরে চিলাহাটি হলদিবাড়ী সীমান্ত দিয়ে ভারত গমন করতে পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার দুটি বিলুপ্ত ছিটমহলের ২৮টি পরিবারের ১৪৭ জন।
গত তিন দিনে এ সীমান্ত দিয়ে ভারত গমন করেছে ৭২টি পরিবারের ৩৪৭ জন। সকালে পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার দেবীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ মাঠে অস্থায়ী ক্যাম্প থেকে পুলিশ ও বিজিবি পাহারায় তাদেরকে চিলাহাটি নিয়ে আসা হয়।
চারটি বাসে ভারতীয় গমণকারী সদস্যরা ও ছয়টি ট্রাকে রয়েছে পরিবারগুলোর মালামাল। শেষ বিদায় বেলায় আত্মীয়-স্বজন এবং বিদায়ী ভারতীয়রা কান্নায় ভেঙে পড়েন। এসময় অসংখ্য উৎসুক জনতাও বেদনার্ত হয়ে পড়েন।
ভারতে যেতে খারাপ লাগছে তবু ব্যক্তিগত কারণে যাচ্ছি। বাংলাদেশে তেমন কোনো সুযোগ সুবিধা পাচ্ছি না। লেখাপড়া শিখে ঘুষ দিয়ে চাকরি পেতে হয়, সেটা ভারতে নেই। ভারতের নাগরিকত্ব গ্রহণকারী সদ্য ১নং বিলুপ্ত দহলা খাগড়াবাড়ী বাসিন্দা ভারতে প্রবেশের মুখে এ কথাগুলো বলেন, ডোমার উপজেলাধীন মিরজাগঞ্জ মহাবিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির ছাত্র সনাতন রায় (১৮)।
নীলফামারীর ডোমার উপজেলা ভোগডাবুড়ী ইউনিয়নের আব্দুর রউফ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে বিলুপ্ত ছিটমহলের ভারত গমণকারীদের ইমিগ্রেশন কাজ সম্পন্ন করা হবে। সেখানে দুইটি বুথ স্থাপন করা হয়েছে। ইমিগ্রেশন কাজ সম্পন্ন করা শেষে ভারতীয় প্রতিনিধি দলের কাছে ১৫২ জনকে হস্তান্তর করা হয়।
ভারতে গমণকারীদের মধ্যে পুরুষ ৬৩ ও নারী ৫০ জন এবং দুই নবজাতকসহ ৩৯ জন শিশু সদস্য রয়েছে।
চিলাহাটি অস্থায়ী ক্যাম্পে ইমিগ্রেশন শেষে দুপুর সোয়া ২টায় ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয় তাদের। এসময় বাংলাদেশের ভারতীয় দূতাবাসের ফাস্ট সেক্রেটারি রমাকান্ত গুপ্তা, নীলফামারীর সহকারী কাস্টমস কমিশনার হুমায়ুন হাফিজ, ডোমার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুস রাজ্জাক বসুনিয়া, ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবিহা সুলতানা, দেবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম, বিজিবির ৫৬ ব্যাটলিয়ানের লে. কর্নেল গোলাম সারওয়ার, ডোমার থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেন, চিলাহাটি তদন্ত কেন্দ্রের এসআই মনছুর আলীসহ সরকারি দফতরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ভারতীয় প্রতিনিধি হিসেবে নবাগত ভারতীয়দের বরণ করেন কুচবিহারের এডিএম আয়শা রানী ও এডিএম রঞ্জন ঝাঁ। দেবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, আগামী ২৬ নভেম্বর আরেকটি দল চতুর্থ দফা ভারত যাবে। যে সকল পরিবার এরই মধ্যে যাবতীয় কার্যক্রম শেষ করতে পারবে না তাদেরকে আগামী ৩০ নভেম্বর ভারত যেতে হবে।
তিনি আরও বলেন, পঞ্চগড় জেলাধীন অবলুপ্ত ৩৬টি ছিটমহলের মধ্যে ১১টি ছিটমহলের ৯৮টি পরিবারের ৪৮৭ জন সদস্য ভারতে গমন করবেন। অদ্যাবধি তিন দফায় ৭২টি পরিবারের শিশুসহ ৩৪৭ জন সদস্য স্থায়ীভাবে থাকার জন্য ভারতে গমণ করেন।