শ্যুটিংয়ের বিস্ময়

শ্যুটিংয়ের বিস্ময়

বাংলায় একটি প্রবাদ আছে, চল্লিশ পেরোলেই চালশে। আর পঞ্চাশ পেরুলে তো কথাই নেই। মোটা ফ্রেমের হাইপাওয়ার চশমা তখন প্রতি মুহূর্তের সঙ্গী।

তবে এই প্রবাদ ভুল প্রমাণ করেছেন ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের জোহরি গ্রামের চন্দ্র থোমার কৃষ্ণা। ৭৮ বছর বয়সেও যাকে বলা হচ্ছে, পৃথিবীর প্রবীণতম পেশাদার নারী শার্পশ্যুটার। এই বয়সেও তিনি বার্ধক্যের লাঠির পরিবর্তে নিজের সঙ্গী করে রেখেছেন ১২’শ পাউন্ডে কেনা শ্যুটিং পিস্তলটি।

ছয় সন্তানের মা আর ১৫ নাতি-নাতনির প্রিয় এই দাদিমা ইতোমধ্যেই তার লক্ষ্যভেদী দৃষ্টি দিয়ে জিতে নিয়েছেন ভারতের ২৫তম জাতীয় শ্যুটিং চ্যাম্পিয়নশিপ শিরোপা। এছাড়া চেন্নাইয়ে প্রবীণদের শ্যুটিং চ্যাম্পিয়নশিপেও জিতেছেন সোনা।

নিজের বিষয়ে কৃষ্ণা বলেন, ‘আমার জীবনে দরকারি কিছুই আমি করতে চাই, সেই সঙ্গে মানুষকে আমার সক্ষমতা দেখাতে চাই।’

‘জীবনের প্রথম গুলিটা করার পর নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ি। এখন আমি সবাইকে দেখাতে পেরেছি বয়সের কারণে আমার কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তুমি যদি লক্ষ্য স্থির রাখ তাহলে সবকিছু করতে পারবে।’ বলেন অফুরন্ত প্রাণশক্তির অধিকারীনি এই বয়োবৃদ্ধ নারী।

অতীত স্মৃতি হাতড়ে কৃষ্ণা বলেন, ‘দশ বছর আগে নাতনিকে নিয়ে স্থানীয় একটি শ্যুটিং রেঞ্জে যাই। সেখানে শ্যুটিংয়ের নতুন নতুন কৌশল শিখতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু একা যেতে লজ্জা হচ্ছিল। অবশেষে ক্লাবে জায়গা পাই।’

তিনি বলেন, ‘আমি কিছু একটা করার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করেই কোচের নজরে আসি। তিনি আমার নিশানা দেখে অভিভূত হয়ে যান।’

এর পর আর পেছনে ফিরে তাকাননি কৃষ্ণা। শ্যুটিংয়ে নিয়মিত হন তিনি। পরিবারের অন্যরা খুব একটা সমর্থন না দিলেও বড় মেয়ে প্রথম থেকেই ছিল তার বড় ভক্ত। প্রথম দিকে শ্যুটিং বিষয়টিকে কৃষ্ণা বেশ উপভোগ করতেন। কিন্তু এই উপভোগ এক সময় ভালোবাসায় রূপ নিলে প্রতি সপ্তাহে ক্লাবে যেতে শুরু করেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে কৃষ্ণার কোচ ফারুক পাঠান বলেন, ‘আমাদের দলে একজন বয়স্ক মানুষ দেখে তখন চমৎকৃত হয়েছিলাম। তিনি শ্যুটিংয়ের সবকিছু দ্রুত আয়ত্ব করতে পেরেছিলেন। তিনি এখন দেশের সম্পদ।’

উল্লেখ্য, কৃষ্ণার বড় মেয়ে (বড় ফ্যানও) সীমা আন্তর্জাতিক মানের শ্যুটিংর। সীমা প্রথম ভারতীয় নারী হিসেবে রাইফেল ও পিস্তল শ্যুটিংয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে মেডেল জিতেছেন।

আন্তর্জাতিক