বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসির বিষয় নিয়ে রোববার জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় অংশ নিয়ে মন্ত্রী-এমপিরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রায় কার্যকর করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান।
তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে এই বিচার কাজ করেছেন। দেশি-বিদেশি কোনো শক্তিই তাকে এই বিচার থেকে বিরত রাখতে পারেনি। এই বিচারের রায় কার্যকরের মধ্যদিয়ে ৪৩ বছর পরে জাতি কলঙ্কমুক্ত হচ্ছে।
সন্ধ্যায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক চলাকালে ৭১ বিধির মনোযোগ আকর্ষণ নোটিশের কার্যসূচি স্থগিত করে স্পিকার পয়েন্ট অব অর্ডারে বক্তব্য দেয়ার জন্য সংসদ সদস্যদের সুযোগ দেন। রোববার রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকরের বিষয়েই সদস্যরা বক্তব্য রাখেন।
আলোচনায় অংশ নেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, আওয়ামী লীগের সিনিয়র সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপুমনি, ক্যাপ্টেন এবি এম তাজুল ইসলাম, সংসদ সদস্য খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মো. আবদুর রহমান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুল মান্নান, শামীম ওসমান, ডা. রুস্তম আলী ফরাজী প্রমুখ।
এর আগে প্রশ্নোত্তর পর্বেও প্রশ্ন করতে গিয়ে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াও ফাঁসির প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেন। প্রশ্নকর্তাদের অনেকেও প্রশ্নের আগে বিষয়টি উল্লেখ করেন।
অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে তোফায়েল আহমেদ বলেন, শেখ হাসিনা যদি প্রধানমন্ত্রী না হতেন কেউ এই দুটি বিচার করতেন না। অনেকে বলতো পাস্ট ইজ পাস্ট। তিনি ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে প্রথমে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার করে ফাঁসি দিয়েছেন। তারপর এখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে একে একে রায় কার্যকর করছেন। তার ওপর অনেক আন্তর্জাতিক চাপ ছিল। বঙ্গবন্ধুকন্যা অনেক ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ করেছেন। বার বার মৃত্যুর কাছাকাছি গিয়ে তিনি বঙ্গবন্ধু যে কাজ করতে পারেননি সেইসব কাজ করে যাচ্ছেন। জাতির পক্ষ থেকে কতৃজ্ঞচিত্তে শেখ হাসিনাকে এ জন্য অভিনন্দন জানাই।
শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, যারা স্বচ্ছ বিচারের পর প্রশ্ন তুলেছেন তাদের কাছে জিজ্ঞেস করি ফ্রান্সে একটি হামলার ঘটনা ঘটেছে সেখানে ধরে ধরে মারা হচ্ছে। আমরাতো সেটা করেনি।
তিনি বলেন, এই বিচারের মধ্যদিয়ে প্রমাণিত হলো দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন নিশ্চিত করার জন্য শেখ হাসিনার বিকল্প নেই। বিদেশিদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনারা এসব কথা বলে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের রক্ষা করতে পারবেন না।
কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, জিয়াউর রহমান প্রেসিডেন্ট হয়ে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার যাতে না হয় সে ব্যবস্থা করেছিলেন। সেইসঙ্গে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না করার জন্য আইনও করেন। তিনি যুদ্ধাপরাধীদের হাতে জাতীয় পতাকা তুলে দেন এবং মন্ত্রিসভায় স্থান দেন। কিন্তু ইতিহাসের চাকা ঘুরে। কী নৃশংসভাবেই না তিনি খুন হলেন। তার স্ত্রী ও পুত্ররা তার কবরে কতবার গেছেন তা প্রশ্নবিদ্ধ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে ২০০৯ সালে যে নির্বাচনী ইশতিহার দিয়েছিল তাতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের অঙ্গীকার ছিল । তিনি সেটি অক্ষরে অক্ষরে পূরণ করেছেন। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছেন।