জালনোট : ঝুলে আছে ৪০০০ মামলা

জালনোট : ঝুলে আছে ৪০০০ মামলা

১৯৯৮ থেকে ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জালনোট সংক্রান্ত মোট মামলা হয়েছে ৫ হাজার ১২১টি। বিপরীতে ১৩ বছরে নিষ্পত্তি হয়েছে ১ হাজার ২৩৪টি মামলা। তবে বেশিরভাগ মামলায় অভিযুক্তরা খালাস পেয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র বলছে, মামলার সাক্ষী না পাওয়ায় বেশির ভাগ মামলায় অভিযুক্তরা ছাড়া পেয়ে যাচ্ছেন। আবার আসামি সনাক্ত করতে না পারায় অনেক মামলা খারিজ করে দেয় আদালত।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক দাশগুপ্ত অসীম কুমার জানান, জালনোট সংক্রান্ত মামলার নিষ্পত্তির হার খুবই কম। আবার যেগুলো নিষ্পত্তি হয়, সেগুলোতে আশানুরূপ সাজা হয় না। কারণ, সাক্ষী দিতে চায় না কেউ। সাক্ষীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেও সাক্ষ্য দিতে আনা সম্ভব হয় না। আবার পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে। তারাও খুব বেশি গুরুত্ব দিতে পারে না। অনেক সময় মামলার আসামি খুঁজে পাওয়া যায় না। আর এসব কারণে নিষ্পত্তি যেমন কম হয় তেমনি আদালত মামলা খারিজও করে দেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সূত্র বলছে, ১৯৯৮ সালের আগ পর্যন্ত মোট মামলা ছিলো ৭৯৪টি। আর ওই বছর মামলা হয় ৭৬টি। বিপরীতে নিষ্পত্তি হয় একই বছরে মাত্র ২২টি মামলা। এর পর থেকে জালনোট সংক্রান্ত মামলার সংখ্যা প্রতি বছর বাড়ছেই। কিন্তু নিষ্পত্তির হার সন্তোষজনক নয়।

তথ্য মতে, জালনোট নিয়ে সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে ২০১১ সালে। এ বছর মোট মামলা হয় ৫৯১টি। এর আগে ২০০৭ সালে ৫২১টি, ২০০৫ সালে ৫১৯টি, ২০০৬ সালে ৫০২টি ও ২০১০ সালে দায়ের হয় ৪৯০টি মামলা। হিসাব মতে, ২০০০ সালের পরে কোনো বছরই আড়াইশ’র নিচে মামলা হয়নি।

বিপরীতে এক বছরে সবচেয়ে বেশি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ২০০৬ সালে। সে বছর মোট ১৯২টি মামলা নিষ্পত্তি হয়। এছাড়া ২০০৫ সালে ১৪৮, ২০০৭ সালে ১৪৬ ও ২০০৪ সালে ১১৮টি মামলা নিষ্পত্তি করে আদালত। আর সবচেয়ে কম সংখ্যক মামলা নিষ্পত্তি হয় ১৯৯৯ সালে। এর সংখ্যা ছিল ১৪টি। ২০১১ সালে নিষ্পত্তি হয় মাত্র ৭৭টি মামলা। ২০১০ সালে ৭৩টি।

মামলা দায়ের, অপরদিকে নিষ্পত্তি কম হওয়ার কারণ পুঞ্জিভূত মামলার সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫ হাজার ১২১টি।

দাশগুপ্ত বলেন, ‘জালনোট সংক্রান্ত মামলায় ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত ছিলো। পরে তা সংশোধন করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড করা হয়েছে। জরিমানার বিধানও আছে। নানা কারণে এসব মামলায় অভিযুক্তরা সাজা পান না। আবার অনেক সময় নিরাপরাধ ব্যক্তিকে হয়রানি হতে হয়। কারণ, পুলিশ যার হাতে টাকা পাবে তার বিরুদ্ধে মামলা করবে। এতে করে অনেক সময় নিরাপরাধ ব্যক্তির ওপর দায় পড়ছে। কারণ, সে হয়তো না চিনে কোনো প্রতারকের কাছ থেকে টাকাটা নিয়েছে।

এদিকে মামলার আলামত হিসেবে যে টাকা আদালতে দেওয়া হয়, তা স্বত্ব নিয়ে আদালত ও ব্যাংলাদেশ ব্যাংকের বিরোধ রয়েছে। আদালত মনে করে, এটি আদালতের সম্পত্তি; সেখানে সংরক্ষিত থাকবে। অপরদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক সকল ব্যাংকিং নোটের মালিক হওয়ায় সংশ্লিষ্ট জালনোট হাতে পেতে চায়। বিষয়টির আইনি সুরাহা হওয়া উচিত বলে জানান একাধিক কর্মকর্তা।

অর্থ বাণিজ্য