যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এবং বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর প্রাণভিক্ষার আবেদন নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে বলা হয়, মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত দুই আসামি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছেন। কিন্তু দণ্ডিতদের পরিবারের সদস্যরা তা অস্বীকার করে। গতকাল শনিবার রাতে ফাঁসি কার্যকর হওয়ার কিছুক্ষণ আগে সাকা চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর কারাগার থেকে বের হয়ে তার ছোট ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, আমার বাবা প্রাণভিক্ষা চাননি। একই দাবি করেছেন মুজাহিদের ছোট ছেলে আলী আহম্মেদ মাবরুর।
এদিকে গতকাল শনিবার দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গণমাধ্যমকে বলেন, দুই আসামির আবেদনে কিছুটা অস্পষ্টতা রয়েছে। তবে ওদিন সন্ধ্যায় তিনি গণমাধ্যমকে বলেন- তারা প্রাণভিক্ষার আবেদনই করেছেন। আর আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক রাতে সাংবাদিকদের জানান, দুই যুদ্ধাপরাধী সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছেন। তবে আবেদনপত্রে কি লেখা আছে এবং তিনি কি সুপারিশ করেছেন তা জানাননি।
এদিকে আসামিপক্ষের পরিবার ও তাদের আইনজীবী এবং দুই যুদ্ধাপরাধীর রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, দুই আসামি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার কোনো আবেদন করেননি। সরকার বিষয়টি নিয়ে অহেতুক নাটক সৃষ্টি করছে।
অন্যদিকে সংবিধানেও প্রাণভিক্ষার আবেদন বলে কিছু নেই। সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে ক্ষমা প্রদর্শন করতে পারবেন রাষ্ট্রপতি। এ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কোনো আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত যে কোনো দণ্ডের মার্জনা, বিলম্বন ও বিরাম মঞ্জুর করিবার এবং যে কোনো দণ্ড মওকুফ, স্থগিত বা হ্রাস করিবার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকিবে।’ এই অনুচ্ছেদের অধীনে কোনো আবেদন করলেই সেটা প্রাণভিক্ষার আবেদন হবে কিনা এ বিষয়ে আইন বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, আইনে প্রাণভিক্ষা বলে কিছু নেই। আসামি প্রাণভিক্ষা চাইবে কেন? আইনগতভাবে কেউ প্রাণভিক্ষা চাইতেও পারেন না। আবার রাষ্ট্রপতি প্রাণভিক্ষা দেয়ারও মালিক না। কেউ প্রাণভিক্ষা না চাইলে সেটা প্রাণভিক্ষার আবেদন হবে কেন? আবেদনে কী চাচ্ছে সেটা দেখতে হবে। আবেদনে আসামি যদি পুনঃবিচার চায়, তাহলে সেটা তো প্রাণভিক্ষার আবেদন হল না।
তাছাড়া প্রাণভিক্ষা বিষয়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত দুই যুদ্ধাপরাধীর প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আসামি লিখিতভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করেছে কিনা সেটা দেখতে হবে। তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিষয়টা নিয়ে সরকার নাটক করছে। তারা প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছেন- এটা তাদের পরিবারের সদস্যরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। বিশেষ করে সাকা চৌধুরীর পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, তাকে জনসম্মুখে হেয় করার জন্যই সরকার এটা করছে। যে কাগজটা আইন মন্ত্রণালয়ে গেছে, জনমনে বিভ্রান্তি দূর করতে সেটা গণমাধ্যমে প্রকাশ করার দাবি জানান তিনি। তিনি বলেন, আসামিকে প্রাণভিক্ষার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতিকে দেয়া হয়নি। আমাদের সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি একমাত্র প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতির নিয়োগ ছাড়া অন্য সব কাজ প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশে করে থাকেন। রাষ্ট্রপতি ইচ্ছে করলেও কাউকে মাফ করতে পারেন না। তাই তার কাছে মাফ চাওয়ার আবেদন করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। তিনি বলেন, আমি যতদূর জেনেছি, আসামিরা নিজেকে ডিফেন্ড করার জন্য একটি চিঠি দিয়েছেন। সেখানে বলেছেন, এই বিচার সঠিক হয়নি। এটার পুনর্বিচার করা হোক।
গত ১৮ নভেম্বর যুদ্ধাপরাধী মুজাহিদ ও সাকা চৌধুরীর রিভিউ আবেদন খারিজের মধ্য দিয়ে তাদের বিচারিক প্রক্রিয়ার পরিসমাপ্তি ঘটে। শুধু বাকি ছিল রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শনিবার সকালে মুজাহিদ ও সাকা চৌধুরী রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চেয়ে আবেদন করবেন কিনা- সে বিষয়ে জানতে দু’জন ম্যাজিস্ট্রেট ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রবেশ করেন। পরে কারাগার থেকে বের হয়ে তারা এই আবেদনের ব্যাপারে সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। পরে দুই আসামি প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছেন মর্মে দুপুরে সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে।
এ ব্যাপারে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক দুপুরে গণমাধ্যমকে জানান, দু’জনই রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়ে আবেদন করেছেন। আইনি লড়াই নিষ্পত্তির পর এখন দুই যুদ্ধাপরাধী শুধু রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে পারেন। তা স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয় হয়ে যাবে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে। নামঞ্জুর হলে তাদের মৃত্যুদ- কার্যকর হবে।
আবেদনে কী বলা হয়েছে প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, কারা কর্তৃপক্ষ আমাকে জানিয়েছে, দু’জনই প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছেন। তারা প্রাণভিক্ষার আবেদন ছাড়া আর কিছু পাঠাতে পারেন না। একমাত্র প্রাণভিক্ষার আবেদন করার সুযোগই তাদের আছে। এতে কী লেখা আছে, সেটা দেখার বিষয় তাদের নয়। কারা কর্তৃপক্ষ প্রাণভিক্ষার আবেদন মনে করেই পাঠিয়েছেন। আইনমন্ত্রীর এই বক্তব্যের কিছুক্ষণ পরই ‘গুরুত্বপূর্ণ পত্রাদি’ লেখা একটি রেজিস্টার নিয়ে কারাগার থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যান ডেপুটি জেলার সর্বোত্তম দেওয়ান ও আরিফুজ্জামান। বেলা ১টা ৫৫ মিনিটে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা হয়ে সচিব ড. মোজাম্মেল হক খানের কক্ষে প্রবেশ করেন তারা। এরপর দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে মন্ত্রণালয় ত্যাগ করেন ওই দুই কারা কর্মকর্তা। আর বিকাল ৪টা ৩৫ মিনিটে এ সংক্রান্ত নথি আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক বলেন, তারা আবেদন দুটি পেয়েছেন। এখন এর ওপর কাজ করছেন। সন্ধ্যা ৭টায় ফাইলটি অনুমোদনের জন্য আইন সচিব সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের গুলশানের বাসায় যান। ৭টা ২০ মিনিটে ফাইলে মতামত দেয়ার পর নিজ বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধাপরাধে দ-িত সাকা চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ বাংলাদেশ সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতির ক্ষমার ক্ষমতা প্রয়োগ চেয়ে আবেদন করেছেন। এর ওপর আইনি মতামত চাওয়া হয়েছে। সেই ফাইলে মতামত দিয়ে তা সই করে পাঠানো হয়েছে। দ-িতদের পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করা হয়নি- এমন প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, যারা প্রাণভিক্ষা চান তারাই সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদে দরখাস্ত করেন। এই দুটি দরখাস্ত বাংলাদেশ সংবিধানের ৪৯ ধারায় রাষ্ট্রপতির যে ক্ষমা করার ক্ষমতা, তা প্রয়োগ করার জন্যই করা হয়েছে। অপরাধ স্বীকার করেই কি আবেদন করা হয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, এটা কিন্তু সম্পূর্ণ রাষ্ট্রপতির ব্যাপার। আমি যা পড়েছি, সেটা যতক্ষণ পর্যন্ত এই ফাইল রাষ্ট্রপতি না পড়ছেন তা বলা সমীচীন হবে না। আইন মন্ত্রণালয় কি মতামত দিয়েছে জানতে চাইলে আনিসুল হক বলেন, যার কাছে মতামত পাঠিয়েছি তিনি তা না পাওয়া পর্যন্ত সেটাও বলা ঠিক হবে না। প্রাণভিক্ষার বিষয়টি নিয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে এমন অভিযোগের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, এতে কোনো অস্পষ্টতা থাকছে বলে আমার মনে হচ্ছে না। আমি তো পরিষ্কারই আপনাদের বলছি। যে দরখাস্তটা তারা করেছেন সেটা বাংলাদেশের সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতির যে ক্ষমা করার ক্ষমতা, সে ক্ষমতা প্রয়োগ করার জন্য আবেদন করেছেন। আমি যেটা বলছি না, সেটা হল তারা আবেদনে কি বলেছেন এবং আমরা কি মতামত দিয়েছি।
এরপর ফাইলটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠানো হলে রাত ৮টা ১০ মিনিটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও স্বরাষ্ট্র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খান এবং আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মোহাম্মদ জহিরুল হক বঙ্গভবনে যান। প্রাণভিক্ষার আবেদন করা হয়েছে নিশ্চিত করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় বলেন, মানুষ কেউই মরতে চায় না। এক মুহূর্ত বাঁচার জন্য যত ধরনের প্রচেষ্টা রয়েছে তার সবই করে সবাই। তারা প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছেন। সেই প্রক্রিয়াই চলছে এখনও। আবেদনে কী বলা হয়েছে- জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিস্তারিত জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। দ-িতদের পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়নি বলে দাবি করা হয়েছে জানানো হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ওরা (পরিবারের সদস্য) কি কারাগারে ছিল? তারা কীভাবে জানল প্রাণভিক্ষার আবেদন করেনি? যদি তাই হতো তাহলে আমরা এতক্ষণ বসে থাকি নাকি। আমাদের কাজ শুরু করে ফেলতাম। আমরা বসে আছি ফরমালিটিজ শেষ করার জন্য। প্রক্রিয়া চলছে।
আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের পর প্রাণভিক্ষার আবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে মুজাহিদের ছেলে আলী আহমেদ মাবরুর বলেন, আইনজীবীদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ না দিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ বা সরকার থেকে বলা হচ্ছে, উনি মার্সি পিটিশন করেছেন। এটা আমাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে না। জামায়াতে ইসলামীর এক বিবৃতিতেও বলা হয়েছে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে কারা অধিদফতরের বরাত দিয়ে প্রচার করা হচ্ছে যে, জনাব আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছেন। প্রচারিত এ খবরটি সম্পূর্ণ অসত্য ও বিভ্রান্তিকর
এদিকে শনিবার সকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী প্রাণভিক্ষা চাইবেন না। তার পরিবারের পক্ষ থেকেও প্রাণভিক্ষা চাওয়া হবে না। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ইচ্ছানুযায়ী, এ বিচার নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মহলের পর্যবেক্ষণ রাষ্ট্রপতির কাছে তার পরিবার তুলে ধরবেন। এ ব্যাপারে শনিবার বিকালেই রাষ্ট্রপতির কাছে একটি আবেদন (পিটিশন) দেয়া হবে। তবে গয়েশ্বরের ওই বক্তব্যের পর একই ব্রিফিংয়ে উপস্থিত সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী বলেন, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সঙ্গে তার আইনজীবীদের দেখা করতে না দেয়া পর্যন্ত বলতে পারছেন না, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী প্রাণভিক্ষা চাইবেন কিনা। প্রাণভিক্ষা নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। আইনজীবীদের দেখা করার পরই বিষয়টি জানা যাবে। তাই সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সিদ্ধান্ত জানতে দ্রুত কারাগারে আইনজীবী প্রবেশের দাবি জানান তিনি। গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী ফরহাত কাদের চৌধুরী ত্রুটিপূর্ণ বিচারের বিষয়ে বলেন, আমরা আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি দেব। কিছুক্ষণের মধ্যে আমরা বঙ্গভবনে যাব চিঠি দিতে। উনি (সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী) আমাকে বলেছেন যে, দীর্ঘ ৩০ বছর রাষ্ট্রপতি সংসদের সদস্য ছিলেন, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীও সদস্য ছিলেন। তিনি আশা করেন, বিষয়টি দেখে তিনি (রাষ্ট্রপতি) একটা পদক্ষেপ নেবেন।’
রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার বিষয়ে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সিদ্ধান্ত কী জানতে চাইলে তার স্ত্রী বলেন, আমরা এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। এটা উনার ব্যাপার। আমরা যখন তাকে জিজ্ঞাসা করেছি, তখন তিনি বলেছেন, আইনজীবীর কাছে বলব। আমরা ভেবেছিলাম আইনজীবীদের তিনি (স্বামী) বলবেন। এখন আমরা মিস ট্রায়ালের বিষয়টি লিখে রাষ্ট্রপতির কাছে দেব। বিভিন্ন পেপারস আছে, সেগুলো দেব। এটা আমাদের কোনো বক্তব্য নয়। আমরা আমাদের বক্তব্য তুলে ধরেছি। এটা আমাদের ব্যক্তিগত অনুভূতি, বিএনপি আমাদের পাশে আছে।
বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদেরের পরিবারের সদস্যরা গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের পর রাষ্ট্রপতির কাছে একটি আবেদন নিয়ে বঙ্গভবনে যান। তাতে যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে প্রশ্ন তুলে তার প্রতিবিধান চাওয়া হয়। সেখানে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি নিয়ে সালাহউদ্দিন কাদেরের ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, বাবা ক্ষমা চেয়ে মার্সি পিটিশন চাইবেন? এটা আমি বিশ্বাস করি না। আইনমন্ত্রী তা জানিয়েছেন বলা হলে হুম্মাম বলেন, আনিসুল হক ভালো করেই জানেন, বাবা কী বলতে পারেন। আমার বাবা কী ধরনের লোক, তা সবাই জানে। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আরেক ছেলে ফাইয়াজ কাদের চৌধুরী বিকালে কারাফটকে সাংবাদিকদের একই কথা জানান।
বঙ্গভবনে গিয়ে বিফল সাকা পরিবার : যুদ্ধাপরাধের ত্রুটিপূর্ণ বিচারে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছে অভিযোগ জানিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি দিতে গিয়ে বিফল হয়ে ফিরেছে তার পরিবার। শনিবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে চিঠি নিয়ে বঙ্গভবনে যান ফরহাত কাদের ও ছেলে হুম্মাম। বঙ্গভবনের ফটকের সামনে গাড়িতে বসেছিলেন ফরহাত। ‘পিটিশন টু দ্য অনারেবল প্রেসিডেন্ট ফ্রম সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী’ শিরোনামের চিঠিটি নিয়ে হুম্মাম ভেতরে গেলে মূল ফটকের রিসিপশনে তাকে বসানো হয়। বঙ্গভবনের ডেসপাস শাখার কর্মকর্তারা তাকে জানান, রাষ্ট্রপতির কাছে সরাসরি কোনো আবেদন করা যায় না। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চিঠি দিতে হবে। এরপর হুম্মাম রিসিপশন থেকে বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের বলেন, তাদের চিঠি নেয়া হয়নি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দিতে বলা হয়েছে। আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আবেদনটি জমা দেব।
ক্ষমা চাননি বাবা : মৃত্যুদ-প্রাপ্ত সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়ে আবেদন করেননি বলে দাবি করেছেন তার ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী। কারাগারে বাবার সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে তিনি সাংবাদিকদের কাছে একথা বলেন। সাকাকে উদ্ধৃত করে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, আমার বাবা বলেছেন, সরকার নির্বাচনে আমাকে (সাকা) হারাতে পারেনি। তাই আমার জান নিয়ে নিচ্ছে।
রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন কিনা জানতে চাইলে হুম্মাম বলেন, আমার বাবা আমাকে বলেছেন, এ সরকারের আমলে কত কাগজ বের হচ্ছে। এ রকম বাজে কথা (প্রাণভিক্ষা) কে বলেছে? সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ভাই জামাল উদ্দিন কাদের চৌধুরীও সাংবাদিকদের বলেন, আমার ভাই একটি কথাই বলেছেন, আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর। সাকার স্ত্রী ফরহাত কাদের চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমি বাকরুদ্ধ। আমি কোনো কথা বলতে পারব না। যা বলবে আমার ছেলেরাই বলবে। ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, আমার বাবা ন্যায়বিচার পাননি।
আর জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের সঙ্গে শেষ দেখা করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বের হয়ে তার ছোট ছেলে আলী আহমেদ মাবরুর সাংবাদিকদের বলেন, তার বাবা প্রাণভিক্ষা চাননি। এরা আগেও মিথ্যাচার করেছে, এখনও করছে।