প্রথম ছয়, ‘ওই রকম টিম পেলে আমার কুকুর জেরিও বিশ্বকাপ নিয়ে আসত!’
বোলার জন বুকানন। পরের ছয়, ‘দুঃখিত, কিন্তু নেতৃত্ব নিয়ে জ্ঞান দেওয়ার কোনও যোগ্যতা ওর নেই।’
বোলার অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস। তৃতীয় ছয়, ‘গত বারো বছরে নিশ্চয়ই বোঝাতে পেরেছি, আমার ৩৮৯ ব্যাগি গ্রিন টুপির মূল্য আমার জীবনে ঠিক কতখানি।’ বোলার, মাইকেল ক্লার্কের ফিল্ডিং-দায়বদ্ধতা নিয়ে এক সময় প্রশ্ন তুলে থাকা ম্যাথু হেডেন।
বাইশ গজে রাজপাটের দিনগুলোয় ব্যাট হাতে মুহূর্তে হয়ে উঠতেন বিধ্বংসী। হাতে কলম নিয়েও যে ঝড় তোলায় ততটাই সাবলীল, বুঝিয়ে দিলেন মাইকেল ক্লার্ক! সূর্য-উজ্জ্বল কেরিয়ারের শেষ বেলায় ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ জেতার বিজয় তিলক অ্যাসেজ হারের ধূসর ভস্মে মুছে গিয়েছিল প্রাক্তন অস্ট্রেলীয় অধিনায়কের। সেই ছাইয়ে দাঁড়িয়ে কেরিয়ারে ইতি টানেন প্রবল সমালোচনার মুখে। সমালোচকদেরই পাল্টা দিতে এ বার কলম হাতে তিনি। নিজের বই, ‘অ্যাসেজ ডায়েরি ২০১৫’-এ ক্লার্ক সবচেয়ে শানিত আক্রমণটা করেছেন প্রাক্তন অস্ট্রেলীয় কোচ জন বুকাননকে। যাঁর কোচিংয়ে বিশ্বকাপের সঙ্গে টানা ষোলো টেস্ট জয়ের বিশ্বরেকর্ডও এসেছিল অস্ট্রেলিয়ায়।
গত অগস্টে, ক্লার্কের অবসরের সময় তার নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়া টিমের ক্রিকেট সংস্কৃতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বুকানন। যার জবাবে ক্লার্ক লিখেছেন, ‘ব্যাগি গ্রিন টুপির মর্যাদা কী, সেটা জন জানেই না। কারণ ওই টুপি মাথায় পরার যোগ্যতা ও কোনও দিনও অর্জন করেনি।’ অস্ট্রেলিয়াকে বিশ্বসেরা করায় বুকাননের আদৌ কোনও অবদান ছিল বলেও মনে করেন না ক্লার্ক। লিখেছেন, ‘জন আজও এই বলে নিজের ঢাক পেটায় যে ওর কোচিংয়ে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। কিন্তু সত্যিটা হল, ওই রকম দুর্র্ধষ একটা টিমকে আমার কুকুর জেরি কোচিং করালেও টিমটা সেই বিশ্বসেরাই হত।’
ইংল্যান্ডের মাঠে অ্যাসেজ হারের সময় টেলিভিশনে ক্লার্কের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন সাইমন্ডস। যাকে বইয়ে তুলোধনা করে ক্লার্ক লিখেছেন, ‘টিভিতে আমার ক্যাপ্টেন্সি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস। যে লোকটা দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে ম্যাচের দিন বেহেড মাতাল হয়ে মাঠে আসে, তার অন্যের দিকে ইটপাটকেল ছোড়াটা মানায় না।’ এর পর যোগ, ‘দুঃখিত, কিন্তু কারও নেতৃত্বের মূল্যায়ন করার যোগ্যতা সাইমন্ডসের নেই।’
কিংবদন্তি ওপেনার ম্যাথু হেডেনকেও ছাড়েননি খুনে মেজাজে কলম ধরা ক্লার্ক। হেডেন দাবি করেছিলেন যে কেরিয়ারের গোড়ার দিকে ক্লার্ক নাকি ক্লোজ-এ ফিল্ড করতে চাইতেন না। পন্টিংয়ের সঙ্গে ক্লার্কের এক কথোপকথন তুলে হেডেন বলেছিলেন, ‘ক্লার্ক রিকিকে বলেছিল, ওকে হেলমেট পরে ব্যাটের কাছে দাঁড়াতে বাধ্য করা হলে ও ব্যাগি গ্রিন টুপিটাই ফেরত দিয়ে দেবে।’
বইয়ে সেই প্রসঙ্গে ফিরে ৮৬৪৩ টেস্ট রান এবং ১৩৪ টেস্ট ক্যাচের মালিক ক্লার্ক লিখেছেন, ‘আমার মনে হয় গত বারো বছরে এটা বোঝাতে পেরেছি যে ক্রিকেট মাঠে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধিত্ব করা আমার কাছে ঠিক কতটা গৌরবের। ৩৮৯টা ব্যাগি গ্রিন টুপির মূল্য আমার জীবনে ঠিক কতখানি।’ এর পর অস্ট্রেলিয়ার ২০১৫ বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক যোগ করেছেন, ‘সেই সময় রিকি যদি আমাকে সিডনি হারবার ব্রিজ থেকে লাফাতে বলত, তাই করতাম। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলাটা আমার কাছে এতটাই বড় ছিল!’
বই নিয়ে বলাই বাহুল্য তোলপাড় চলছে। অস্ট্রেলিয়া টিমে ক্লার্কের ডাকনাম ছিল ‘পাপ’। মানে ছোট্ট ছানা। সেই ‘পাপ’ যে সিংহের মতো হুঙ্কারটাও জানে, বই লিখে বুঝিয়ে দিলেন ক্লার্ক। এখন দেখার সিংহের গুহায় পাল্টা হানা দিতে কেউ এগিয়ে আসেন কি না।