পার্টি গার্ল থেকে আত্মঘাতী বোমারু

পার্টি গার্ল থেকে আত্মঘাতী বোমারু

প্যারিসের দরিদ্র শহরতলীতেই বেড়ে উঠেছে বয়সে ২৬ বছরের এক তরুণী। সে পার্টিতে গিয়ে 17আমোদ-ফুর্তি করতে ভালোবাসতো। আর সেই মেয়েটি কিভাবে জঙ্গিদের সঙ্গে ভিড়ে গিয়ে আত্মঘাতী বোমারুতে পরিণত হলো সেই সমীকরণ মেলাতে পারছেন না তার পরিচিতজনরা। বন্ধুদের ভাষায় হাসিখুশি এক মেয়ে। যদিও শৈশবে অনেক দুঃখজনক অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে তাকে। প্যারিসের শহরতলীর যে ফ্ল্যাটকে ঘিরে বুধবার ভোররাত থেকে জঙ্গিদের সঙ্গে পুলিশের তীব্র লড়াই চলেছে, সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় হাসনা আইটবুলাসেনের মৃতেদহ।
পুলিশের ধারণা, একটি আত্মঘাতী বোমার বেল্ট বাঁধা ছিল তার শরীরে। এই অভিযান চলার সময় এক পর্যায়ে সেই বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। পুলিশের ধারণা যদি সত্যি হয়, হাসনা আইটবুলাসেন হচ্ছে পশ্চিম ইউরোপের প্রথম আত্মঘাতী মহিলা জঙ্গি। প্যারিসের সন্ত্রাসী হামলার মূল হোতা বলে যাকে ধারণা করা হয়, সেই আবদেলহামিদ আবাউদের দূর সম্পর্কিত বোন বলে বর্ণনা করা হচ্ছে হাসনা আইটবুলাসেনকে।
প্যারিসের যে এলাকায় হাসনা বেড়ে উঠে, সেখানে তার বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে বিবিসি জানতে পেরেছে, তার শৈশব বেশ দুঃখ-কষ্টের ভেতর দিয়ে কেটেছে। অল্প বয়সে তার মা এবং ভাই-বোনদের ফেলে চলে যায় হাসনার বাবা। প্যারিসের খুবই গরীব এক এলাকায় একটি ফ্ল্যাটে থাকে তার মা। সেখানে এখন কড়া পুলিশ প্রহরা। হাসনা আইটবুলাসেনের সঙ্গে এক সঙ্গে স্কুলে পড়াশোনা করেছেন খেমিসা। তিনি বলছেন, হাসনা জীবনকে ভালোবাসতো। আমার মনে হয় না আত্মঘাতী বোমারু হওয়ার কোনো ইচ্ছে ওর ছিল। কেউ হয়তো শেষ মুহূর্তে ওকে প্রভাবিত করেছে।
খেমিসা জানান, তার দুজন এক সঙ্গে নাচের ক্লাসও করেছেন। ও নাচে খুব ভালো ছিল, ভালো গ্রেড পেয়েছিল। আমার মনে হয় না ও মানসিকভাবে সুস্থির ছিল। আমার ধারণা ওকে হয়তো মাদক খাওয়ানো হয়েছিল। হয়তো ও মাদক নিয়েছিল। যদি ও স্বাভাবিক অবস্থায় থাকতো এরকম একটা কাজ ও করতে পারতো না যোগ করেন তিনি।
লে রিপালিকান লোরেন’ নামের স্থানীয় এক সংবাদপত্রে তার এক প্রতিবেশিকে উদ্ধৃত করে বলা হচ্ছে, সে মদ পান করতো। মাথায় বিরাট একটা হ্যাট পরতো। যার জন্য তাকে অনেকে ‘কাউগার্ল’ বলেও ডাকতো। ব্রিটেনের ডেইলি মেল পত্রিকা হাসনার ভাইকে উদ্ধৃত করে বলছে, আমি তাকে জীবনে কখনো কোরআন পড়তে দেখিনি। সারাক্ষণ সে তার ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকতো। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ এসব নিয়ে সময় কাটাতো। মাত্র আট মাস আগে থেকে হাসনা আইটবুলাসেন হঠাৎ ধর্মের দিকে ঝুঁকতে শুরু করে। তাকে নিকাব পরতে দেখা যায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় ইসলামিক স্টেটকে সমর্থন করে নানা রকম বক্তব্যও পোস্ট করতে থাকে।
হাসনা আইটবুলাসেন একবার ফেসবুকে সিরিয়ায় যাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিল সেটা স্বীকার করলেন খেমিসা। তিনি বলেন, আমরা তখন তাকে বিশ্বাস করিনি। আমরা ভেবেছি এসবই অর্থহীন কথাবার্তা। হাসনা কি খুব ধর্মভীরু ছিল? বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিবরণ থেকে তার উল্টো চিত্রই পাওয়া যায়।

Featured আন্তর্জাতিক