ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি বলেছেন, আগামী দিনে অভিন্ন স্বার্থের অন্বেষণে অগ্রগতির ক্ষেত্রে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক একটি ভালো উদাহরণ। ‘১৯৭৪ সালের পর বর্তমানে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক সবচেয়ে ভালো এ সম্পর্কের ভিত্তি পারস্পরিক স্বার্থ, সমতা এবং স্বার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা’, নয়াদিল্লীতে বুধবার সন্ধ্যায় এক ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। ভারতের রাজধানীতে ক্যাভালরি অফিসার্স এসোসিয়েশন আয়োজিত ‘ক্যাভালরি মেমোরিয়াল লেকচার’ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। আজ এখানে প্রাপ্ত এক বার্তায় এ কথা জানানো হয়।
প্রণব মুখার্জি বলেন, ভারত ও বাংলাদেশ কেবল প্রতিবেশী নয়, দুই দেশ ইতিহাস, ধর্ম, সংস্কৃতি, ভাষা ও আত্মীয়তার সূত্রে আবদ্ধ। দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সহযোগিতা হলো প্রতিবেশী দেশ দুটির মধ্যে অভিন্ন সমৃদ্ধি অর্জনের একটি চিত্র। তিনি বলেন, ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে… আমরা সবসময়ই বিশ্বাস করি যে, শক্তিশালী, টেকসই ও সমৃদ্ধ প্রতিবেশীই আমাদের লক্ষ্য। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে একটি নতুন উ”চতায় নিয়ে যেতে ভারতের প্রয়োজন ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনা পুনরুদ্ধার।
ভারতের রাষ্ট্রপতি বলেন, আমি আস্থাশীল যে, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসে সর্বদা বিশেষ এবং অনন্য ঘটনা বিবেচিত হবে। তিনি বলেন, আমাদের সম্পর্ক এখন ব্যাপক অগ্রগতির স্তরে রয়েছে। তিনি আশা করেন, আসছে দিনগুলোতে দারিদ্র্য দূরীকরণ, প্রবৃদ্ধি জোরদার, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহযোগিতার ব্যাপক অগ্রগতি দেখা যাবে।
সার্ক প্রসঙ্গে প্রণব মুখার্জি বলেন, সার্ক গঠিত হয়েছে ১৯৮৫ সালের ৮ ডিসেম্বর, তবে আট-জাতি আঞ্চলিক গ্রুপের সম্ভাবনা গত ৩০ বছরেও বাস্তবায়িত হয়নি। এই ফোরাম ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন মডেলে অনেক প্রক্রিয়া ও প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছে। যদিও এটি ব্যাপকভাবে গৃহীত, তবে গত ৩০ বছরেও ফোরামের পূর্ণ সম্ভাবনা বাস্তবায়িত হয়নি। তিনি বলেন, আমরা আমাদের বন্ধু পরিবর্তন করতে পারি, তবে আমাদের প্রতিবেশী বদলাতে পারি না। আমরা স্থায়ী উত্তেজনাপূর্ণ অবস্থায় থাকবো অথবা একত্রে শান্তি ও সম্প্রীতির পরিবেশ তৈরি করবো, এ ব্যাপারে যদি আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি তাহলে আমরা অবশ্যই অতীত বিভাজনকে পেছনে ফেলে অভিন্ন ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাবো।
দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতা সম্পর্কে প্রণব মুখার্জি বলেন, বাংলাদেশে ভারতীয় বিনিয়োগ কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও প্রযুক্তি উন্নয়নে সহায়ক হবে। এতে বাংলাদেশের অর্থনীতি আরো প্রতিযোগিতামূলক হবে এবং রফতানি বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশে একটি ভারতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক জোন স্থাপনের সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুই দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐতিহাসিক সংযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে এটি একটি বিশাল পদক্ষেপ। এতে উভয়ের স্বার্থ নিহিত রয়েছে।
প্রণব মুখার্জি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত একত্রে একটি বৃহৎ ভোক্তা বাজার হিসাবে উন্নত ও সস্তায় পণ্য ক্রয় এবং ক্লিন এনার্জির উন্নয়ন ঘটাতে পারে। এ ক্ষেত্রে সৌর ও বায়ুনির্ভর জ্বালানি উন্নয়নে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এতে আমাদের অর্থনীতি আরো সুসংহত হবে এবং আমাদের জনগণের মধ্যে আরো ভালো যোগাযোগ স্থাপিত হবে। আমাদের দেশ আরো সমৃদ্ধ হবে। এটি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য নতুন অর্থনৈতিক দরোজা উন্মুক্ত করবে। এরপর দক্ষিণ এশিয়াকে সমন্বিত করতে দুই দেশকে আরো সক্রিয় করবে এবং অগ্রসর পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গভীরতর সম্পৃক্ততার জন্য যোগাযোগ সংযোগ একটি অনুঘটক। দুই দেশ তিনটি বাস সার্ভিস চালু করেছে, এতে দুই দেশের নাগরিকদের যোগাযোগ আরো সহজ হবে। সড়ক, রেল, নদী, সমুদ্র, ট্রান্সমিশন লাইন, পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন সংযোগ এবং ডিজিটাল লিংক অবশ্য বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের মধ্যে আঞ্চলিক সংযোগ ও সহযোগিতা অবশ্যই গভীরতর হবে।
ভারতের রাষ্ট্রপতি বলেন, পারস্পরিক স্বার্থে বাংলাদেশ থেকে ভারত হয়ে নেপাল ও ভুটানের এবং ভারতের মূল ভূখ- থেকে বাংলাদেশ হয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা অনুমোদন প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ চলছে। তিনি বলেন, ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা ও দুই দেশের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে বার বার আলোচনার মাধ্যমে এটি অর্জিত হলে সেটি হবে বিরাট পদক্ষেপ।
ভারতের রাষ্ট্রপতি বলেন, আমরা অবশ্যই বৃহত্তর অর্থনৈতিক সমন্বয়ের দিকে এগিয়ে যাবো। দক্ষিণ এশিয়া হয়ে উঠবে সমন্বিত বাজার। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের ব্যবসায়ীরা তৈরি পোশাক, টেক্সটাইল, লেদারও ওষুধ শিল্পের মতো খাতে ইতোমধ্যে যৌথ উদ্যোগে কাজ করছে। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য, শিপ বিল্ডিং ও অটো যন্ত্রপাতি শিল্পেও যৌথ উদ্যোগের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।