তখন কফির স্ট্যান্ডে বসে গল্পে মজেছিলেন বাবা-মেয়ে। ভাবতে পারেননি একটু পরেই বদলে যাবে চারপাশের ছবিটা। এক আত্মঘাতী জঙ্গির উপর ঝাঁপিয়ে পড়বেন বাবা অ্যাডেল টরমস নিজেই। অনেকগুলো প্রাণ বাঁচালেন টরমস। নিজের প্রাণের বিনিময়ে। এক দিনের হেরফের। আর তার মধ্যেই দু’-দু’টো বিস্ফোরণ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বেইরুটে এবং শুক্রবার প্যারিসে। দু’টি ঘটনার মূলেই আইএস। কিন্তু প্যারিস আক্রমণ যে ভাবে আলোড়ন ফেলেছে গোটা বিশ্বে, বেইরুট হামলায় আদৌ সে রকম কোনও প্রভাব পড়েনি। এমনটাই দাবি করেছেন বেইরুটের বাসিন্দারা। আর তাই তাদের কথা অনুযায়ী, হয়তো অজানা থেকে গিয়েছে অ্যাডেল টরমসের কাহিনি। যার জন্য বেইরুটে সে দিন বহু মানুষের প্রাণ বেঁচে গিয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম।
বেইরুট-হামলায় নিহতের সংখ্যা ৪৫। আহত ২০০-এরও বেশি। অ্যাডেলের বন্ধু পেশায় চিকিৎসক ইলি ফেরিস বলেছেন, অ্যাডেলের জন্যই আজ এখানে একশো ছোঁয়নি নিহতের সংখ্যা। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ইলি জানিয়েছেন, সে দিন বাজার এলাকায় একটি কফির স্ট্যান্ডে মেয়ের সঙ্গেই ছিলেন অ্যাডেল। তখনই প্রথম আত্মঘাতী বিস্ফোরণটি হয়। হুড়োহুড়ি পড়ে যায় সবার মধ্যে। প্রাণ বাঁচাতে যে যেদিকে পারছেন ছুটছেন। মেয়েকে নিয়ে অ্যাডেলও পালাতে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ খেয়াল করেন, পাশের লোকটার হাব-ভাব যেন কেমন ঠেকছে। লোকটা জঙ্গি নয় তো?
থমকে যান অ্যাডেল। নিরুপায় বাবা এক বার দেখেন মেয়ের মুখ। আর একবার জনতাকে। বুঝতে পারেন না, কী করা উচিত! ইলি বলেছেন, বেশি সময় নেননি অ্যাডেল। নিলে হয়তো আটকানো যেত না বিস্ফোরণটা। মুহূর্তের মধ্যে অ্যাডেল ঝাঁপিয়ে পড়েন সেই জঙ্গির উপর। মাটিতে ফেলে তাকে ঠেলে সরিয়ে দেন। বিস্ফোরণটি হয়। মারা যান অ্যাডেল। কিন্তু বেঁচে যায় অনেকগুলো প্রাণ। অনেকগুলো পরিবার।
‘কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে এমন একটা সিদ্ধান্ত নেয়া কি সহজ?’, প্রশ্ন করেছেন ইলি। তার মতে, যে মানসিকতায় নিজের সঙ্গে বাজি লড়ে সবাইকে বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন অ্যাডেল, তা বোধহয় কোনও দিন কেউ বুঝতে পারবে না। ইলির ইচ্ছে, তার এই ‘লেবনিজ হিরোর’ কথা পৌঁছে যাক সকলের কাছে। তাই ঘটনার পর পরই সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাডেল টরমসের কাহিনি পোস্ট করেছিলেন ইলি। কিন্তু তার ক্ষোভ, আন্তর্জাতিক সংবাধমাধ্যম এই ঘটনা নিয়ে তখন আদৌ ভাবেনি। ইলির প্রশ্ন, ‘আরববাসীদের প্রাণ নিয়ে এ পৃথিবীতে কারও মাথাব্যাথা আছে কি?’