ইলেকট্রনিক্স ও ইলেকট্রিক্যাল পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে প্রথম বারের মতো বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করলো আন্তর্জাতিক মানের টেস্টিং ল্যাব ‘নুসডাট ইউটিএস’। সম্প্রতি বাংলাদেশ এক্রিডিটেশন বোর্ড -বিএবি’র কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক সনদ পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এতোদিন ইলেকট্রনিক্স পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে কোনো আন্তর্জাতিক মানের টেস্টিং ল্যাব ছিলো না দেশে। ফলে পণ্য রপ্তানিতে নিতে হতো বিভিন্ন দেশের সার্টিফিকেট। এতে ভোগান্তির পাশাপাশি অনেক সময় এবং অর্থ ব্যয় হতো।
জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে নুসডাট ল্যাব থেকে ফ্রিজ এবং এয়ারকন্ডিশনারের টেস্টিং রিপোর্ট দেয়া হবে। পরবর্তীতে টেলিভিশন, মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স পণ্যের মান নিয়ন্ত্রন প্রতিবেদনও দেয়া হবে। এ বিষিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অত্যাধুনিক ইক্যুইপমেন্ট, অর্ধ-শতাধিক মেধাবী ও অভিজ্ঞ প্রকৌশলী এবং টেকনিশিয়ানের সমন্বয়ে আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুসারে এখানে পণ্য মান যাচাই করা হচ্ছে। বিএবি’র মূল্যায়নে আন্তর্জাতিক মানদন্ড বজায় রাখায় নুসডাট ইউটিএস (ইউনিভার্সাল টেস্টিং সার্ভিসেস) কে যথাযথ প্রক্রিয়ায় অনুমোদন দেয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারি প্রতিষ্ঠান বিএবি আন্তর্জাতিক মান ও গাইডলাইন অনুসারে বিভিন্ন পরীক্ষাগার, সনদ প্রদানকারী সংস্থা, পরিদর্শন সংস্থা এবং প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানকে এক্রিডিটেশন সনদ প্রদান করে থাকে। দেশীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশী পণ্য ও সেবার গুণগতমানের স্বীকৃতি ও গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি এবং রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারনের লক্ষ্যে বিএবি কাজ করছে।
সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল ল্যাবরেটরি এক্রিডিটেশন কোঅপারেশন (আইলাক) এবং এশিয়া প্যাসিফিক ল্যাবরেটরি এক্রেডিটেশন কো-অপারেশন (এপলাক) এর কাছ থেকে বিএবি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেছে। এতে করে, বিএবি’র এক্রেডিটেশন প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে পণ্যের গুণগতমান সম্পর্কে যে সনদ দেয়া হবে তা আইলাক ও এপলাক’র সদস্যভুক্ত দেশগুলোতে সরাসরি গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। বিএবি এর কাছ থেকে এ্যাক্রেডিটেশন পাওয়ায় এখন থেকে নুসডাট-ইউটিএস ল্যাবে পরীক্ষাকৃত পণ্যের টেস্টিং রিপোর্ট বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারি মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থাকর্তৃক সরাসরি গৃহীত হবে। বিশেষ করে ফ্রিজ ও এসি রপ্তানির ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের সরকারি মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থা কর্তৃক নির্ধারিত মানদন্ড অনুসরণ করতে হয়। সাধারনত, বেশিরভাগ দেশই মানদন্ড নির্ধারনের ক্ষেত্রে একটা আন্তর্জাতিক রেটিং বিবেচনায় নিয়ে থাকে।
নুসডাট ইউটিএসের ল্যাবে ফ্রিজ ও এসির যে সকল পরীক্ষা করা হচ্ছে তার মধ্যে অন্যতম এনার্জি কনজাম্পশন টেস্ট, টেম্পারেচার পারফরমেন্স টেস্ট, পুল ডাউন টেস্ট, ভলিউম মেজারমেন্ট, ফ্রিজিং ক্যাপাসিটি টেস্ট, আইস মেকিং টেস্ট, কুলিং ক্যাপাসিটি টেস্ট, মিনিমাম এন্ড ম্যাক্সিমাম কুলিং পারফরমেন্স টেস্ট, কনডেনসেট কন্ট্রোল এবং এনক্লোজার সোয়্যাট পারফরমেন্স টেস্ট, হিটিং ক্যাপাসিটি টেস্ট, মিনিমান এন্ড ম্যাক্সিমাম হিটিং পারফরমেন্স টেস্ট, অটোমেটিক ডিফ্রস্ট পারফরমেন্স টেস্ট ইত্যাদি।
নুসডাট-ইউটিএস ল্যাবের ম্যানেজার প্রকৌশলী আল ইমরান বলেন দক্ষ, মেধাবী, অভিজ্ঞ প্রকৌশলী এবং বিশ্বের লেটেস্ট যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে গড়ে তোলা হয়েছে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন টেস্টিং ল্যাব। একটি টেস্টিং ল্যাবে আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুসারে পণ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য যেসকল সুযোগ-সুবিধা থাকা প্রয়োজন তার সবই রয়েছে এতে। ফলে খুব শিগগীরই আইলাক এবং এপলাক’র অন্তর্ভূক্ত সদস্য দেশগুলোর নিজস্ব মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থার কাছে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হবে নুসডাটের রিপোর্ট। তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে ফ্রিজ ও এসি টেস্টিং সনদ পেলেও শীঘ্রই টেলিভিশন এর টেস্টিং সনদ পাওয়া যাবে বলে তিনি আশাবাদি। ইমরান আরো বলেন, আন্তর্জাতিক মানের টেস্টিং ল্যাব হিসেবে বিএবির এর কাছ থেকে এই স্বীকৃতি বাংলাদেশে তৈরি ইলেকট্রনিক্স পণ্য রপ্তানিতে মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। তার মতে, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পণ্যমান যাচাই এবং রিপোর্ট প্রদানের মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব। শুধু তাই নয়, এর মাধ্যমে পণ্যমান যাচাইয়ে দেশীয় ইলেকট্রনিক্স পণ্যের উৎপাদনকারীদের ভোগান্তিও কমবে।
জানা গেছে, বিএবি এর স্বীকৃতির আওতায় গাজীপুরের চন্দ্রায় অবস্থিত এই ল্যাব থেকে দেয়া টেস্টিং রিপোর্ট ভারত, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত এর নিজস্ব মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থার কাছে সরাসরি গ্রহণযোগ্যতা পাবে। পরবর্তীতে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, চীন, ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা এবং ইউরোপের দেশগুলোর জন্য স্বীকৃতি পাওয়া যাবে। দেশবিদেশের যে কোনো প্রতিষ্ঠান নুসডাট ইউটিএস থেকে তাদের পণ্য মান যাচাই করতে পারবে।