ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সমুদ্রোপকূল ঘেঁষে দুদেশের পর্যটকরা যাতে ক্রুজ বা প্রমোদতরীতে ভ্রমণ করতে পারেন, তার জন্য দুদেশের মধ্যে সোমবার দিল্লিতে একটি সমঝোতাপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছে।
বিশ্বের বহু দেশেই ক্রুজ বা প্রমোদতরীতে ভ্রমণ জনপ্রিয়
দিল্লিতে সোমবার থেকে ভারত ও বাংলাদেশের জাহাজ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিবদের মধ্যে যে আলোচনা শুরু হয়েছে, তাতেই নৌপথে পর্যটকদের সফর করার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়।
এই ব্যবস্থা চালু হয়ে গেলে ভারতীয় পর্যটকরা সরাসরি চেন্নাই থেকে বাংলাদেশের সেন্ট মার্টিনস দ্বীপে প্রমোদ সফরে যেতে পারবেন, ঢাকার কাছে নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দর থেকে পর্যটকরা আসতে পারবেন ভারতের বিশাখাপতনমে।
ভারত ও বাংলাদেশ – এই দুই প্রতিবেশী একই বঙ্গোপসাগরের তটরেখায় অবস্থিত হলেও এতদিন দুদেশের মধ্যে কোনো জাহাজ চলাচল ছিল না বললেই চলে। যাত্রী পরিবহন তো নয়ই, দ্বিপাক্ষিক স্তরে নৌপথে সরাসরি পণ্য পরিবহনেরও কোনো পদ্ধতি এতদিন চালু ছিল না।
অথচ গত চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে সেই দুটো বাধাই প্রায় পর পর দূর হয়ে গেল – প্রথমে কোস্টাল শিপিংয়ের মাধ্যমে পণ্য পরিবহনের প্রোটোকলে স্বাক্ষর করলের দুই দেশের কর্মকর্তারা – তারপর এদিন দুদেশের মধ্যে যাত্রী বা পর্যটক পরিবহনের প্রস্তাবও তুমুল উৎসাহের সঙ্গে অনুমোদিত হয়ে গেল।
সোমবার সন্ধ্যায় এই সংক্রান্ত সমঝোতায় সই করলেন ভারতের নৌপরিবহন সচিব রাজীব কুমার ও বাংলাদেশে তার কাউন্টারপার্ট শফিক আলম মেহেদি।
বাংলাদেশে জাহাজ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রধান প্রকৌশলী ফখরুল ইসলাম বলছিলেন এর মাধ্যমে বহু বছরের পুরনো একটি সমুদ্রযাত্রার পথ আবার জিইয়ে তোলা হচ্ছে।
তিনি জানান, ‘বৃটিশ আমলে বা তারও আগে কিন্তু এই পথে জাহাজ চলাচল করত। এখন আবার আমরা সেটাই চালু করতে চাইছি। আজ যে সমঝোতাপত্র চূড়ান্ত হয়েছে, তার ভিত্তিতে দুই সরকার স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর চূড়ান্ত করবেন, যাতে বলা হবে কী পদ্ধতিতে এই জাহাজ-চলাচল হবে। এরপরই যাত্রী বা পর্যটক পরিবহন শুরু হবে বলে আমাদের আশা।’
থাইল্যান্ড বা সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়ার উপকূল ঘেঁষে প্রমোদতরণীতে ভ্রমণ বা ক্রুজ সফর খুব জনপ্রিয় হলেও তার খুব কাছে বঙ্গোপসাগরের ভারত-বাংলাদেশ এলাকায় সেই ক্রুজের কিন্তু কোনো চল নেই।
তবে ভারত ও বাংলাদেশ আশা করছে এই রুটে যাত্রীদের মধ্যে ভালো চাহিদা থাকবে, সড়ক বা রেলপথের ঝক্কিঝামেলা এড়িয়ে দুদেশের যাত্রীরাই সমুদ্রপথে প্রমোদভ্রমণে যেতে পছন্দ করবেন।
এই সব ক্রুজের জন্য বড় জাহাজপথে কোস্টাল রুট বা ছোট নৌযানে প্রোটোকল রুটে ভারতীয় যাত্রীদের হাতের নাগালে এসে যাবে সুন্দরবন বা সেন্ট মার্টিন্স, বলছিলেন ফখরুল ইসলাম।
এই যাত্রী পরিবহন শুরু হতে হতে অবশ্য আরও প্রায় বছরখানেক লেগে যাবে বলে দুদেশের কর্মকর্তাদের অনুমান। তবে তারও অনেক আগে শুরু হয়ে যাবে দুদেশের মধ্যে উপকূলপথে কার্গো বা পণ্য পরিবহন।
ভারতের পারাদ্বীপ বা চেন্নাই বন্দর থেকে বাংলাদেশের চট্ট্রগ্রামে এতদিন পণ্য আসত কলম্বো বা সিঙ্গাপুর বন্দর ঘুরে – কিন্তু বেশ কয়েক সপ্তাহের লম্বা সেই নৌযাত্রাই এখন কমে আসবে মাত্র কয়েকদিনে।
সোজা কথায়, পণ্য ও যাত্রী পরিবহন দুটো ক্ষেত্রেই ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সমুদ্রপথের এক নতুন দিগন্ত খুলে যাবে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই।-বিবিসি