ফ্রান্সে রাজধানী প্যারিস ভয়াবহ এ সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত ২৯ বছর বয়সী এক তরুণীকে শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটি। তার বাবা ও ভাইকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। ওই তরুণের বিরুদ্ধে এর আগেও অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল পুলিশের হাতে। তার জঙ্গিবাদে ঝোঁকার খবরও পাওয়া গিয়েছিল বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে জানা গেছে। সন্ত্রাসীরা ৩টি দলে বিভক্ত হয়ে প্যারিসে হামলা চালিয়েছিলো বলে নিশ্চিত করেছে ফ্রান্স।
দেশটির প্রধান আইন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বেলজিয়াম থেকে তিন ফরাসি নাগরিককে আটক করা হয়েছে। তিনি জানান, নিহত হামলাকারীদের মধ্যে ২৯ বছর বয়সী এক ফরাসি নাগরিককে চিহ্নিত করা হয়েছে। এদিকে দেশটির একজন পার্লামেন্ট মেম্বারের বরাত দিয়ে আজ রবিবার ফরাসি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, শনাক্ত হওয়া ওই ফরাসি নাগরিকের নাম ওমর ইসমাইল মোস্তেফা।
বিবিসিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাতাক্লাঁ কনসার্ট হলে হামলার পর যে ৩ হামলাকারী বোমা ফাটিয়ে নিজেদের উড়িয়ে দিয়েছিল, ওমর ইসমাইল তাদেরই একজন। ঘটনাস্থলে পাওয়া আঙুলের ছাঁপ মিলিয়ে তার পরিচয় জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। তিনি ২০১৪ সালে সিরিয়ায় গিয়েছিলেন কি-না তাও খতিয়ে দেখছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। এ হামলার সঙ্গে জড়িত অন্যদের ধরতে ফ্রান্সের পাশাপাশি বেলজিয়াম ও জার্মানিতেও ব্যাপক অভিযান চালানো হচ্ছে। প্যারিসের দক্ষিণে ওবা ও ইসন্নো এলাকায় শনাক্তকৃত হামলাকারীর আত্মীয়স্বজনের বাসায়ও তল্লাশি চালানো হয়েছে।
অপরদিকে তদন্ত দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জঙ্গিরা কীভাবে দেশে প্রবেশ করে এবং এই হামলার মদদদাতা কারা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ১২৯ এবং আহত হয়েছেন ৩৫২ জন। পক্ষন্তরে শুক্রবারের হামলার পরই ফ্রান্সে যেন থমকে গেছে সময়। গোটা প্যারিস পরিণত হয়েছে নিরাপত্তারক্ষীদের নগরীতে। জারি করা হয়েছে কারফিউ। রাত পেরিয়ে ভোর হতে না হতেই জরুরি বৈঠকে বসেন ফরাসি নেতারা। জানালেন হামলাকারীদের ধরতে চলছে জোর তৎপরতা।
ফ্রান্সের বিচারমন্ত্রী ক্রিস্টিন টোবিরা বলেন, আমাদের জন্য খুবই দুঃখের সময় এটি। কিন্তু ফরাসি নাগরিকরা এই সময় নিজেদের সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। সন্ত্রাসীদের ধরতে অভিযান চলছে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমাদের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।
ফ্রান্সের চিফ প্রসিকিউটর ফ্রাঁসোয়া মোলিন্স বলেন, আমরা শুধু সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করার চেষ্টাই করছি না, আমরা এই হামলার মদদ দেয় কারা বা হামলার জন্য অর্থায়ন আসে কিভাবে তা জানতেও তদন্ত করছি। এরই মধ্যে বেলজিয়ামে হামলায় জড়িত সন্দেহে তিন ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। প্যারিস হামলার পর বেলজিয়ামেও জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
প্যারিসের পাবলিক প্রসিকিউটর ফ্রাঁসোয়া মলিয়েঁ জানিয়েছিলেন, হামলাকারীরা তিনটি দলে ভাগ হয়ে ওই হামলা চালায়। তিনি বলেন, সাত জঙ্গির সবাই কালাশনিকভ রাইফেল ব্যবহার করেছেন এবং তাদের সবার একই ধরনের বিস্ফোরক ভর্তি বেল্ট ছিল। তদন্ত এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে জানিয়ে তিনি বলেন, তদন্তে দুটি গাড়ির ওপর বিশেষ নজর দিচ্ছে পুলিশ। সেগুলোর মধ্যে কালো রংয়ের একটি গাড়ি দুই জায়গায় ব্যবহার করে বন্দুকধারীরা। এই কালো গাড়িটি এখনও শনাক্ত করা যায়নি। অন্য গাড়িটি হামলার পর বাতাক্লাঁ কনসার্ট হল এলাকায় পাওয়া যায়। কালো ফক্সভাগেন পোলো গাড়িটিতে ছিল বেলজিয়ান নিবন্ধন প্লেট।
ফ্রান্সে প্রবেশের বিষয়ে মলিয়েঁ জানান, বেলজিয়ামে বসবাসরত এক ফরাসি গাড়িটি ভাড়া করেছিলেন। শুক্রবার সকালে অন্য দুজনকে নিয়ে বেলজিয়াম সীমান্ত পার হওয়ার সময় পুলিশের একটি চৌকিতে তার পরিচয় নথিবদ্ধ হয়েছিল। শুক্রবার সকালে সীমান্ত পার হওয়া ওই ফরাসি নাগরিক ওইদিন সন্ধ্যায় প্যারিসে ছিলেন। পরে বেলজিয়ামের পুলিশ ব্রাসেলসের কাছে ওই ফরাসি নাগরিকসহ তিনজনকে আটক করে।
অন্যদিকে আইএস জঙ্গিরা তাদের বিরুদ্ধে ইরাক এবং সিরিয়ায় অভিযান চালানোর প্রতিশোধ নিতেই বাতাক্লান হলে হামলা চালানোর কথা জানালেও ফরাসি প্রধানমন্ত্রী ম্যানুয়েল ভলস পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন জঙ্গি-দমনে তাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, এই হামলা আমাদের শক্তি দিবে জঙ্গিবাদ নির্মূলে। ভয় পেয়ে আইএস বিরোধী অভিযান বন্ধ করার প্রশ্নই উঠে না। জঙ্গিদের আমরা বলতে চাই তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করছি আমরা।
প্রসঙ্গত শুক্রবার বিকেলে প্যারিসের বাতাক্লান হলে কনসার্ট চলাকালে হামলা করে বন্দুকধারীরা। একই সময় আশপাশের বেশ কয়েকটি জায়গায় আত্মঘাতী বোমা হামলাও চালানো হয়। এতে নিহত হন বহু মানুষ। হামলার কিছুক্ষণ পরই দায় স্বীকার করে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস।