অর্থ সংকটে পাট কিনতে পারছে না দৌলতপুর জুট মিলস

অর্থ সংকটে পাট কিনতে পারছে না দৌলতপুর জুট মিলস

খুলনার দৌলতপুর জুট মিলস নতুন করে চালুর এক বছর পর থেকেই লোকসানে পড়েছে। অর্থ 15সংকটের পাশাপাশি পর্যাপ্ত কাঁচা পাট মজুদ না থাকায় এবং জনবল সংকটের কারণে ব্যাহত হচ্ছে মিলের উৎপাদন। এছাড়া আড়াই বছরেও শ্রমিক-কর্মচারীদের চাকরি স্থায়ীকরণ হয়নি। নেই আবাসন সুবিধা। ফলে অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের মতো তারা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে দাবি শ্রমিকদের।
মিল সূত্র জানায়, ১৯৭২ সাল থেকে বিজেএমসির আওতায় থাকা দৌলতপুর জুট মিলস লোকসানের অজুহাতে ২০০২ সালে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ২০১১ সালের ১০ অক্টোবর এটি পুনরায় চালুর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ২০১৩ সালের ২৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুলনা সার্কিট হাউজ ময়দানের জনসভায় দৌলতপুর জুট মিলসের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। চালুর পর পাটকলটি একসময় লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপ নেয়। ২০১৪ সালে ফের লোকসানে পড়ে এটি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দৌলতপুর জুট মিলস প্রতিষ্ঠাকালে তাঁতের সংখ্যা ছিল ২৫০টি। বর্তমানে ১৮৫টি তাঁতের মধ্যে ৭৭ থেকে ৭৯টি চালু রয়েছে। মিলে ৯৩৪ জন নিবন্ধিত শ্রমিকের মধ্যে বর্তমানে প্রায় ৬০০ জন কর্মরত। তাদের দৈনিক হাজিরা ভিত্তিতে কাজ করানো হচ্ছে। প্রতি সপ্তাহে শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধ করতে হয় প্রায় সোয়া ১২ লাখ টাকা। বর্তমানে শ্রমিকদের এক সপ্তাহের মজুরি বকেয়া রয়েছে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, মিলটিতে কর্মচারী ও কর্মকর্তা পর্যায়েও জনবল সংকট রয়েছে। ১৮২ জন কর্মচারীর মধ্যে ৮৫ এবং ৫৮ জন কর্মকর্তার মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ২৪ জন। প্রতি মাসে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মজুরি পরিশোধ করতে হয় প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ টাকা।
এদিকে অর্থ সংকটের কারণে মিল কর্তৃপক্ষ পর্যাপ্ত কাঁচা পাট কিনতে পারছে না। বিজেএমসি চলতি অর্থবছরের অক্টোবর পর্যন্ত মিল কর্তৃপক্ষকে পাট কেনার জন্য ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা দিয়েছে। এ অর্থবছরে মিলটির পাট ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ১৮ হাজার ৩৩৮ কুইন্টাল। অক্টোবর পর্যন্ত কেনা হয়েছে মাত্র ৮ হাজার ৪৭৮ কুইন্টাল।
অন্যদিকে মিলের উৎপাদিত পণ্যের বিক্রয়মূল্য কমে গেছে। উৎপাদিত পণ্যের রফতানিও কমেছে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে এ মিল থেকে রফতানি হয় ৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা মূল্যের ৬৭১ দশমিক ৭০ টন পাটজাত পণ্য। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে মিলটি থেকে ২ কোটি ৭৩ লাখ ১৭ হাজার টাকা মূল্যের ৩২০ দশমিক ৭৬ টন এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১ কোটি ৭০ লাখ ২০ হাজার টাকা মূল্যের ২২৪ দশমিক ৭৫ টন পাটজাত পণ্য রফতানি হয়।
মিলের একাধিক শ্রমিক বলেন, মিল থেকে যে মজুরি পাওয়া যায়, তা দিয়ে সংসারের খরচ মেটানো সম্ভব হয় না। আবাসন বরাদ্দ না থাকায় শ্রমিক-কর্মচারীরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এছাড়া কোনো শ্রমিক গুরুতর আহত হলে তাদের নিজস্ব অর্থায়নেই চিকিৎসা নিতে হয়। মিলের শ্রমিক নেতা মো. মতিয়ার রহমান ও মো. বেলাল হোসেনের দাবি, আবাসন থাকা সত্ত্বেও শ্রমিকরা এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
মিলের প্রকল্পপ্রধান তোফায়েল আহমেদ জানান, মিলটি পুনরায় চালুর পর এক বছর লাভে ছিল। তবে বিশ্ববাজারে মন্দা, পাট ও পাটজাত পণ্যের দাম কমে যাওয়া, আর্থিক সংকট ও পাটের অভাবে মিলটি বর্তমানে লোকসানে রয়েছে।
তিনি বলেন, পাট ক্রয়ে অর্থায়ন প্রয়োজন। আর মিলের শ্রমিক স্থায়ীকরণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বিজেএমসি।

Featured অর্থ বাণিজ্য