একতরফা ওয়ানডে সিরিজের পরও টুইটম্বুর শের-ই-বাংলার গ্যালারি। ছুটির দিনে টি-২০’র বিনোদন পেতে হাজির ক্রিকেট রোমান্টিকরা। অনেক উথাল-পাতাল ঢেউয়ের দেখা মিললেও শেষ পর্যন্ত অনায়সেই জয়ের তরী বন্দরে ভিড়িয়েছে বাংলাদেশ। যা উদযাপনে গ্যালারিতে মোবাইলের ক্যামেরার ফ্ল্যাশ চালু করে আলোর নাচন দেখিয়েছেন দর্শকরা। প্রাণ আপ সিরিজের প্রথম টি-২০ ম্যাচে শুক্রবার জিম্বাবুয়েকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এই জয়ে সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেল টাইগাররা।
প্রথম ব্যাট করে ১৯.৩ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ১৩১ রান করে জিম্বাবুয়ে। জবাবে ১৭.৪ ওভারে ৬ উইকেটে ১৩৬ রান তুলে ম্যাচ জিতে নেয় মাশরাফির দল। জিম্বাবুয়ের ম্যালকম ওয়ালার ম্যাচ সেরা হন।
১৩২ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ইনিংসের ষষ্ঠ বলেই এনামুল হক বিজয়ের (১) অনাকাঙ্খিত রানআউটে শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। দ্বিতীয় উইকেটে তামিম-সাব্বিরের জুটি ৩৯ রান যোগ করে। দলীয় ৪৫ রানে সাব্বির উইকেট বিলিয়ে দিয়ে ফিরেন। তিনি ১৮ রান করেন। মিডল অর্ডারে দলের বড় ভরসা মুশফিক উইকেটে থিতু হতে পারেননি। পুল করতে গিয়ে শর্ট কভারে ক্যাচ দেন মুশফিক (২)।
নিয়মিত উইকেট হারালেও সঠিক কক্ষপথেই ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ১১তম ওভারে নাসির ও তামিমকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে বিপদে ফেলে দেন জিম্বাবুয়ের লেগ স্পিনার গ্রায়েম ক্রেমার। ওভারের দ্বিতীয় ও পঞ্চম বলে দুজনই এলবির ফাঁদে পড়েন। নাসির ১৬, তামিম ২৮ বলে ৩১ রান করেন।
৮০ রানে ৫ উইকেট হারানো স্বাগতিকদের পথ দেখায় মাহমুদউল্লাহ ও লিটনের ষষ্ঠ উইকেট জুটি। দলকে বিপদমুক্ত করার পাশাপাশি রান-বলের সমীকরণকে পুঁজি করেই চলনসই ব্যাটিংটা করেছেন তারা। ৩৮ রান আসে তাদের জুটিতে। দলকে জয় থেকে ১৪ রান দূরে রেখে ক্রেমারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন লিটন। তিনি ১৭ রান করেন। পরে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিয়েই মাঠ ছাড়েন মাহমুদউল্লাহ ও মাশরাফি।
জংউইয়ের বলে ছক্কা মেরে দলের জয় নিশ্চিত করেন মাশরাফি। মাহমুদউল্লাহ ২১ বলে অপরাজিত ২২ ও মাশরাফি ১২ বলে অপরাজিত ১৫ রান করেন। জিম্বাবুয়ের ক্রেমার ৩টি, চিসোরো ২টি করে উইকেট নেন।
এর আগে টসে হেরে ব্যাট করতে নামা জিম্বাবুয়ের গোটা ইনিংসটা আবর্তিত হয়েছে বাংলাদেশের দাপুটে বোলিং ঘিরেই। বরাবরের ন্যায় এক জিম্বাবুইয়ান প্রতিরোধ গড়েছেন। শুক্রবার কাজটা করেছেন ম্যালকম ওয়ালার একাই। টি-২০ বলে তার ব্যাটিং ছিল ধ্বংসযজ্ঞসম। তার ক্যারিয়ার সেরা ব্যাটিংয়ে লড়াইয়ের পুঁজি পায় জিম্বাবুয়ে। ধুন্ধুমার ব্যাটিংয়ে তিনি ২০ বলেই করেন ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি। চিগুম্বুরা-শন উইলিয়ামসকে ছাড়িয়ে (২১ বলে) যা টি-২০ তে জিম্বাবুয়ের পক্ষে দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরির মর্যাদা পায়। ১৮তম ওভারে ওয়ালারের বেপরোয়া ব্যাটিংটা থামিয়েছেন মুস্তাফিজ। ডিপ মিড উইকেটে লিটনের হাতে ক্যাচ দেয়ার আগে ৩১ বলে ৬৮ রানের (৪ চার, ৬ ছয়) ইনিংস খেলেন তিনি।
তবে শুরুতে মাশরাফিদের বোলিং তোপে দিক হারাতে বসেছিল জিম্বাবুয়ে। ১০ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বসে দলটি। অনেকদিন পর নতুন বলে ইনিংসের প্রথম ওভার করতে এসে পঞ্চম বলেই সিকান্দার রাজাকে (৪) ফেরান মাশরাফি। পরের ওভারে চাকাভা (০) আল-আমিনের শিকার হন। তৃতীয় ওভারে চিগুম্বুরার (০) মিডল স্ট্যাম্প উপড়ে ফেলেন মাশরাফি। শন উইলিয়ামস ও ক্রেইগ আরভিনের ২৮ রানের জুটিতে বিপর্যয় এড়ায় জিম্বাবুয়ে। নাসিরের বলে উইলিয়ামস (১৫) বোল্ড হলে ভাঙে সেই জুটি।
ইনিংসের দশম ওভার থেকেই স্রোতের বিপরীতে শুরু হয় ওয়ালারের ব্যাটিং তান্ডব। অভিষিক্ত জুবায়েরের প্রথম ওভারেই ওয়ালার তোলেন ১৭ রান। নাসিরের করা ১১তম ওভারে আসে ২০ রান। ওয়ালারের আকস্মিক আক্রমণের ফসল হিসেবে পরিবেশটা পাল্টে দেয় জিম্বাবুয়ে। ওয়ালার-আরভিনের ৬৭ রানের জুটি বিচ্ছিন্ন করেন মাহমুদউল্লাহ। আরভিন ২০ রান করে বোল্ড হন। নিজের দ্বিতীয় ওভারে জুবায়ের জংউই, মাজিবাকে ফেরান। আল-আমিন, মুস্তাফিজ মুড়ে দেন ব্যাটিংয়ের লেজটা। বাংলাদেশের মাশরাফি, আল-আমিন, মুস্তাফিজ, জুবায়ের ২টি করে উইকেট নেন।