সরকার গঠন করছেন সু কি

সরকার গঠন করছেন সু কি

ঐতিহাসিক নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে শিগগিরই মিয়ানমারে সরকার গঠন করতে 6চলেছে অং সান সু কি’র দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি)। আজ শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত মিয়ানমারের ইউনিয়ন নির্বাচন কমিশন ৮০ শতাংশের বেশি আসনের আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা করেছে। আর উচ্চ ও নিম্নকক্ষ মিলিয়ে সু কি’র দল এনএলডি ৮৫ শতাংশ আসন পেয়েছে। এখনও কিছু আসনের ফল ঘোষণা বাকি। তবে এর মধ্যেই পার্লামেন্টের ৩৪৮টি আসনে জয়ী হয়ে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে ছাপিয়ে গিয়েছে এনএলডি। মিয়ানমারের পার্লামেন্টের নিম্ন কক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের ৪৪০ আসনের মধ্যে ৩৩০টিতে গত ৮ নভেম্বর ভোট হয়। আর উচ্চ কক্ষ জাতীয় পরিষদের ২২৪টি আসনের মধ্যে ভোট হয় ১৬৮টিতে। ২ কক্ষেই বাকি ২৫ শতাংশ আসন সেনাবাহিনীর জন্য সংরক্ষিত।
মিয়ানমার টাইমসের প্রতিবেদনে জানানো হয়, এ পর্যন্ত ঘোষিত ফলাফলে প্রতিনিধি পরিষদে এনএলডি পেয়েছে ২৩৮ আসন। আর জাতীয় পরিষদে দলটি ১১০টি আসন জিতে নিয়েছে। আর সেনা সমর্থনে ২০১০ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা ইউনিয়ন সলিডারিটি ও ডেভেলপমেন্ট পার্টি (ইউএসডিপি) প্রতিনিধি পরিষদে ২৮টি এবং জাতীয় পরিষদে ১২টি আসন পেয়েছে। পত্রিকাটি লিখেছে, সেনাবাহিনীর জন্য ২৫ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকার বিষয়টি হিসেবে নিলেও পার্লামেন্টের দুই কক্ষে ইতোমধ্যে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে গেছে এনএলডি।
মিয়ানমারে ২৫ বছর পর সব দলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এই সাধারণ নির্বাচনে মোট ৯২টি দল অংশ নেয়। এনএলডি ও ইউএসডিপির বাইরে বিভিন্ন দল মিলিয়ে প্রতিনিধি পরিষদে ৩১টি এবং জাতীয় পরিষদে ১০টি আসন পেয়েছে। সাড়ে ৫ দশকের বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা সেনাবাহিনী ২০০৮ সালে সংবিধান সংশোধন করে এমন সব বিধান চালু করে যেগুলোকে শুরু থেকেই অগণতান্ত্রিক বলে আসছেন এনএলডির নেতারা।
মিয়ানমারের সংবিধানে প্রেসিডেন্টই সর্বময় ক্ষমতার উৎস। কিন্তু তাকেও সেনাবাহিনীর পরামর্শ নিয়ে কাজ করতে হয়। পার্লামেন্টে পাস করা যে কোনো আইনে ভেটো দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে সেনা বাহিনীর। সু কি যাতে মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হতে না পারেন, সামরিক সরকার সংবিধানেই তার ব্যবস্থা করে রেখেছে। সংবিধানের ৫৯ (এফ) ধারায় বলা হয়েছে, যদি কেউ কোনো বিদেশি নাগরিককে বিয়ে করেন এবং তার সন্তানরা অন্য দেশের নাগরিক হয়ে থাকেন, তাহলে তিনি প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না।
সু কি’র ২ সন্তানেরই জন্ম ব্রিটেনে। তাই মিয়ানমারের সংবিধান অনুযায়ী তিনি দেশের প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না। তবে এনএলডি ঘোষণা করেছে, সামরিক সরকারের তৈরি সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট হতে না পারলেও প্রেসিডেন্টের উপরই থাকবেন দলনেত্রী। আপাতত প্রেসিডেন্ট পদে এনএলডি’র অন্য কোনও গুরুত্বপূর্ণ নেতাকেই বসাবেন সু কি। কিন্তু সরকারের চাবিকাঠি যে সু কি’র হাতেই থাকছে, তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই।
নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ায় এনএলডি এখন সংবিধান সংশোধনের সুযোগ পাবে, সেক্ষেত্রে সুচির সামনে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথও উন্মুক্ত করা সম্ভব হবে। খুব শিগগিরই মিয়ানমারের সংবিধান সংশোধন করে সু কি’র প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথ সুগম করা হবে বলে জানানো হয়েছে এনএলডি’র পক্ষ থেকে।
সু কি নিজে বলেছেন, সাংবিধান সংশোধনের জন্য এনএলডি’র অন্য কারও সমর্থনের প্রয়োজন নেই। কারণ দল দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে গেছে। তবে নির্বাচনে জয়ীরা যাতে কোনোভাবে পরাজিতদের ভাবাবেগে আঘাত না করেন, সে বিষযে মিয়ানমারবাসীকে সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি। এনএলডি যে বড় জয় পেতে যাচ্ছে, তা আগেই অনুমান করা গেলেও সংবিধান সংশোধনের সুযোগ পাওয়ার আশা ভোটের আগে সু কিও করেননি। শান্তিতে নোবেলজয়ী এই নেত্রী বলেছিলেন দল জিতলে ‘প্রেসিডেন্টের চেয়েও বড়’ হবেন তিনি।
আন্তর্জাতিক মহলের চাপে অবশেষে মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট থান শোয়ের নেতৃত্বাধীন সামরিক সরকার অবাধ সাধারণ নির্বাচনের পথে হাঁটতে বাধ্য হয়। তবে নির্বাচনের ফল বিপক্ষে গেলে সামরিক সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর করবে কি না, তা নিয়ে সংশয় ছিলই। কিন্তু, সু কি’র দল এমন অবিশ্বাস্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে যে আর ক্ষমতা হস্তান্তর না করে উপায় নেই। নির্বাচনের ফল বিপক্ষে যাচ্ছে বুঝতে পেরে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং শাসক দল বৃহস্পতিবারই সু কি’কে অভিনন্দন জানিয়েছে।

Featured আন্তর্জাতিক