মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ৩৫তম মৃত্যুবার্ষিকী বৃহস্পতিবার। এদিন বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করবে।
মাওলানা ভাসানীর ৩৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়া ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পৃথক বাণী দিয়েছেন।
বাণীতে তারা বলেছেন, দেশের নীপিড়িত ও নির্যাতিত মানুষের মুক্তির জন্য সারা জীবন আন্দোলন, সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ভাসানী। সামন্তবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন প্রতিবাদী কণ্ঠ। বাঙালি জাতিসত্ত্বা বিকাশের আন্দোলনে তার অবদান স্মরণীয়। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও তিনি প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছেন।
মহান এ নেতা ১৮৮০ সালে সিরাজগঞ্জ জেলার ধানগড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জীবনের শুরুতে মক্তবে শিক্ষা গ্রহণ ও মক্তবেই কিছুকাল শিক্ষকতা করেন। ১৯০৩ সালে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়।
১৯১৯ সালে কংগ্রেসে যোগ দিয়ে খেলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনে অংশ নেন এবং এ সময় ১০ মাস কারা ভোগ করেন। ১৯২৯ সালে আসামের ধুবড়ি জেলার ব্রহ্মপুত্র নদের ভাসানচরে প্রথম কৃষক সম্মেলন করেন। এরপর তার নামের সঙ্গে ভাসানী শব্দ যুক্ত হয়। ১৯৩১ সালে টাঙ্গাইলের সন্তোষের কাগমারীতে, ১৯৩২ সালে সিরাজগঞ্জের কাওরাখোলায় এবং ১৯৩৩ সালে গাইবান্ধায় বিশাল কৃষক সম্মেলন করেন তিনি।
বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলার উদ্দেশে ১৯৫২ সালের ৩০ জানুয়ারি ঢাকা জেলা বার লাইব্রেরি হলে তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদ গঠিত হয় এবং তিনি এর অন্যতম সদস্য নিযুক্ত হন।
১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে পুনরায় গ্রেপ্তার হন ভাসানী। ১৯৫৬ সালে বাংলার খাদ্যজনিত দুর্ভিক্ষ রোধকল্পে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ৫০ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষে ঢাকায় অনশন করেন তিনি।
১৯৫৭ সালে সামরিক আইন জারি করে জেনারেল আইয়ুব খান ক্ষমতায় আসীন হন। মওলানা ভাসানী ১৯৬৯ সালে আইয়ুব বিরোধী গণ আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন।
ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা কর্মসূচির প্রতি দৃঢ় সমর্থন দেন তিনি। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার এবং শেখ মুজিবুর রহমানসহ এ মামলার সকল আসামির নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন তিনি।
১৯৭০ সালের নভেম্বরে উপকূলীয় এলাকায় প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় হলে দুর্গত এলাকায় ত্রাণ কাজে অংশগ্রহণ করেন ভাসানী। ১৯৭০ সালের ৪ ডিসেম্বর ঢাকার পল্টন ময়দানে এক জনসভায় ভাষণ দিয়ে স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তানের দাবি উত্থাপন করেন ভাসানী। এছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পরিচালিত ১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলনের প্রতি সমর্থন দেন।
১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হন ভাসানি। এ সময় তিনি ভারতে ছিলেন। ১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন এবং একই বছর ২৫ ফেব্রুয়ারি সাপ্তাহিক হক কথা পত্রিকা প্রকাশ করেন। মুজিব সরকারের ব্যাংক বীমা ও শিল্প প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ নীতি ও ১৯৭২ সালে সংবিধানের প্রতি সমর্থন প্রদান করেন।
১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর মারা যান ভাসানী।
মওলানা ভাসানী দীর্ঘ কর্মময় জীবনের অধিকাংশ সময়ই টাঙ্গাইলের সন্তোষে কাটিয়েছেন। এখানে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। এই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ৯টি কারিগরী ও সামাজিক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন তিনি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে টাঙ্গাইলের সন্তোষে মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়।
বিভিন্ন কর্মসূচি:
মৃত্যুবার্ষিকীর দিন বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।
এছাড়া শহীদ আসাদ পরিষদ ও বাংলাদেশ গরীব মুক্তি আন্দোলনের যৌথ উদ্যোগে সকাল সাড়ে ৭টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে জমায়েত ও প্রভাত ফেরি অনুষ্ঠিত হবে। পরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মওলানা ভাসানীর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হবে।
বিকেল তিনটায় স্বোপার্জিত স্বাধীনতা মঞ্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ’৬৯ এর গণ-অভ্যুথান, জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ ও মওলানা ভাসানী’ শীর্ষক আলোচনা সভা এবং কবিতা পাঠের আয়োজন করা হয়েছে। আলোচনায় অংশ নেবেন ফজলে হোসেন বাদশা এমপি, অধ্যাপক মেজবাহ কামাল প্রমুখ।
দিবসটি উপলক্ষে গত রোববার ১৩ নভেম্বর থেকে টাঙ্গাইলে পাঁচ দিন ব্যাপী শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতি, কৃষি বিষয়ক মেলা আয়োজন করা হয়েছে।