আমি আনি পুরস্কার, খালেদা আনেন তিরস্কার: প্রধানমন্ত্রী

আমি আনি পুরস্কার, খালেদা আনেন তিরস্কার: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমি আন্তর্জাতিকভাবে দেশের জন্য নিয়ে আসি পুরস্কার, আর বিরোধীদলের নেতা খালেদা জিয়া আনেন তিরস্কার।’

বুধবার বিকেলে বরিশালের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে আয়োজিত ১৪ দলের জনসভায় দেওয়া প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।

এ সময় ‘বিএনপি জনগণের জন্য নয়, নিজেদের বেতন-ভাতা রক্ষার্থে সংসদে এসেছে’ বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

বিরোধী দলকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘বেতন খাবেন, কিন্তু সংসদে বসবেন না। রাস্তাঘাটে গালি দিয়ে বেড়াবেন আর আন্দোলনের হুমকি দেবেন- এটা মেনে নেওয়া হবে না।’

‘বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া যাবে না’ বলেও বিরোধী দলকে হুঁশিয়ার করেন তিনি।

বিরোধী দলকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘লুটপাট করে খেতে পারছে না, বোমা মেরে মানুষ হত্যা করতে পারছে না বলেই তাদের এই অন্তর্জালা।

‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ শুরু হতে দেখে বিএনপির রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে’ মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে এখন বিএনপি উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তারা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে। কিন্তু বাংলার জনগণ তা মেনে নেবে না।’

জোট সরকারের নির্যাতনে কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্নীতি, লুটপাট ও অর্থ পাচার করে নিজেরা আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ বনেছে। দেশের জনগণকে বঞ্চিত করে নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন করেছে। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হতে পারেনি। ২০০১ সালে নির্বাচনের পর বরিশাল বিভাগে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার যে হত্যা-নির্যাতন চালিয়েছে তা নজিরবিহীন। এর কারণে ২৫ হাজার নারী-শিশু ও পুরুষ পালিয়ে পার্শ্ববর্তী গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া গিয়ে অবস্থান নিয়েছে।’

নির্যাতিতদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ২০০৪ সালের ২ এপ্রিল বরিশালে এলে তিনি নিজেও গৌরনদীতে হামলার শিকার হন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানান, হামলা হয়েছে বর্তমান স্পিকারের উপরও।

নির্যাতিতদের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে তাওহীদ সৌরভ, সাইদ মেনন, কাজী শামিম ও শওকত মিল্টনসহ ১৬ সাংবাদিক হামলার শিকার হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘বিএনপির সন্ত্রাসীরা বরিশালের মানুষের আড়াই হাজার কোটি টাকার সম্পদ লুটপাট করেছে। দখল করেছে আড়াইশ’ একর খাস জমি।

যারা বর্তমান সরকারের কর্মকাণ্ড নিয়ে সমালোচনা করে তাদের উদ্দেশ্যে করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০১ সালে জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর তারা তিন বছরে কি করেছে ও বর্তমান সরকার তিন বছরে কি কাজ করেছে তা মিলিয়ে দেখুন।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের কথা জানিয়ে বলেন, ‘১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আমরা দেশে সাক্ষরতার হার বাড়িয়েছি। কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায় এসে তা কমিয়েছে।’

এর কারণ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়া তার দুই সন্তানকে মানুষ করতে পারেননি। একজনকে মানিলংন্ডার, আরেক জনকে দুর্নীতিবাজ হিসেবে তৈরি করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ হত্যা-সন্ত্রাসে বিশ্বাস করে না। গণতন্ত্রে বিশ্বাস রেখেই আওয়ামী লীগ চলে। আর তাই গণতন্ত্র কিভাবে রক্ষা করা যায় আওয়ামী লীগ তা জানে। বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে শান্তির দেশে পরিণত করেছে।’

তিনি বলেন, ‘দেশের অর্থনীতির দ্রুত বিকাশ ঘটছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রফতানি সবই বাড়ছে। আর্থ-সামাজিক প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। মানুষের আয় বাড়ছে। ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘দক্ষিণাঞ্চল সব সময় অবহেলিত থাকে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে এ এলাকার উন্নয়ন হয়। এ অঞ্চলের যত উন্নয়নের কাজ হয়েছে, তা আ’লীগ সরকারের আমলে হয়েছে।’

দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা ভোট দিয়ে আমাদের প্রতি যে সন্মান দেখিয়েছেন আমারা তার প্রতিদান দেব। এ অঞ্চল অবহেলিত থাকবে না। পুরো দক্ষিণাঞ্চলকে উন্নয়নের মাধ্যমে বিশ্বের কাছে তুলে ধরা হবে। শস্যভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত বরিশালকে আবারো খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা হবে।’

‘বরিশালের প্রত্যেকটি নদীর উপর সেতু নির্মাণ করা হবে’ বলেও জনসভায় ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার পিতা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এদেশের মানুষকে নিজের চেয়ে বেশি ভালোবাসতেন। তিনি এদেশের মানুষের অধিকার আদায়ে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত রাজনীতি করেছেন। আমার কোন চাওয়া পাওয়া নেই। আমি পিতার আদর্শ হৃদয়ে ধারণ করে এদেশের মানুষের উন্নয়নে রাজনীতি করছি। প্রয়োজন হলে পিতার মত বুকের রক্ত দিয়ে বাংলার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করব।’

এ সময় ভোলার গ্যাস বরিশালে এনে অন্ধকার দূর করার অঙ্গীকার করেন প্রধানমন্ত্রী।

জনসভায় সভাপতিত্ব করেন মহানগর আওয়ামী লীগের আহবায়ক ও সিটি মেয়র শওকত হোসেন হিরন।

’৭৫ এর নির্মম হত্যাকাণ্ডের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘আমার মা-বাবা ও ভাইসহ পরিবারের ১৮ সদস্যকে নৃশংশভাবে হত্যা করেছে চিহ্নিত ঘাতকরা। বাংলার মানুষের ভাগ্যে নিয়ে খেলেছে। এদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক কষ্ট করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার করেছি। তেমনিভাবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মধ্য দিয়ে এই বাংলার মাটিকে কলংকমুক্ত করব। স্বাধীনতার সুফল পৌঁছে দেব সকলের ঘরে ঘরে।

২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে দরিদ্রমুক্ত দেশ হিসেবে বিশ্বের কাছে তুলে ধরার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আমলে এদেশের মানুষ খাদ্যে কষ্ট পাবে না। কৃষকদের সহায়তা জন্য সর্বদা এ সরকার পাশে থাকবে। মহাজোটের টাকায় তাদের ফসল উৎপাদন করতে হবে না। তারা নিজেরাই স্বাবলম্বী হবে।’

তিনি বলেন, ‘সকলকে শিক্ষিত করে তোলার জন্য প্রত্যেক অঞ্চলে স্কুল করে দেওয়া হবে। বিনা পয়সায় দরিদ্র পিতা-মাতা তাদের সন্তানকে ডিগ্রি পর্যন্ত যাতে পড়াশুনা করাতে পারে সে ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।’

যুবকরা যেন বেকার না থাকে সে দিকে লক্ষ্য রাখার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৫০ হাজার মানুষকে গত ৩ বছরে আমরা চাকরি দিয়েছি। একটি মানুষও যেন ভাত না খেয়ে না থাকে আমরা সেদিকে লক্ষ্য রাখছি।’

এছাড়া স্বাস্থসেবা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের আহবায়ক ও সিটি মেয়র শওকত হোসেন হিরনের সভাপতিত্বে জনসভায় আরো বক্তব্য রাখেন- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবীর নানক, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসাদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু এমপি, তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ প্রমুখ।

বাংলাদেশ রাজনীতি