ভয় দেখাচ্ছে বটে, কিন্তু এরা কতদিন

ভয় দেখাচ্ছে বটে, কিন্তু এরা কতদিন

সোমবার বিকেলের দিকে আমার ফোনে মেসেজটা এসেছিল৷ স্পষ্ট ইংরেজিতে লেখা, ‘এই অসভ্য ব্লগারগুলোকে আপনি সমর্থন করেন কেন? চাপাতির ঘায়ে মরতে চান?’ মেসেজটা পাওয়ার পরই আমি গুলশন থানায় একটা জেনারেল ডায়েরি করি৷ আজ (মঙ্গলবার) সকালে থানা থেকে পুলিশ এসে আমার বাড়িতে পাহারার ব্যবস্থা করে গিয়েছে৷ তবে আজ তো প্রায় সারা দিনই আমি বাড়ির বাইরে কাটালাম৷ আমার সঙ্গে পুলিশের কোনও লোক ছিল না৷image_142264_0

পুলিশের বক্তব্য, আমাকে নিজের সুরক্ষার জন্য ওদের কাছে লোক চাইতে হবে৷ সেটা করব কি না, এখনও ভেবে দেখিনি৷ তবে নিজের দেশে, নিজের বাড়িতে এ ভাবে পাহারাওয়ালা সঙ্গে নিয়ে ঘোরাফেরা করা খুবই অস্বস্তির৷

আমাদের দেশ এবং প্রতিবেশী ভারতে এমন একটা পরিবেশ তৈরি হয়েছে যাতে চরমপন্থী শক্তি এবং দক্ষিণপন্থী শক্তিগুলো ক্রমেই মাথা চাড়া দিচ্ছে৷ এই ধরনের বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিগুলো সংখ্যায় হয়তো বেশি নয়, কিন্ত্ত তাদের শক্তি অনেক৷ সবচেয়ে দুশ্চিন্তার কথা এরা অনেকেই প্রশিক্ষিত অস্ত্রধারী৷ এরা মানুষকে ভয় দেখিয়ে, খুন করে নিজেদের কর্তৃত্ব কায়েম করতে চায়৷ এই উপমহাদেশে যে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে সে তো আমরা দেখতেই পাচ্ছি৷ এই ধরনের উগ্র মানসিকতার মানুষগুলি সেই অসহিষ্ণুতাকেই প্রতিষ্ঠা করতে চায়৷

ভারতের পরিস্থিতিও উদ্বেগ বাড়ায়৷ কারণ এই উপমহাদেশে ভারতবর্ষই একমাত্র দেশ যারা বরাবর বহুত্ববাদ ও পরমত সহিষ্ণুতাকে বহন করে এসেছে৷ সেখানে শুধুমাত্র খাদ্যাভ্যাসকে কেন্দ্র করে যে ভাবে রাজনীতি শুরু হয়েছে তাতে সেই বহুত্ববাদের ভাবনাই বিপর্যস্ত হতে পারে৷ তবে এই দুটো দেশকেই আমি গভীর ভাবে চিনি৷ তাই আমার বিশ্বাস এটি বিক্ষিন্ত অধ্যায়৷ দুই দেশেরই অধিকাংশ মানুষ বহুত্ববাদ ও সহিষ্ণুতায় বিশ্বাসী৷ তাই এই বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিরা সাময়িক কিছু সাফল্য পেলেও তা কখনও চিরস্থায়ী হবে না৷ তবে তার জন্য এগিয়ে আসতে হবে মানুষকেই৷ নাগরিক সমাজকে আরও সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ হয়ে এদের মোকাবিলা করতে হবে৷

তবে এই সমস্ত উপদ্রব এত বেড়ে ওঠার জন্য সরকারের ব্যর্থতাও কম নয়৷ যদিও বাংলাদেশ সরকার এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধ করার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে৷ কিন্ত্ত এখনও পর্যন্ত বিশেষ কোনও সাফল্য আসেনি৷ সরকারের ছোটখাটো এক-আধটি সাফল্য তার বিরাট ব্যর্থতাকে চাপা দিতে পারে না৷ বাংলাদেশে এই সমস্যা আরও বেড়েছে অন্য একটা কারণে৷ বেশ কিছু দিন ধরেই মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীদের বিচার চলছে৷ সেই বিচারের বিরোধীরাও এদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে৷ এদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে জামাতের লোকজন৷

সম্প্রতি বাংলাদেশে কয়েকজন বিদেশিকে খুনের দায় নিয়েছে আইএস৷ সরকার অবশ্য আমার দেশে আইএস-এর অস্তিত্ব স্বীকার করেনি৷ আমিও মনে করি না সত্যিই এখানে এতটা শক্তি বাড়িয়েছে আইএস৷ অনেক সময় স্থানীয় সন্ত্রাসবাদীরাই নিজেদের বড় কোনও জঙ্গি নেটওয়ার্কের সদস্য বলে জাহির করতে এই সমস্ত কথা বলে থাকে৷

তবে তাতে আশঙ্কা কমে না৷ স্বাধীন চিন্তার লেখক, বুদ্ধিজীবীরা সব সময়ই সফ্ট টার্গেট৷ ফলে এই ধরনের হুমকি তাদের দিকেই প্রথম আসে৷

Featured বাংলাদেশ শীর্ষ খবর