প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমান সরকার দেশের আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী পুলিশ বাহিনীকে আধুনিকায়ন করাসহ এ বাহিনীতে আরো ৫০ হাজার জনবল বৃদ্ধির পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। আজ বুধবার প্রধানমন্ত্রী তার জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের সদস্য গোলাম মোস্তফা বিশ্বাসের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ওই পরিকল্পনার আওতায় পুলিশ বিভাগের সকল ইউনিটসহ জেলা পুলিশের আওতাধীন ইউনিটসমূহের জনবল বৃদ্ধির কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ইতোমধ্যে ডিএমপি, সিএমপি, বিএমপি, এসবি, সিআইডি, রেলওয়ে, হাইওয়ে, ৯টি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, ৭টি রেঞ্জ অফিস, ৮ম এপিবিএন এবং মাদারীপুর জেলা পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে জনবল বৃদ্ধি করা হয়েছে। তিনি বলেন, কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানাকে বিভক্ত করে ‘বাঙ্গরাবাজার’ নামে নতুন থানা প্রতিষ্ঠা এবং পুলিশ বাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামোতে ২টি অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক (গ্রেড-২) পদ সৃজনের মঞ্জুরি প্রদান করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের সেবা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পুলিশকে উন্নত আধুনিকায়ন করার লক্ষ্যে এই বাহিনীর সদস্যদেরকে দেশে ও বিদেশে তদন্ত, আইন-শৃংখলা রক্ষা এবং তথ্য প্রযুক্তিসহ অন্যান্য বিভিন্নমুখী প্রশিক্ষণ প্রদানের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, নবগঠিত পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-এর কর্মকর্তাদের জন্য ‘কমপ্রেহেন্সিভ পুলিশ কেইস ম্যানেজমেন্ট, পুলিশ ফিন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট, কমপ্রেহেন্সিভ কোর্স অন ইনভেস্টিগেশন, মেজর কেইস ম্যানেজমেন্ট’ এবং ট্যুরিস্ট পুলিশ সদস্যদের জন্য বাংলাদেশ ট্যুরিজম ফাউন্ডেশন ও ট্যুরিস্ট পুলিশের যৌথ উদ্যোগে কক্সবাজার ও ঢাকায় ‘ট্যুরিস্ট পুলিশ ওরিয়েন্টেশন কোর্স’ করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, পুলিশ সদস্যগণকে আরও দক্ষ ও প্রশিক্ষিত করার লক্ষ্যে মৌলিক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও তদন্ত সহায়ক হিসেবে ‘কম্পিউটার ফরেনসিক, সাইবার ক্রাইম, মানি লন্ডারিং, পোস্ট-ব্লাস্ট ইনভেস্টিগেশন, ক্রাইম সিন ইনভেস্টিগেশন, নিউ টেকনিকস অব ইনটারগেশন, কল ডিটেইল রেকর্ড (সিডিআর), সংঘবদ্ধ অপরাধ প্রতিরোধে গোয়েন্দ তথ্য সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াকরণ শীর্ষক ট্রেনিং, খুন, ডাকাতি ও অন্যান্য গুরুতর অপরাধের তদন্তে ডিজিটাল উপকরণ ব্যবস্থাপনা, বেসিক ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন ইত্যাদি আধুনিক বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের ট্রেনিং পলিসি প্রণয়ন, বর্ধিত জনবলের প্রশিক্ষণের জন্য নতুন আরো ৪টি পিটিসি নির্মাণ, রিক্রুট কনস্টেবলের মৌলিক প্রশিক্ষণকাল ৬ মাসের পরিবর্তে ১ বছরে উন্নীতকরণ, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ‘মিড ক্যারিয়ার ট্রেনিং প্ল্যান’ এবং বাস্তব কাজের উপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন ট্রেনিং ম্যানুয়েল সংশোধন করা হচ্ছে।
প্রধানন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে রংপুর ও গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং জঙ্গি দমনে বিশেষায়িত পুলিশ ইউনিট গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের পূর্ববর্তী মেয়াদে ২০০৯-২০১৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে বিভিন্ন পদবীর মোট ৩১ হাজার ৭৪৪টি পদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর পদকে ২য় শ্রেণির পদ থেকে ১ম শ্রেণির নন-ক্যাডার এবং এসআই/সার্জেন্ট/টিএসআই পদকে ৩য় শ্রেণির পদ থেকে ২য় শ্রেণির পদে উন্নীত করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর কার্যকরী পদক্ষেপ হিসেবে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর জন্য ৬০টি জিপ, ৪টি সিডান কার, ১২৫টি ডাবল কেবিন পিকআপ, ২৭৭টি মোট সাইকেল, ৫টি কান্ট্রি বোট, ৪টি স্পিড বোট ও ৮টি ওয়াটার বাইকসহ মোট বিভিন্ন ধরনের ৫৩৯টি যানবাহন ও জলযান ক্রয় করা হয়েছে। তিনি বলেন, এছাড়াও দেশের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও জননিরাপত্তার কাজে ‘ভিডিও সারভেইলেন্স, মোবাইল এক্সরে মেশিন, লাগেজ স্ক্যানার, কনসেলড ওয়েপন ডিটেকটর, পোর্টেবল আর্চওয়ে গেট, পোর্টেবল এক্সপলসিভ ভ্যাপার ডিটেকটর, স্পিড ডিটেকটর, মোবাইল ট্রাকার’সহ বিভিন্ন ধরনের আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, পুলিশ সদস্যদেরকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে এবং প্রযুক্তি নির্ভর পুলিশিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও অন্যান্য ইউনিটসমূহে কম্পিউটার সামগ্রী নিয়মিত বরাদ্দ প্রদান করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।