ভারতের বিহার বিধানসভা নির্বাচনে দারুণ সাফল্য দেখিয়ে রাজ্যের ক্ষমতায় যেন রূপকথার ফিনিক্স পাখির মতোই ফিরে এলেন আরজেডি নেতা লালুপ্রসাদ যাদব। রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী ও জেডি (ইউ) নেতা নিতীশ কুমারের সঙ্গে গড়া মহাজোট লালুর সহায়তাতেই এবারের বহুল আলোচিত এ নির্বাচনে জয় পেয়েছে। ভরাডুবি হয়েছে গো-মাংস বিতর্কে জড়িয়ে পড়া বিজেপির। একই সঙ্গে পুনর্জীবন ফিরে পেয়েছে লালুর মৃতপ্রায় দলটি।
গত রোববার ঘোষিত নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যায়, ২৪৩ আসনের বিধানসভায় মাত্র ৫৮টি আসন পেয়েছে বিজেপি জোট। নিতীশ-লালুর মহাজোট পেয়েছে ১৭৮ আসন। অথচ গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি জোট পেয়েছিল ৯৪টি আসন।
একই বিধানসভায় লালুর দল ২২টি আসন পেলেও এবার পেয়েছে ৮০টি। তবে নিতীশের দলের আসন ১১৫ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৭১টিতে। এটা নিতীশের ফের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না বলে এরই মধ্যে জানিয়েছেন লালু।
১৫ বছর ছড়ি ঘোরানোর পর লালুর দল ক্ষমতার গদি থেকে ছিটকে পড়ে ২০০৫ সালে। পরে ২০১০ সালের নির্বাচনের পরাজয় প্রতাপশালী এই নেতাকে ঠেলে দেয় একেবারে খাদের কিনারে। তাঁর সঙ্গে নিজের দলটিও হয়ে পড়ে মৃতপ্রায়। বিধানসভার ওই নির্বাচনে নিতীশের নেতৃত্বে এনডিএ জোট চার-পঞ্চমাংশ আসনে তথা ২০৬টিতে জয়ী হয়। এতে একসময় অপরাজেয় হয়ে ওঠা দল আরজেডির নেতা লালু বিরোধী দলের নেতার আসনটিতেও বসতে ব্যর্থ হন।
২০১৩ সালে পশুখাদ্য কেলেঙ্কারির মামলায় অভিযুক্ত হয়ে লালুর ব্যক্তিগত জীবনেও নেমে আসে এক বিরাট ধাক্কা। অযোগ্য ঘোষিত হন লোকসভা নির্বাচনে অংশগ্রহণে। নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েন অন্তত ছয় বছরের জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য।
এ রকম বেসামাল অবস্থায় ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে পর্দার অন্তরালে থেকেই দলকে নেতৃত্ব দেন লালু। সেই নির্বাচনের ফলও আরেক দফা ধাক্কা দেয় লালু ও তাঁর দল আরজেডিকে। লোকসভায় বিহারের ৪০টি আসনের মধ্যে তাঁর দল জেতে মাত্র চারটিতে।
এভাবে একের পর এক ধাক্কায় লালু তাঁর বন্ধু থেকে শত্রু হয়ে ওঠা নিতীশের সঙ্গে জোট গড়ায় আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ২০১৩-এর জুনে ১৭ বছরের পুরোনো মিত্র বিজেপির সঙ্গে গাঁটছড়া ছিন্ন করা নিতীশের জেডি (ইউ) ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে আরজেডির চেয়েও খারাপ ফল করে জেতে রাজ্যের মাত্র দুটি আসনে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ব্যক্তিগত প্রতিভা ও তাঁর দল বিজেপির ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা ভালোভাবেই আঁচ করতে পেরে লোকসভা নির্বাচনের পর জোট বাঁধতে শুরু করেন লালু ও নিতীশ।
এ সময় শান্তি স্থাপনকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হন সমাজবাদী পার্টির প্রধান মুলায়েম সিং যাদব। বঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে নিয়ে রাজনীতি করা লালু ও নিতীশ—দুই নেতাই নিজেদের মতপার্থক্য ভুলে ২০১৫ সালের বিহার নির্বাচন জোটবদ্ধ হয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। নির্বাচনে আরজেডির অভূতপূর্ব সাফল্যের পর বিশ্লেষকেরা এখন বলছেন, লালু-নিতীশ মহাজোটের মধ্যে একক দল হিসেবে আরজেডি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়েও লালু হয়তো মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন না; কিন্তু ক্ষমতার কলকাঠি নাড়তে ঠিকই তিনি মুখ্য ভূমিকা রাখবেন বলে ধারণা তাঁদের। সূত্র: দ্য হিন্দু ও এনডিটিভি