মাঠপর্যায়ের কর কর্মকর্তারা নানাভাবে হয়রানি করেন—জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানকে পেয়ে এমন অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা। এ বিষয়ে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) গতকাল সোমবার মতিঝিলের ফেডারেশন ভবনে এনবিআরের সঙ্গে এক সংলাপের আয়োজন করে। ওই সংলাপেই ব্যবসায়ীরা কর কর্মকর্তাদের নানা হয়রানির চিত্র তুলে ধরেন। জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান কর কর্মকর্তাদের হয়রানির মনোভাব পরিবর্তনের নির্দেশ দেবেন বলে কথা দিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, ‘আমরা ভ্যাট (মূসক) দিতে চাই। কিন্তু এক টাকা ভ্যাট দিতে গিয়ে বাড়তি তিন টাকা খরচ করতে চাই না।’
এফবিসিসিআইয়ের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, ‘আমরা অবশ্যই চাই এনবিআর কর আদায় করুক। কিন্তু কর আদায়ের নামে যেন কোনোভাবেই হয়রানি না করা হয়।’
তৈরি পোশাকমালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা ট্যাক্স-ভ্যাট দিতে চাই। কোনো হয়রানি চাই না। ব্যবসায়ীরা যদি সম্মানই না পান তাহলে তাঁরা ব্যবসা করবেন কেন?’ তিনি বলেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে অসংগতিপূর্ণ শুল্ক-মূসক রয়েছে। যেমন, আগে ছিল ১০ শতাংশ, সেটাকে বাড়িয়ে করে দেওয়া হলো ৩৫ শতাংশ। এটা তো যৌক্তিক হলো না।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি এস এ কাদের বলেন, ‘আমরা যাঁরা ভ্যাট দিই, তাঁদের ওপরই আপনাদের অফিসাররা অত্যাচার করেন। যাঁরা ভ্যাট দেন না তাঁদের কাছে যান না। কারণ, তাঁদের সঙ্গে কর কর্মকর্তাদের মাসিক ভিত্তিতে আত্মীয়তার সম্পর্ক আছে।…হুমকি-টুমকি দিয়ে আমাদের কাছ থেকে ভ্যাট পাবেন না। ভালো ব্যবহার করেন, তাহলে আরও বেশি ভ্যাট দেব।’
এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক আবু মোতালেব বলেন, ‘ওয়ান-ইলেভেনের সময় দেশে যে অবস্থা হয়েছিল, এখন সে রকমই চলছে। কর কর্মকর্তারা হঠাৎ করে মার্কেটে ঢুকে কাগজপত্র নিয়ে যাচ্ছেন, দুর্ব্যবহার করছেন। তাঁরা এমন আচরণ করেন যেন ব্যবসায়ীরা সব চোর। আপনি (এনবিআর চেয়ারম্যান) এটাকে আটকান।’
বাংলাদেশ অটো রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ মাসাদুল আলম বলেন, ‘ভ্যাট দেয় ভোক্তারা। আমরা কেন এটা নিয়ে কথা বলি? কারণ, এনবিআরের কর্মকর্তারা হঠাৎ করে অভিযান পরিচালনা করে বসেন। কাগজপত্র নিয়ে চলে যান।’
চালকল মালিকদের সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কে এম লায়েক আলী বলেন, তাঁদের সদস্যভুক্ত চালকল আছে ১৮ হাজার। এর মধ্যে ১০ হাজার কর দেয়। বাকিরা কর না দিয়েই পার পেয়ে যাচ্ছে। যদি একটি নির্দিষ্ট কর ঠিক করে দেওয়া হয়, তাহলে করের পরিমাণ বেড়ে যাবে।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সহসভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, দেশে এখন বিস্কুটের কাঁচামাল যেমন- আটা, ময়দা ও চিনির দাম খুবই কম। কিন্তু এনবিআর ট্যারিফ মূল্য বেশি নির্ধারণ করে রেখেছে। অন্যদিকে আমদানি করা বিস্কুটের ওপর সম্পূরক শুল্ক কমিয়ে দিয়েছে। এতে দেশীয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তৃণমূল পর্যায়ে ভ্যাট-ট্যাক্স নিয়ে আতঙ্ক আছে বলে উল্লেখ করে আরেক সাবেক সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ।
সব শুনে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘হয়রানির যে মানসিকতা সেটা বদলাতে হবে—আমাদের অফিসারদের কাছে এমন বার্তা পৌঁছে দেব।’ রাজস্ব আদায়ের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের আচরণগত পরিবর্তন প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এনবিআরের সদস্য ফরিদ উদ্দিন মন্তব্য করেন, এনবিআর ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে অংশীদারত্বের মাধ্যমে সব ধরনের হয়রানি দূর করা সম্ভব। তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে কর-জিডিপি অনুপাত এখন ৯ শতাংশ। এটা ১২-১৩ শতাংশ হওয়া প্রয়োজন। অবশ্য এই অনুপাত ১৫ শতাংশ হওয়ার মতো অর্থনৈতিক অবস্থা দেশে রয়েছে।