আজ শনিবার ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর, মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস। ফলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি আজ দিবসটি মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস হিসাবে পালন করবে। ইতিহাস থেকে জানা যায়, সিপাহী বিপ্লবের নামে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউর রহমান এদিন থেকে শুরু করেন মুক্তিযোদ্ধা সেনা সদস্যদের হত্যা প্রক্রিয়া। আর সে প্রক্রিয়া শেষ হয় ১৯৮১ সালের ৩০ মে জিয়া হত্যাকান্ডের মধ্যদিয়ে। ১৯৭৫ সালের এদিনে সিপাহী বিপ্লবের নামে প্রথমে হত্যা করা হয় ৩ খ্যাতনামা মুক্তিযোদ্ধাকে। তারা হলেন, খালেদ মোশাররফ বীর উত্তম, কে এন হুদা বীর উত্তম এবং এটি এম হায়দার বীর বিক্রম। দশম বেঙ্গল রেজিমেন্টের সদর দপ্তরে অবস্থানকালে সকালে তাদের একেবারে কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করে কোম্পানি কমান্ডার আসাদ এবং জলিল।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, তথাকথিত সাতই নভেম্বর বিপ্লবের নামে অবৈধভাবে ক্ষমতায় আসা জিয়াউর রহমান হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা সেনা সদস্যকে হত্যা করে। দেশকে পাকিস্তানি ভাবধারায় ফিরিয়ে আনার জন্য পরিকল্পিতভাবে তিনি মুক্তিযোদ্ধা সেনা সদস্যদের হত্যা করেছিলেন।
সাংবাদিক এন্থনি ম্যাসকারেনহ্যাস এ ব্যাপারে লিখেছেন, ‘এছাড়াও এদিন উচ্ছৃঙ্খল জওয়ানরা একজন মহিলা ডাক্তারসহ ১৩ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করে। এমন কি একজন সেনা কর্মকর্তার স্ত্রীকেও এ সময় হত্যা করা হয়।’ লেখক গবেষক গোলাম মুরশিদ তার “মুক্তিযুদ্ধ ও তারপর” গ্রন্থে লিখেছেন, শাফায়াত জামিল বিদ্রোহের খবর পেয়েও থেকে গিয়েছিলেন বঙ্গভবনে। কিন্তু যখন বিদ্্েরাহী সেনারা শ্লোগান দিতে দিতে বঙ্গভবনের কাছাকাছি পৌঁছে যায় তখন তিনি সঙ্গীদের নিয়ে দেয়াল টপকে পালিয়ে যান। এতে তার পা ভেঙ্গে যায় এবং ভাগ্যচক্রে পরে ধরা পড়েন। তার জায়গা হয় সামরিক হাসপাতালে। তিনি বেঁচে যান।
এর আগে ৬ নভেম্বর ভোর রাতে গৃহবন্দি জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করতে যায় বঙ্গবন্ধুর খুনি ফারুকের ল্যান্সার বাহিনীর একটি দল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যায় যার বলিষ্ট ভূমিকা ছিল সেই ল্যান্সার মহিউদ্দিন ছিল এ দলের নেতৃত্বে। তারা জিয়াকে মুক্ত করে নিয়ে আসে কর্ণেল রশিদের দুই নম্বর অ্যাটিলারি রেজিমেন্টের দপ্তরে।
গোলাম মুরশিদ আরো বলেন, মুক্তি পেয়েই জিয়াউর রহমান সদ্য নিযুক্ত রাষ্ট্রপতির সঙ্গে (বিচারপতি আবু সাদত সায়েম) কথা না বলেই বেতারে ভাষণ দিতে চলে যান। ৭১ সালের ২৭ মার্চের মতোই সংক্ষিপ্ত ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন যে, সেনাবাহিনীর অনুরোধে তিনি প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। একাত্তরের ২৭ মার্চ তিনি প্রথমে নিজেকে রাষ্ট্রপতি হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন। পরে শুধরে নিয়েছিলেন। এবারও তিনি নিজকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসাবে ঘোষণা করেন। পরে উপ প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হয়েছিলেন।
পরবর্তীতে একেএকে গণভোট, প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, স্থানীয় পরিষদ নির্বাচন এবং পার্লামেন্ট নির্বাচন দিয়ে জিয়াউর রহমান নিজেকে প্রেসিডেন্ট হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করলেও তার আমলে ২০টির বেশী অভ্যুথান হয়েছিল বলে বিভিন্ন তথ্যে পাওয়া যায়। এক হিসাবে প্রায় প্রতি ৩ মাসে একটি করে অভ্যুথানের চেষ্টা হয়েছিল জিয়ার শাসন আমলে।
এ ব্যাপারে গোলাম মুরশিদ বলেন, একবার ফারুক-রশিদ ইত্যাদির শৃঙ্খলা ভঙ্গকে ক্ষমা করার পর জিয়া সেনাবাহিনীকে শৃঙ্খলার মধ্যে ফিরিয়ে আনতে খুবই চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু একটার পর একটা অভ্যুথান সেনাবাহিনীতে হতেই থাকে। প্রতিটি অভ্যুথানের পর বহু সেনা সদস্যকে তিনি ফাঁসিতে ঝোলান। অনেককে বিনা বিচারেও পাইকারিভাবে হত্যা করে গণকবর দেয়া হয়েছিল। বিশেষ করে ৭৭ সালের ২ অক্টোবর বিমান বাহিনীর অভ্যুথানের পর শত শত লোককে বিনা বিচারে অখবা সংক্ষিপ্ত বিচারে হত্যা করা হয়েছিল।
ফলে এমন অবস্থা দাঁড়ায় যে, বিমান-বাহিনীতে মাত্র ১১ জন কর্মকর্তা থাকেন। তাঁদের মধ্যে বিমান চালাতে পারতেন মাত্র তিন জন’। মার্কাস ফ্র্যান্ডার মতে এ অভ্যুথানের কারণে আড়াই হাজার সেনা সদস্য নিহত হয়। সবশেষ ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্রগ্রামে সামরিক অভ্যুথানে জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর মেজর মঞ্জুরসহ অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছিল এবং গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল।