দেশে সরকারি প্রশাসনের ভাবমূর্তির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, এমন বিষয় ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার না করতে কর্মকর্তাদের যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, তা নিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে মতভেদ দেখা যাচ্ছে।
ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারি কর্মকর্তাদের দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়ার নির্দেশনা জারি করা হয়েছে একজন কর্মকর্তার ফেসবুকে পোস্ট করা একটি ছবিকে কেন্দ্র করে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে বলা হয়, ছবিটি তাঁর পেশাগত অবস্থানের সঙ্গে আদৌ সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
এ নিয়ে সমালোচনার আশঙ্কা রয়েছে, একথা উল্লেখ করে ফেসবুকে কর্মকর্তারা কেমন আচরণ করবেন, সে বিষয়ে নির্দেশনা জারি করা হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোঃ শফিউল আলম বলছেন, সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য যে আচরণবিধি রয়েছে, অনেকে ফেসবুক ব্যবহারের সময় তা মানছেন না ।
তিনি বলেন, কিছুটা বিধিনিষেধ তো এক অর্থেই আছেই। আচরণবিধিতে অনেক কিছুই নিষেধ করা আছে। রাজনীতির কথা অনুষ্ঠানে যেতে পারবোনা, আদালত অবমাননা করা যাবেনা, কাউকে ব্যক্তিগত আক্রমণজনক কিছু বলতে পারব না। এগুলো তো আছে। সোশ্যাল মিডিয়া নতুন বিষয়। সেখানে যাতে কোড অব কন্ডাক্ট মানা হয় সেটিও মনে করিয়ে দেয়া। সবকিছুরই তো একটা সীমারেখা আছে সেটা যেন অতিক্রম না করে।
বাংলাদেশে অনেক সরকারি দপ্তরের নিজস্ব ফেসবুক পাতা রয়েছে, যেখানে নানা রকম তথ্য দেয়া হয়। আবার অনেক সরকারি কর্মকর্তা ব্যক্তিগতভাবে ফেসবুক বা অন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করেন এবং সেখানে যেমন তাদের ব্যক্তিগত তথ্য বা ছবি দেখা যায়, তেমনি অনেক সময় দাপ্তরিক তথ্যও শেয়ার করা হয়।
ফেসবুকে খুবই সক্রিয় একজন সরকারি কর্মকর্তা হলেন পটুয়াখালি জেলার গলাচিপা উপজেলার ভূমি বিষয়ক সহকারী কমিশনার কাজী সায়েমুজ্জামান।
তিনি মনে করেন সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য এ ধরনের একটি নির্দেশনার প্রয়োজন ছিল।
আমার ব্যক্তিগত পরিচয় আছে। কিন্তু সরকারি কর্মকর্তার পরিচয় সেটিকে ছাপিয়ে গেছে। তাই পেশাগত পরিচয়কে প্রাধান্য দেয়া উচিত। ফেসবুকে যারা আমার তালিকায় আছেন তারা কিন্তু আমাকে ব্যক্তিগতভাবে দেখেন না দেখেন ভূমি কর্মকর্তা হিসেবে। যেহেতু প্রশিক্ষণ দেয়া হয় তাই এ ধরনের পরিপত্র আসাটা লজ্জার। দায়িত্বশীল আচরণ নিজ থেকেই করা উচিত।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে দেয়া নির্দেশনায় বলা হয়, প্রশাসনের ভাবমূর্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, এমন বিষয় শেয়ার না করে উদ্ভাবনমূলক, সরকারী কাজের ইতিবাচক দিক, যা অন্যকে উদ্বুদ্ধ করবে, এমন বিষয় কর্মকর্তারা ফেসবুকে শেয়ার করতে পারেন।
তবে একজন চিকিৎসক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুশতাক হোসেন মনে করেন, ফেসবুকে ব্যক্তিগত ব্যবহারকারীদের পাতা তাঁর একান্ত নিজস্ব জগৎ।
তিনি বলেন, একান্ত অনুভূতি তো প্রকাশ করতেই পারেন। এটা তো মত প্রকাশের স্বাধীনতা। ব্যক্তি স্বাধীনতা। সে অনুযায়ী সে তা করবে। যদি অরুচিকর কিছু করে সে বিষয়ে প্রচলিত আইন আছে বা নিজের সুনাম বা সুখ্যাতির সাথে জড়িত। তাই এটি অযথা বিতর্ক তৈরি করবে বলেই আমার ধারণা।
তবে মন্ত্রিপরিষদের নির্দেশনাকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে দেখছেন না সচিব শফিউল আলম।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্টাফদের আচরণ কেমন হবে, সে বিষয়ে এখন অনেক প্রতিষ্ঠান পূর্ণাঙ্গ সোশ্যাল মিডিয়া গাইডলাইন তৈরি করছে।
তবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলছেন, সরকারি কর্মকর্তাদের জন্যে এমন গাইডলাইন তৈরি করার বিষয়টি নিয়ে এখনো চিন্তা-ভাবনা শুরু হয়নি। সূত্র : বিবিসি বাংলা