জাতীয় সমবায় দিবস আজ : রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর বাণী

জাতীয় সমবায় দিবস আজ : রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর বাণী

আজ শনিবার ৪৪তম জাতীয় সমবায় দিবস। প্রত্যেক বছরের মতো এবারও বিস্তারিত 4কর্মসূচির মধ্যদিয়ে দেশব্যাপী দিবসটি পালন করা হবে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে- ‘সমবায় উদ্যোক্তা সৃষ্টির মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন’। জাতীয় সমবায় দিবসকে সামনে রেখে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদা আলাদা বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে জাতীয় সমবায় দিবসে একটি সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে সমবায়ী ভাই বোনদেরকে আন্তরিকতা, সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি দৃঢ় আস্থার সঙ্গে বলেন, সাম্য, ভ্রাতৃত্ব এবং সামাজিক ন্যায়বিচারভিত্তিক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে সমবায় আন্দোলন তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালনে সক্ষম হবে। তিনি ‘সমবায় উদ্যোক্তা সৃষ্টির মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে দেশব্যাপী ৪৪তম জাতীয় সমবায় দিবস উদযাপন উপলক্ষে দেশের সমবায়ীদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
রাষ্ট্রপতি বলেন, দারিদ্র্য দূরীকরণ, আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ পারস্পরিক ঐক্য ও সহমর্মিতা সৃষ্টিতে সমবায়ের গুরুত্ব অপরিসীম। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সমবায় আন্দোলনের মাধ্যমে সমাজ থেকে ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও বেকারত্ব দূর করে শোষণহীন সুখী-সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলা’ গড়তে চেয়েছিলেন। এ জন্য তিনি সংবিধানে সমবায় ও সমবায়ী মালিকানাকে বিশেষ গুরুত্ব এবং মর্যাদা দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমাদের সৎ ও দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিসহ টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। সে পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় সমবায় দিবসের প্রতিপাদ্যটি খুবই সময়োপযোগী।
রাষ্ট্রপতি বলেন, সমবায়ের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পুঁজি একত্রিত করে নতুন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টির মাধ্যমে গ্রামীণ এবং শহরের নিম্নআয়ের মানুষের কর্মসংস্থান, আয় বৃদ্ধি, উৎপাদনবৃদ্ধিসহ সার্বিক জীবনমান উন্নয়ন সম্ভব। এ লক্ষ্যে সরকার সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন কর্মসূচি, একটি বাড়ি একটি খামার, চর জীবিকায়ন কর্মসূচি, কর্মসংস্থান ব্যাংক সৃষ্টিসহ নানামুখী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। ফলে বাংলাদেশ আজ মধ্যমআয়ের দেশে পরিণত হতে চলেছে।
রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন, স্বাধীনতার হীরকজয়ন্তীতে বাংলাদেশ একটি সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে। উন্নয়নের এ গতিধারা চলমান রাখার স্বার্থে লাগসই প্রযুক্তি ব্যবহার করে টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সমবায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হতে পারে। তিনি জাতীয় সমবায় দিবস উপলক্ষে গৃহীত সকল কর্মসূচির সাফল্য কামনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেছেন, সমবায়ের গুরুত্ব উপলব্ধি করেই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সুদৃঢ় করতে সমবায়কে সাংবিধানিক স¦ীকৃতি দিয়েছিলেন। আমরা জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করেই দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নয়নে সমবায়কে অগ্রাধিকার দিয়েছি। তিনি বলেন, ৭ নভেম্বর ২০১৫ দেশে ৪৪তম জাতীয় সমবায় দিবস উদ্যাপন করা হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। তিনি এ উপলক্ষে দেশের সকল সমবায়ীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘সমবায় উদ্যোক্তা সৃষ্টির মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন’ যা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হয়েছে বলে আমি মনে করি।
শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকার দেশে উৎপাদন বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে বদ্ধপরিকর। এ লক্ষ্য অর্জনে সমবায় বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে। তিনি বলেন, আমরা রূপকল্প- ২০২১ ও রূপকল্প- ২০৪১ বাস্তবায়নে সমবায়কে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছি। ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ ও ‘আশ্রয়ণ’সহ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর পুষ্টি চাহিদা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
সংসদ নেতা বলেন, আমরা সহায়-সম্পদহীন মানুষের আবাসন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি। আমরা যুগোপযোগী সমবায় সমিতি আইন প্রণয়ন করেছি। উৎপাদক ও ভোক্তা পর্যায়ে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সমবায় বাজার স্থাপন ও কেন্দ্রীয় সমিতি গঠন করা হয়েছে। আমরা সমবায়ভিত্তিক ব্যবসা উন্নয়নে যুবসমাজকে অধিকহারে সম্পৃক্ত করেছি। আমাদের এসকল পদক্ষেপের ফলে দেশে সমবায় আন্দোলন বেগবান হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, শুধু চাকুরির প্রত্যাশায় না থেকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মূলধন একত্রিত করে সমবায় সমিতি গঠনের মাধ্যমে নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে সকলে এগিয়ে আসবেন। এতে উদ্যোক্তাগণ অর্থনৈতিকভাবে নিজেরা লাভবান হবেন। দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে। সামাজিক সংহতি গড়ে উঠবে। টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত হবে। দেশ ও জাতি আরো এগিয়ে যাবে। শেখ হাসিনা বলেন, সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমরা সফল হয়েছি। এ মুহূর্তে সরকারের প্রচেষ্টা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন। টেকসই উন্নয়নকে সুনিশ্চিত করতে হলে সমবায়ের আদর্শ ও মূল্যবোধকে সমুন্নত রাখতে হবে। পণ্য-সামগ্রী উৎপাদন, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং বাজারজাতকরণসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকা-ে আরো অবদান রাখার মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়নে নিবেদিত হতে আমি দেশের সকল সমবায়ী ভাই বোনকে আহ্বান জানাচ্ছি। তিান ৪৪তম জাতীয় সমবায় দিবস উপলক্ষে গৃহীত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।

Featured বাংলাদেশ