ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ, পাচার সহ নানা ধরণের অপরাধমূলক কাজ নিয়ে খোঁজখবর নিতে সীমান্ত পরিদর্শন শুরু করেছে ভারতের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে দক্ষিণবঙ্গ সীমান্ত অঞ্চলে ঘুরেছেন ওই কমিটির সদস্যরা।
তারা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতার, রাস্তা প্রভৃতি পরিকাঠামোর অভাবগুলি খতিয়ে দেখছেন যাতে সীমান্ত দিয়ে গরু, সোনা, জাল ভারতীয় নোট বা ফেন্সিডিল পাচারের মতো অপরাধ বন্ধ করা যায়।
পাচার বা অনুপ্রবেশের পেছনে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও প্রশাসনের একাংশের জড়িত থাকার যে অভিযোগ ওঠে মাঝে মাঝেই, সেগুলিও স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে কথা বলে যাচাই করছে এই সংসদীয় কমিটি।
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি দক্ষিণবঙ্গ সীমান্ত অঞ্চল পরিদর্শনের প্রথম দিনে এদিন গিয়েছিল উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলার স্বরূপনগর এলাকায়।
ওই কমিটির কয়েকজন সদস্য বলছেন যে তারা অনেকটা এলাকা জুড়ে সীমান্তের পরিকাঠামো যেমন দেখেছেন, তেমনই স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেও পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করেছেন।
ওই সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান, কংগ্রেস দলের সংসদ সদস্য প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘সীমান্ত এলাকায় বিভিন্ন ধরনের অপরাধের খবর আসে। কিছু জায়গা তো খুবই স্পর্শকাতর। এগুলো দিয়েই পাচার চলছে। গরু পাচার যদিও অনেকটাই বন্ধ করে দেওয়া গেছে। কিন্তু অনুপ্রবেশও যাতে সেভাবে পুরোপুরি বন্ধ করা যায়, তার জন্য কাঁটাতারের বেড়া, পর্যাপ্ত আলোর মতো পরিকাঠামো দরকার। সেগুলোই আমরা খতিয়ে দেখছি।’
দক্ষিণবঙ্গ সীমান্ত অঞ্চলটি গরু, সোনা, জাল ভারতীয় নোট আর ফিন্সিডিল পাচারের একটা বড় রাস্তা। সম্প্রতি এই রাস্তা দিয়েই ছোট আগ্নেয়াস্ত্রও ভারত থেকে পাচার হচ্ছে।
তাই এই অঞ্চলে সীমান্ত অপরাধ রোধে ব্যবস্থা নেওয়া জন্য সুপারিশ করা যে এই সংসদীয় কমিটির একটা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব, সেটা স্বীকার করছেন কমিটির অন্যান্য কয়েকজন সদস্যও।
দক্ষিণবঙ্গ সীমান্তে প্রথম দিনে এঁদের নজরে এসেছে যে স্বরূপনগর এলাকার বহু জায়গায় সীমান্তে কাঁটাতার হয় নেই, নয়তো ভেঙ্গে পড়েছে। সারানো হয় নি।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য, তৃণমূল কংগ্রেসের কাকলি ঘোষ দস্তিদার উত্তর চব্বিশ পরগণা এলাকা থেকেই নির্বাচিত।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের সুরক্ষা বা বাংলাদেশের সঙ্গে সুরক্ষা দুটি বিষয়ের সঙ্গেই কাঁটাতারের বেড়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক বছর ধরে বেড়ার কাজ চলছে, কিন্তু এখনও সেই কাজ শেষ করা যায় নি। সারানো হয়নি ভেঙ্গে পড়া বেড়া। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এগুলো জরুরি। আমরা তাই পরিকাঠামোর ওপরে নজরদারি চালাতেই এই পরিদর্শনে গিয়েছিলাম।’
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রাজনাথ সিং কয়েক মাস আগে এই সীমান্ত অঞ্চলে সফর করতে এসেই বি এস এফ কে সব ধরনের পাচার, বিশেষত গরু পাচার একেবারে শূন্যে নামিয়ে আনতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তারপর থেকেই গরু পাচার রোধে তৎপর হয় বিএসএফ।
কিন্তু স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, বি এস এফ আর রাজ্য পুলিশের একাংশের সহযোগিতা না থাকলে যে সীমান্তে কোনও অপরাধ হওয়া সম্ভব নয়, সেটা মনে করেন অনেকেই।
তাই সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সেই বিষয়েও বিস্তারিত খোঁজখবর নিচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা।