যথাযোগ্য মর্যাদায় সারাদেশে জেল হত্যা দিবস পালিত হয়েছে। দেশবাসী আজ মঙ্গলবার মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বীরসেনানী ও জাতীয় চারনেতাকে যথাযথ শ্রদ্ধা প্রদর্শনের মাধ্যমে দেশের ইতিহাসের অন্যতম বর্বরোচিত এই কালো অধ্যায়টিকে স্মরণ করেছে। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে বঙ্গবন্ধু ভবন ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশে দলের শাখা কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ এবং কালো পতাকা উত্তোলন ও কালো ব্যাজ ধারণের মধ্যদিয়ে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি শুরু হয়।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনে সামনে রক্ষিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে দলীয় প্রধান হিসাবে বঙ্গবন্ধু প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তিনি। পরে দোয়া ও মোনাজাত অংশনেন এবং নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন।
এ সময়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, ওবায়দুল কাদের ও এডভোকেট সাহারা খাতুন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি ও মেজবাহ উদ্দিন সিরাজ, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী অবস্থায় নিহত সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামান স্মরণে ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু ভবনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। পরে আওয়ামী লীগ নেতারা বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদ ও জেলখানায় শহীদ জাতীয় নেতাদের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। বনানী কবরস্থানে পবিত্র ফাতেহা পাঠ, মিলাদ মাহফিল ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
জাতীয় চারনেতার মধ্যে এ এইচ এম কামারুজ্জানকে রাজশাহীর কাদিরগঞ্জে তার পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে সেখানেও অনুরূপ কর্মসূচি পালিত হয়। এ সময়ে জাতীয় পার্টি জেপির চেয়ারম্যান এবং পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে এবং মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে বনানী কবর স্থানে জেলহত্যায় নিহত শহীদদের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
এছাড়াও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, ছাত্রলীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, যুবলীগ উত্তর ও দক্ষিণ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ উত্তর ও দক্ষিণ, ছাত্রলীগ উত্তর ও দক্ষিণ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ,বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, জয়বাংলা সাংস্কৃতিক ঐক্যজোট, আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা লীগ, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ, বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদ, বিভিন্ন দল ও সংগঠন জাতীয় তিন নেতাসহ ১৫ আগষ্টের নিহত শহীদদের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর সন্তান ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, জাতীয় ৪ নেতার পালাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় কার্যকরের মাধ্যমে জনগণের আকাঙ্খা পূরণ করা হবে। জেলাহত্যা মামলার রায়ে সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামীদের বাংলাদেশের কাছে ফিরিয়ে দিতে খুনিদের আশ্রয়দানকারী রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, বিশ্বের যে রাষ্ট্রগুলো কথায় কথায় আমাদের গণতন্ত্র শেখাতে চায়, যারা মানবাধিকারের কথা বলে, তারাই বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চারনেতার খুনিদের আশ্রয়ে রেখেছে। তাই সেই সকল দেশে গুলোকে বলবো, যে সকল খুনিরা আপনাদের দেশে পালিয়ে আছে, তাদের বাংলাদেশ ফেরত দেওয়া হোক।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তাঁর পরিবারের অধিকাংশ সদস্যের সঙ্গে নির্মমভাবে হত্যা করার পর জাতীয় চারনেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, এ এইচ এম কামারুজ্জামান এবং ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীকে গ্রেফতার করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। পঁচাত্তরের ৩ নভেম্বর তাদের কারাগারের সেলের অভ্যন্তরে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।
এদিকে বেলা সাড়ে ৯ টার দিকে আওয়ামী লীগ, শহীদ পরিবার ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় কারাগারের ভিতরে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এ সময়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এবং কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী ও মোহাম্মদ নাসিম, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এডভোকেট সাহারা খাতুন, স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জমান খান কামাল, খাদ্যমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য প্রফেসর ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ সময়ে নেতৃবৃন্দ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি নিদর্শন গ্যালারি এবং চারনেতা স্মৃতি যাদুঘর পরিদর্শন শেষে মিলাদ মাহফিলে অংশ গ্রহণ করেন।
অপরদিকে জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাব কনফারেন্স হলে বঙ্গবন্ধু পরিষদ এক আলোচনা সভার আয়োজন করে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ডা. এস এ মালেকের সভাপতিত্বে সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. ফায়েক উজ্জামান, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান।
এছাড়াও কুড়িগ্রাম, নড়াইল, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, পাবনা, রাজশাহী, খুলনা, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, নোয়াখালী, বরিশাল, সিলেট, নেত্রকোনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় জেল হত্যা দিবস পালিত হয়েছে।