৩ দিনের এক সরকারি সফরে আজ মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমস্টার্ডামের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ছেন। ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটের আমন্ত্রণে তিনি এ সফরে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীদের নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইট সকাল ৮টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে যাবে বলে কথা রয়েছে। ফ্লাইটটি নেদারল্যান্ডের স্থানীয় সময় রাত ৯ টায় ডাচ রাজধানীর আমস্টার্ডম স্কিফল এয়ারপোর্ট সেন্টারে পৌঁছাতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। যাওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী আবুধাবিতে ৫ ঘন্টা যাত্রা বিরতি করবেন।
আমস্টার্ডাম স্কিফল এয়ারপোর্ট সেন্টারে উষ্ণ অভিনন্দন জানানোর পর প্রধানমন্ত্রীকে বর্ণাঢ্য মোটর শোভাযাত্রা সহকারে নেদারল্যান্ডের প্রশাসনিক রাজধানী দি হেগের গ্র্যান্ড হোটেল আমরাথ কুরহাউসে নিয়ে যাওয়া হবে। এ সফরকালে তিনি ওই হোটেলেই অবস্থান করবেন। সফর চলাকালে প্রধানমন্ত্রী আগামীকাল ৪ নভেম্বর সরকারি বাসভবন ‘ক্যাটশুইজে’ ডাচ প্রধানমন্ত্রীর মার্ক রুটের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। বৈঠকের পর দ্বিপাক্ষিক দলিল স্বাক্ষরিত হবে। পরে শেখ হাসিনা তাঁর সম্মানে মার্ক রুট আয়োজিত এক নৈশভোজ সভায় যোগ দেবেন।
এর আগে আগামীকাল ৪ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেদারল্যান্ডের রাণী ম্যাক্সিমার সঙ্গে তাঁর রাজপ্রাসাদে সাক্ষাত করবেন। বৈদেশিক বাণিজ্য ও উন্নয়ন সহযোগিতা বিষয়ক ডাচ মন্ত্রী লিলিয়ান প্লাউমেন এবং অবকাঠামো ও পরিবেশ মন্ত্রী মিলানি শুল্টজ সঙ্গে কুরহাওজ হোটেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করবেন। তিনি ডাচ মন্ত্রীবর্গের সঙ্গে ‘ডেলটা প্লান ২১০০’ শীর্ষক আলোচনায় অংশগ্রহণের পর মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেবেন।
আগামী ৫ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী কুরহাওজ হোটেলে একটি ব্যবসায়িক সেমিনারে যোগ দেবেন। তিনি সারা বছর ধরে বাছাইকৃত উৎপাদনকারী ও আমদানীকারকদের কাছ থেকে ফল ও সবজি ব্যবসায় জড়িত প্রতিষ্ঠান কুরনস্ট্রা এন্ড কোং পরিদর্শনে যাবেন। এছাড়া তিনি গ্রিন হাউজ পদ্ধতিতে প্রায় ৫০ ধরনের টমেটো উৎপাদনকারী ‘টমেটোওয়ার্ল্ড’ পরিদর্শন করবেন। তিনি কুরহাওজ হোটেলে নেদারল্যান্ডে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের দেয়া এক সংবর্ধনায় যোগ দেবেন। অতপর আগামী ৫ নভেম্বর বৃহস্পতিবার আমস্টারডাম থেকে দেশের উদ্দেশে রওয়ানা দেবেন প্রধানমন্ত্রী। সফর শেষে তিনি আবুধাবি হয়ে ঢাকায় হজরত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে ৬ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬ টায় পৌঁছাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
এদেকে গত রবিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী জানান, প্রধানমন্ত্রীর নেদারল্যান্ড সফরে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়ন এবং বঙ্গোপসাগরে সমুদ্রসীমা পুনরুদ্ধারের ওপর আলোকপাত করা হবে। তিনি বলেন, তাঁর এ সফরের মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ হবে এবং বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল হবে। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এই সফরের প্রধান উদ্দেশ্য হলো প্রযুক্তিগত সহযোগিতার মাধ্যমে মানবসম্পদ উন্নয়ন, তৈরি পোষাক, শিক্ষা এবং কৃষি ক্ষেত্রে বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরো সম্প্রসারিত ও শক্তিশালী করা।
প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে ২ দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ছাড়াও নিয়মিত রাজনৈতিক আলোচনা, পররাষ্ট্র সার্ভিস একাডেমি ট্রেনিং এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সহযোগিতা সংক্রান্ত ৪টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আলী বলেন, বৈঠকে ডেল্টা এলাকা, পানি ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং সমুদ্রে এলাকা পুনরুদ্ধার, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ বিষয় আলোচনায় অগ্রাধিকার পাবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সফরের সময় রোটারডেম পোর্ট এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ডাচ প্রকল্প পরিদর্শন করবেন এবং প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সংক্ষিপ্ত তথ্য সম্পর্কে অবহিত হবেন।
বাংলাদেশ প্রধান রপ্তানী পণ্য তৈরি পোশাকের ডিজাইন, মার্কেটিং এবং ব্রান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে উন্নয়নের বিষয়ে নেদারল্যান্ডের সহযোগিতা কামনা করবে। মাহমুদ আলী বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রীসহ ২৫ সদস্যের প্রতিনিধিদলে প্রধানমন্ত্রী নেতৃত্ব দেবেন। তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী নেদারল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও মতবিনিময় করবেন। ১৯ সদস্যের একটি ব্যবসায়ি প্রতিনিধিদলও প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হচ্ছেন।