বেলুনে পৃথিবী ঘিরছে গুগল, ছুটবে নেট!

বেলুনে পৃথিবী ঘিরছে গুগল, ছুটবে নেট!

তার বা টাওয়ার নয়। এ বার ইন্টারনেট সংযোগ বেলুন থেকে। 22
হাওয়ার চেয়েও হালকা বেলুন ভেসে বেড়াবে বায়ুমণ্ডলের দ্বিতীয় স্তরে। তার নীচে চল্লিশ কিলোমিটার ব্যাসের এলাকা জুড়ে ইন্টারনেট সিগন্যাল মিলবে প্রায় ৪জি-র সমান স্পিডে।
গুগলের এই প্রকল্পের নাম ‘লুন ইন্টারনেট প্রজেক্ট’। এই প্রকল্পের মাধ্যমে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে বেলুন ভাসিয়ে গোটা পৃথিবীকে ঘিরে ইন্টারনেট সিগন্যালের একটি বলয় তৈরি করতে চাইছে গুগল। একেবারে নতুন প্রকল্প নয়। ২০১৩ সালে পরীক্ষামূলক ভাবে শুরু নিউজিল্যান্ডে। তার পর ধাপে ধাপে প্রযুক্তি এবং পরিষেবার অনেক উন্নতি ঘটিয়েছে গুগল। এ বার গোটা বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে গুগলের এই নতুন গ্যাস বেলুন। আপাতত ইন্দোনেশিয়ার আকাশে ভাসতে শুরু করছে গুগলের বেশ কয়েকটি দৈত্যাকার হিলিয়াম বেলুন। প্রতিটি বেলুনে থাকছে দু’টি করে রেডিও ট্রান্সসিভার। তাদের কাজ ডেটা আদান-প্রদান করা। কোনও কারণে যান্ত্রিক গোলোযোগ হলে পরিস্থিতি সামাল দিয়ে পরিষেবা নির্বিঘ্ন রাখতে মজুত থাকছে একটি করে ব্যাক-আপ রেডিও। এ ছাড়াও বেলুনে থাকছে একটি কম্পিউটার ও একটি জিপিএস লোকেশন ট্র্যাকার।
বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে নীচের স্তর হল ট্রপোস্ফিয়ার। সেখানে হাওয়া চঞ্চল। তাই ট্রপোস্ফিয়ারে বেলুন রাখছে না গুগল। তার ঠিক উপরের স্তর স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে ভাসানো হচ্ছে এই ইন্টারনেট-লুন। ওই স্তরে হাওয়া অনেকটা স্থির। খুব মৃদু চলাচল। ফলে বেলুন হঠাৎ করে ভেসে এক জায়গা থেকে অন্যত্র চলে যাবে না। আবার বেলুন সরানোর দরকার হলে, যে অংশে হাওয়া বইছে সেখানে বেলুনকে নামানোর ব্যবস্থাও থাকছে। বিদ্যুৎ সংযোগের মাধ্যমে গোটা ব্যবস্থাকে সচল রাখতে বেলুনেই থাকছে সৌর বিদ্যুতের প্যানেল। যে এলাকার উপর বেলুন ভাসবে, তার নীচে বৃত্তাকারে ৪০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ইন্টারনেট সিগন্যাল মিলবে। গুগলের দাবি, স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে এই রকম বেলুন মোট ৩০০টি পাঠাতে পারলেই গোটা পৃথিবীকে ঘিরে একটি বলয় তৈরি হয়ে যাবে। ইন্দোনেশিয়ার ৩টি মোবাইল নেটওয়ার্ক গুগলের এই লুন ইন্টারনেট পরিষেবার অংশীদার হতে চেয়েছে। আগেই এই প্রকল্পের ভাগীদার হতে চেয়ে চুক্তিতে সই করেছে শ্রীলঙ্কাও। নিউজিল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া-সহ নিরক্ষরেখার উপর বা কাছাকাছি অবস্থিত দেশগুলিতে আপাতত এই প্রকল্পের সূচনা করতে চায় গুগল। দক্ষিণ গোলার্ধের উত্তরাংশ বরাবর পৃথিবীকে ঘিরে একটি বলয় তৈরি করাই গুগলের প্রাথমিক লক্ষ্য। সব কিছু ঠিকঠাক চললে ২০১৬ সালেই সেই বলয় তৈরি হয়ে যাবে বলে গুগল জানিয়েছে। বেলুনের অবিচ্ছিন্ন নেটওয়ার্ক তখন ওই বলয়ের নীচে থাকা এলাকাগুলিতে অবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট পরিষেবা দিতে থাকবে। কারণ একটি বেলুন হাওয়ায় সরে গেলে, তার পিছন পিছন অন্য বেলুন সেই ফাঁকা জায়গায় গিয়ে শূন্যতা পূরণ করে দেবে। এই ভাবে চক্রাকারে পৃথিবীকে ঘিরে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে ভাসতে থাকবে গুগলের ইন্টারনেট-লুনগুলি।
সংস্থা জানাচ্ছে, আগে ঘণ্টা দু’য়েকের চেষ্টায় ১৪ জন কর্মী মিলে একটি বেলুন স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে পাঠাতে পারতেন। এখন স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে ২-৩ জন কর্মী মিলে প্রতি ১৫ মিনিটে একটি করে বেলুন গন্তব্যে পাঠিয়ে দিতে পারেন। ২০১৩ সালে এই প্রকল্পের সূচনার সময় বেলুনগুলির আয়ু ছিল ৫-৭ দিন। এখন উন্নত বেলুনগুলির আয়ু ১৮৭ দিন। অতএব, তার বা টাওয়ার ভুলে, স্রেফ হিলিয়াম বেলুনের সাহায্যে গোটা বিশ্বকে গুগল-জালে জড়িয়ে নিতে অপেক্ষা আর মাত্র কয়েকটা বছরের।

Featured বিজ্ঞান প্রযুক্তি