ফাইনালও জিততে চাই : সাকিব

ফাইনালও জিততে চাই : সাকিব

জয় বাংলা বাংলার জয়..। বাংলাদেশের জন্য সার্বজনীন এই গান ক্রিকেট মাঠেরও সঙ্গী হল। ক্রিকেট সৈনিকদের উদ্দেশে উৎসর্গ করা হল গানটি। এশিয়া কাপে আগে কখনো যা হয়নি, সে ইতিহাস রচিত হল মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে।

জাতীয় দলের মারকাটারি ব্যাটসম্যান এই অর্জনকে ক্রিকেটের সেরা মানছেন,‘এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য সবচেয়ে বড় অর্জন। তবে আমাদের কাজ এখনো শেষ হয়নি। বাকি আছে ফাইনাল। আজ রাতে আমরা এই আনন্দ উপভোগ করব। তবে কাল থেকে আবার চেষ্টা করব, ফাইনাল জেতার জন্য।’

সাকিবকে দেখিয়ে তিনি বললেন,‘আমার পাশে যে বসে আছে সে গেম চেঞ্জার। ও ক্রিজে আসার সময় আমার বিশ্বাস ছিল, ও সহজাত খেললে আমরা জিতব। ও ক্রিজে খুব একটা কথা বলে না। আজ অনেক কথা বলেছে। আমাকে উৎসাহ যুগিয়েছে। এটি আমাকে দারুণ সাহায্য করেছে।’

জয়ের কৃতিত্ব নাসির হোসেনকে খানিকটা দিলেন তামিম,‘নাসির খুব আত্মবিশ্বাসী ক্রিকেটার। ও যা করছে, সেটি চালিয়ে গেলে বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য দারুণ হবে। যত ম্যাচ খেলবে, তত ভালো হতে থাকবে।’

অনেক নাটকের পর এশিয়া কাপে খেলছেন তামিম। টুর্নামেন্টের আগের তিক্ত দিনগুলোকে এখন মনে রাখতে চান না,‘ক্রিকেটারদের জীবনে এমনটা হবেই। আমার কাজ ছিল ওই ব্যাপারটা নিয়ে খুব একটা চিন্তা না করা। চিন্তা যে একবারেই করিনি, তা নয়। আর ওই সময় আমি দেশের বাইরে ছিলাম বলে সেটি নিয়ে খুব একটা ভাবিনি। ফেরার পর অনুশীলনে প্রচুর পরিশ্রম করেছি। সেটি কাজে লেগেছে।’

ওই সময়ে যারা তার পাশে ছিলেন তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন বাঁহাতি ওপেনার,‘বাড়তি প্রেরণা ছিল। সতীর্থ, পরিবারের সদস্য, যাকে গুরু মানি সালাউদ্দিন স্যার, জেমি সিডন্স, বর্তমান কোচ স্টুয়ার্ট ল। বিশেষ ধন্যবাদ সতীর্থদের। তারা আমাকে বুঝতেই দেয়নি যে, খারাপ সময়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি।’

বাংলাদেশ দলের এগিয়ে চলা প্রসঙ্গে,‘মূল ব্যাপার হল আমরা যত ম্যাচ খেলেছি, ১১২, ও ১২০। যত বেশি ম্যাচ বাংলাদেশ খেলবে, সেটি বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য ভালোই হতে থাকবে। নাসিরের মতো তরুণরা বেশি বেশি ম্যাচ খেললে জানতে পারবে কিভাবে চাপ সামলাতে হয়, কিভাবে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়।’

যার অভ্যাস ছিল ক্রিজে গিয়েই হাত খুলে ব্যাট করা সেই তমিম এখন অনেক পরিণত ক্রিকেট খেলছেন,‘দুটো নূতন বল আসায় ওপেনারদের আগের তুলনায় আরেকটু সতর্ক থাকতে হয়। আমি শচীন টেন্ডুলকারের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনিও এর সঙ্গে একমত। নিজের ব্যাটিং নিয়ে আমি সন্তুষ্ট। কেবল বড় ইনিংসই খেলতে পারছি না। সুযোগ পেলে চেষ্টা করব সামনে সেটি করতে।’

বিশ্বক্রিকেটে সাকিব এক রোমাঞ্চের নাম। তিনি তার প্রতিক্রিয়াগুলো সংবাদ সম্মেলনে এভাবে তুলে ধরলেন,‘এখন যে কেমন লাগছে, ঠিক বুঝতে পারছি না। খুবই রোমাঞ্চিত, খুবই আনন্দিত। কারণ এমন অর্জন আমাদের সাধারণত হয় না। এর অংশ হতে পেরে দারুণ লাগছে। কেমন যে লাগছে, বলে বোঝানোর মতো অবস্থায় নেই।’

জাতীয় দলের নির্ভরতার প্রতীক হয়ে উঠা সাকিব সাজঘরে ফেরার পরই খেলার ভবিষ্যৎ নিয়ে জানতে চেয়েছিলেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম,‘ড্রেসিংরুমে ঢোকার পর মুশফিক ভাই জানতে চাইলেন, আজ কেমন মনে হচ্ছে? বললাম, বুঝতে পারছি না। কিন্তু ১০-১৫ রান হবার পরই মনে হল, আজ হয়ে যাবে।’

বিকেএসপির অনুজ নাসির সম্পর্কে সাকিবের মন্তব্য,‘টুর্নামেন্টজুড়ে নাসিরের ব্যাটিং আমাদের জন্য দারুণ ব্যাপার। সেই কিন্তু ম্যাচ উইনিং ইনিংসগুলো খেলছে। রিয়াদ ভাইয়ের ইনিংসও খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাদের জুটিই আমাদের ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। আমরা অনেক সময় শেষ করতে পারতাম না। সেটি ও করছে। এই শূণ্যতা পূরণ হয়ে গেল।’

ফাইনালেও জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী সাকিব,‘এই দুটো জয় শুধু না, পাকিস্তানের সঙ্গে যেমন খেলেছি, তাতে মনে হচ্ছে, তাদেরকে আমরা হারাতে পারি। এই বিশ্বাস নিয়েই আমরা ফাইনাল খেলব।’

এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠাকেই শেষ মনে করছেন না সাকিব,‘এটি ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় অর্জন না। তবে ফাইনাল জিতলে হবে। আর খুশিটা প্রকাশ করতে পারছি না বলে কোনো না কোনোভাবে চেষ্টা করছি।’

বাংলাদেশ দলের এতটা পথ পাড়ি দেওয়ার পেছনে অন্যরকম জেদ কাজ করেছে। জানালেন সাকিব,‘আমরা এশিয়া কাপে কখনো ভালো খেলিনি। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে সংবাদ সম্মেলনে আমাকে এ জাতীয় প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছে। সেদিক থেকে চিন্তা করলে এটি অনেক বড় ব্যাপার। আমরা বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হারালাম, রানার্সআপদের হারালাম। সেটি দারুণ। এই জয়গুলো আমাদের অনেক আত্মবিশ্বাস দেবে। কাছে যেয়েও আমরা বারবার ব্যর্থ হচ্ছিলাম। এবার যে জিততে পারছি, এটি আমাদের অনেক দূর নিয়ে যাবে।’

৪০ ওভারে ২১২ রানের লক্ষ্য দেওয়ায় দর্শকরা নিরাশ হলেও ক্রিকেটাররা ছিলেন আত্মবিশ্বাসী,‘মনে হয়েছে, ২০ ওভারে ১০০ করব। পরের ২০ ওভারে ১১২। দর্শকরা একুট অধৈর্য হয়ে গিয়েছিল। তবে আমরা কিন্তু ড্রেসিং রুমে মনে হয়েছে সত্যি ২০ ওভারে ১০০ কোনো ব্যাপার না। এই আত্মবিশ্বাস আমাদের আছে।’

আর প্রধানমন্ত্রী মাঠে আসায় জয়ের ক্ষুধাটাও বেড়ে যায়,‘প্রধানমন্ত্রী আসায় আমরা বাড়তি প্রেরণা পাই। পুরো দেশের মানুষ প্রেরণা দিয়েছে যা সবসময় পাই না। কারণও আছে, সবসময় ভালো খেলতে পারি না। আশা করি, এখন থেকে সেটি হবে।’

বাংলাদেশ দলের জন্য শুভ কামনাই রেখে গেলেন প্রতিপক্ষ অধিনায়ক মাহেলা জয়াবর্ধনে,‘তারা সাফল্যের জন্য ক্ষুধার্ত। এটি তাদের চোখে-মুখে দেখা গেছে। আসলে বাংলাদেশ ভালো ক্রিকেট খেললেও ধারাবাহিকভাবে তা করতে পারছিল না। এই টুর্নামেন্টে তিনটি ম্যাচেই তারা দারুণ খেলেছে। ফাইনালেও তাদের সাফল্য কামনা করছি।’

খেলাধূলা