পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) প্রচ্ছন্ন হুমকি দিচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)’কে। পিসিবি চেয়ারম্যান জাকা আশরাফ ক্রিকেট ওয়েবসাইট ক্রিকইনফোকে বলেছেন, ‘পাকিস্তান সফরে না গেলে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে’।
ক্রিকইনফোর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে আইসিসির সহ-সভাপতি পদের জন্য বিসিবি সভাপতি আ হ ম মোস্তফা কামালকে সমর্থন দেওয়ায় দুই বোর্ডের মধ্যে অলিখিত বিনিময় চুক্তি হয়। দুই বোর্ডের একক প্রার্থী হিসেবে আইসিসিতে নাম পাঠানো হয়েছে মোস্তফা কামালের। আইসিসি কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় কামালকে প্রার্থী হিসেবে গ্রহণ করে। ওই পর্যন্ত পাকিস্তান কামালকে সমর্থন দিয়ে গেছে পিসিবি। এখন তারা বাংলাদেশ দলকে পাকিস্তানে দেখতে চায়।
বিসিবি সভাপতির আগ্রহে ২ মার্চ নয় সদস্যের পর্যবেক্ষক দল পাকিস্তান সফরে যায়, দেশটির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য। পর্যবেক্ষক দলটি লাহোর এবং করাচি ঘুরে দেখেন। প্রথম দিনই লহোরে এক সংবাদ সম্মেলনে বিসিবি সভাপতি পাকিস্তানকে নিরাপদ বলে উল্লেখ করেন, ‘যা দেখলাম তাতে তো মনে হয় পাকিস্তান নিরাপদ।’
বিসিবি সভাপতি ভোল পাল্টে ফেলায় পিসিবি থেকে এই প্রচ্ছন্ন হুমকি, ‘আমরা তাদেরকে সাহায্য করছি এবং তাদের সঙ্গে একটা ইতিবাচক সম্পর্ক রাখতে চাই। প্রত্যেক দেশের সঙ্গেই সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই। সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটাতে চাই। তাদের লিগে আমাদের খেলোয়াড় পঠিয়েছি। আশা করি তারা আমাদের ইতিবাচক মনোভাবের প্রতি সম্মান দেখাবে। বিনিময়ের সম্পর্কের কারণেই তো সব হচ্ছে তাই না।’
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের পাকিস্তান সফর নিয়ে লুকোচুরি কম হয়নি। পিসিবি আশা করে বসে আছে আর বিসিবি থেকে পরিষ্কার করে কিছু বলা হচ্ছে না। তবে ১২ মার্চ মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলনে কামাল বলেন, ‘আইসিসির ‘স্ট্যান্ডার্ড প্র্যাকটিস’ ছাড়া পাকিস্তান সফরে যাবে না বাংলাদেশ। খেলা পরিচালনার জন্য আম্পায়ার, ম্যাচ অফিসিয়াল আইসিসি থেকে ঠিক করে দিতে হবে বলে তিনি জানান। অবশ্য আইসিসি চাইলেও পাকিস্তান সফরে দল পাঠাতে পারবে না বিসিবি। তার জন্য বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদন লাগবে।’
আন্তর্জাতিক সূচিতে এপ্রিলে বাংলাদেশ দলের পাকিস্তান সফরের যাওয়ার কথা। পরীক্ষমূলক সফরে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ রাখা হয়েছে। দুটি করাচিতে, একটি লাহোরে।
এদিকে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ দলের পাকিস্তানে যাওয়াকে এখনও নিরাপদ মনে করছে না আইসিসি। এই কথাটিই পিসিবিকে সরাসরি বলতে পারছে না বিসিবি। বরং তিনি চেষ্টা করছেন সংবাদপত্রকে হাতিয়ার হিসেবে সামনে নিয়ে আসতে। সে জন্য তিনি ভিন্ন পন্থাও অবলম্বন করেছেন।
পিসিবি চেয়ারম্যানও বুঝতে পারছেন আইসিসির পূর্ণ সদস্যের বেশিরভাগ দেশই বাংলাদেশ দলের পাকিস্তান সফরের বিষয়কে ভালো চোখে দেখছে না, ‘আমরা জানি বেশির ভাগ সদস্য বোর্ডই আমাদের উদ্যোগকে ভালো চোখে দেখছে না। তাদেরকে নিশ্চিত করতে পারি বাংলাদেশ দলকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য যা করার আমরা তাই করবো।’
২০০৯ সালের ৩ মার্চ লাহোরের লিবার্টি চত্বরে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলের গাড়িতে বন্দুক হামলার পর পাকিস্তান থেকে নির্বাসনে গেছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। এরপর ক্রমাগত দেশটিতে সন্ত্রাসী কর্মকা- বেড়ে যাওয়ায় সেখানে কোন দেশ খেলতে যাচ্ছে না। বর্তমান পরিস্থিতিতে পাকিস্তানে যেতে রাজি হওয়ার কোন কারণও নেই। সব কিছু জেনে বুঝেও আইসিসি সভাপতি হওয়ার লোভে ক্রিকেট দলকে পাকিস্তানে পাঠিয়ে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে চেয়েছিলেন মোস্তফা কামাল! এখন তিনিই চাপের মুখে।