মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যুক্তরাষ্ট্রে অবনতিশীল বর্ণ সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। গত মঙ্গলবার শিকাগোতে পুলিশপ্রধানদের এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তিনি বলেন, প্রাপ্ত পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট আফ্রিকান-আমেরিকানদের প্রতি এ দেশের পুলিশের ব্যবহারে বৈষম্য রয়েছে।
বারাক ওবামা এমন এক সময়ে এই মন্তব্য করলেন যখন পুলিশের হাতে একের পর এক নিরস্ত্র ও নিরপরাধ কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক হত্যা বা নিগ্রহের ঘটনায় রাজনৈতিক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। নিউইয়র্কের স্ট্যাটেন আইল্যান্ড থেকে মিসৌরির ফার্গুসন, বালটিমোর থেকে নর্থ ক্যারোলাইনা, শুধু কালো হওয়ার কারণে সন্দেহবশত পুলিশের হাতে নিহত হওয়ার বিভিন্ন ঘটনা ঘটেছে। টেক্সাসে কেবল ট্রাফিক লাইট আইন না মানার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়ার পর পুলিশি হেফাজতে আত্মহত্যা করেছেন এক কৃষ্ণকায় নারী। গত মাসে নিউইয়র্কে হোটেলের সামনে অপেক্ষারত অবস্থায় ‘চোর’ সন্দেহে গ্রেপ্তার হন বিখ্যাত মার্কিন টেনিস তারকা জেমস ব্লেইক। অন্যদের মতো ব্লেইকেরও একমাত্র ‘অপরাধ’, তিনি কৃষ্ণকায়।
ওবামা তাঁর ভাষণে অবশ্য কৃষ্ণাঙ্গদের বিষয়ে পুলিশের ভূমিকার সরাসরি সমালোচনার বদলে মাঝামাঝি অবস্থান গ্রহণ করেন। একদিকে তিনি পুলিশের কর্তব্যপরায়ণতার প্রশংসা করে বলেন, তাদের জন্য যুক্তরাষ্ট্র অধিকতর নিরাপদ। পাশাপাশি কৃষ্ণাঙ্গসহ সংখ্যালঘুদের প্রতি পুলিশের আচরণের সমালোচনা ভিত্তিহীন নয়, সে কথাও পুলিশপ্রধানদের স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি বলেন, পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট যে এ দেশের পুলিশি ব্যবস্থায় সমস্যা রয়েছে। সব উদাহরণ যোগ করলে এ কথা প্রমাণিত হয় যে যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশি দৃষ্টিভঙ্গিতে বর্ণভিত্তিক বৈষম্য রয়েছে, বলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট।
কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি মার্কিন পুলিশের বৈষম্যপূর্ণ আচরণ যে বিচ্ছিন্ন নয়, বরং তা দেশটির সমাজের নিয়মিত চিত্র, সম্প্রতি এ মর্মে ‘প্রামাণ্য বিবরণ’ প্রকাশ করেছে দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমস। গত রোববার এক দীর্ঘ প্রতিবেদনে প্রভাবশালী পত্রিকাটি তথ্য-উপাত্ত ও পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে এই অভিমত দিয়েছে যে গায়ের রং কালো হলে কেউ এ দেশে নিজের গাড়িতেও নিরাপদ নয়। নর্থ ক্যারোলাইনার গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণের পর পত্রিকাটি বলেছে, সেখানে শ্বেতকায়দের তুলনায় কৃষ্ণকায় গাড়িচালকদের গ্রেপ্তারের সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি।
নর্থ ক্যারোলাইনার গ্রিনবরো শহরের উদাহরণ দিয়ে পত্রিকাটি জানিয়েছে, তল্লাশিতে গাঁজার মতো মাদকদ্রব্য পাওয়া শ্বেতকায় ও কৃষ্ণকায় গাড়ির চালকদের সংখ্যা সমান। অথচ গ্রেপ্তার কৃষ্ণকায় ব্যক্তির সংখ্যা পাঁচ গুণ বেশি।
টাইমস-এর বিশ্লেষণ অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ বড় শহরেই পুলিশ ‘রেসিয়াল প্রোফাইলিং’ বা বর্ণভিত্তিক অপরাধ নির্ণয় করে থাকে। অর্থাৎ কালো হলে আইনের এক রকম ব্যবহার, শ্বেতকায় হলে অন্য রকম। ফেডারেল আইন অনুসারে বর্ণভিত্তিক অপরাধ নির্ণয় বেআইনি হলেও কোনো কোনো রাজ্যে স্থানীয় পর্যায়ে তা এখনো বহাল রয়েছে।
এই পুলিশি বৈষম্যের প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ নামে ব্যাপক প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয়ে আসছে। অধিকাংশ পর্যবেক্ষকের ধারণা, আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এই প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ডেমোক্রেটিক পার্টির সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিলারি ক্লিনটন পুলিশি আচরণের সমালোচনা করে দেশের বিচারব্যবস্থা পুনর্গঠনের দাবি তুলেছেন।
রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীদের অধিকাংশই হয় নীরবতা পালন করে চলেছেন, অথবা পুলিশের সমর্থনে বক্তব্য দিয়েছেন। তাঁরা এমন অভিযোগও করেছেন, ডেমোক্রেটিক রাজনীতিকদের সমর্থনের ফলেই দেশের বিভিন্ন শহরে পুলিশের ওপর আক্রমণ বেড়েছে।
তবে ওবামা শিকাগোতে এও বলেন, যে সমস্যার মূলে রয়েছে মার্কিন সমাজ ও তার বিচারব্যবস্থার ব্যর্থতা, সে জন্য একা পুলিশকে দায়ী করাও যুক্তিযুক্ত নয়।