পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে সোমবারের ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে সাড়ে ৩০০ও ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে পাকিস্তানে ২৪১ জন ও আফগানিস্তানে কমপক্ষে ১১৫ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। দক্ষিণ এশিয়ার ৩ দেশ আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ভারতে সোমবার ৭.৫ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। বাংলাদেশেও মৃদু ভু-কম্পন অনুভূত হয়েছে। আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ভারতে সহ¯্রাধিক লোক আহত হয়েছেন। বহু লোক এখনো ধসে পড়া ভবনের নিচে চাপা পড়ে আছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে দেশ দুটির কর্তৃপক্ষ।
ভূমিকম্প পরবর্তী শক্তিশালী আভিঘাতের (আফটার শক) ব্যাপারে ইতোমধ্যে সতর্কতা জারি করেছে ভারত ও পাকিস্তান। উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নিচ্ছে সেনাবাহিনী ও অন্যান্য উদ্ধারকারী দল। পাকিস্তানের পেশোয়ার, সোয়াতসহ ভূমিকম্প আঘাত হানা বিভিন্ন এলাকায় হাসপাতালগুলোতে শত শত আহত মানুষ ভর্তি হয়েছে। ইংল্যান্ড সফরে থাকা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ জরুরি পরিস্থিতিতে সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরে আসছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের ভূমিকম্প পরিস্থিতি উত্তরণে সাহায্যের প্রস্তাব দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ সময় সোমবার বিকেল তিনটা ৯ মিনিটে অনুভূত এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৭.৫। ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল থেকে ২৫০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে হিন্দুকুশ অঞ্চলে, ভূপৃষ্ঠের ২১৩.৫ কিলোমিটার গভীরে। এটির স্থায়িত্ব ছিল প্রায় ৪০ সেকেন্ড। ওই এলাকার কাছেই পাকিস্তান ও তাজিকিস্তানের সীমান্ত। বাংলাদেশেও ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে এই ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
শক্তিশালী ভূমিকম্পের ফলে ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ায় হতাহতের এ ঘটনা ঘটে বলে বলা হয়েছে। প্রত্যন্ত এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে হতাহতের খবর পেতে বিলম্ব হচ্ছে। ভূমিকম্পের সময় দেশগুলোর বিভিন্ন ভবন থেকে আতঙ্কিত মানুষেরা বেরিয়ে আসে। পাকিস্তানের ডন পত্রিকা খবর দিয়েছে, ইসলামাবাদ, পেশোয়ার, লাহোর, ফয়াসালাবাদ ও পাকিস্তানের পার্বত্য চিত্রাল এলাকায় ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। ভূমিকম্পের ফলে পাকিস্তানের ইসলামাবাদ ও পেশোয়ারের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিঘœ ঘটেছে। আফগানিস্তানের তাখার প্রদেশের একটি বালিকা বিদ্যালয়ের ১২ ছাত্রীসহ দেশটিতে এ পর্যন্ত ১১৫ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে।
ভারতের দিল্লি, কাশ্মীর, হরিয়ানা ও পাঞ্জাবেও ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। ভূকম্পনটির স্থায়িত্ব ছিল দুই মিনিটেরও বেশি। আতঙ্কে মানুষজন ঘরবাড়ি থেকে বের হয়ে আসেন। ভূমিকম্পের পর ভারতের কাশ্মীর, পাকিস্তানের লাহোর ও আফগানিস্তানের কাবুল এবং সংলগ্ন এলাকায় মোবাইল ফোন ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ হয়ে যায় দিল্লির মেট্রোরেল সার্ভিস। আতঙ্কে কর্মস্থল ছেড়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসে দিল্লি ও ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় শহরগুলোর লোকজন।
ভূমিকম্পে পাকিস্তানের সারগোদা এলাকায় একটি স্কুল ভবন ধসে পড়ে। এতে বেশ কিছু লোক আহত হয়। তবে ভারত ও বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে বড় ভূমিকম্পটির ৪০ মিনিট পর একই এলাকায় আবার ভূমিকম্প (আফটার শক) অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪.৮। এর আগে, ২০০৫ সালে পাকিস্তানে ৭.৬ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হয়। ওই ভূমিকম্পে প্রায় ৭৫,০০০ লোকের মৃত্যু হয় এবং ৩৫ লাখ লোক বাস্তুচ্যুত হয়।