দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়িত্ব দুর্নীতিবাজ ধরা। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে জলজ্যান্ত প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও সেটা দুদকের চোখে পড়ে না। তাই প্রশ্ন উঠেছে, দুদককে ধরবে কে? এই প্রশ্ন অর্থ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির।
সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠক শেষে গতকাল মঙ্গলবার কমিটির সভাপতি আবদুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে এ কথা বলেছেন। তিনি বলেন, প্রশ্নের উত্তর জানতে দুদককে কমিটির বৈঠকে তলব করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের উপস্থিতিতে কমিটি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আবদুর রাজ্জাক বলেন, বেসিক ব্যাংকের টাকা লুটের সঙ্গে জড়িত কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও এর পরিচালনা পর্ষদ বা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কমিটি তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছিল। বেসিক ব্যাংক জানিয়েছে, তারা জালিয়াতির সব প্রমাণপত্র দুদকে পাঠিয়েছে। কিন্তু দুদকের তদন্তে কিছু ধরা পড়েনি। কমিটি দুদকের তদন্ত বিশ্বাস করে না। সে জন্যই কমিটি প্রশ্ন তুলেছে, দুদককে ধরবে কে? এই প্রেক্ষাপটে দুদকের সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এর আগে সরকারি প্রতিষ্ঠান-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান বলেছিলেন, জালিয়াতেরা বেসিক ব্যাংকের টাকা বস্তা ভরে নিয়ে গিয়েছিল।
সরকারি প্রতিষ্ঠান ও অর্থ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, ২০১০ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে অনিয়ম ও ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে বেসিক ব্যাংকের সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা লুট হয়ে যায়। বেসিক ব্যাংকের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমিটিকে জানান, ব্যাংক ঋণপত্র যাচাই না করে জামানত ছাড়া, ক্ষেত্রবিশেষ জাল দলিল গ্রহণ করে ভুয়া প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে ঋণ দিয়েছে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও পরীক্ষা ছাড়াই জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়। জমির মালিকানা নিশ্চিত না হয়ে ‘জামান বেসিক টাওয়ার’ কেনায় ৭৬ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে ৪৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এসব উদ্ঘাটিত বিষয় দুদকে পাঠানো হয়েছে, যার ভিত্তিতে দুদক ব্যবস্থা নিতে পারে।
বৈঠক সূত্র জানায়, দুদকের তদন্তে বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই ও পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উত্থাপিত না হওয়ায় কমিটির সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বৈঠকে দুদককে বা মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে সংসদীয় কমিটিতে ডাকা যায় কি না, সে বিষয়ে আলোচনা হয়। এ বিষয়ে কমিটি সংসদ সচিবালয়ের আইন কর্মকর্তাদের মতামত চাইলে তাঁরা ডাকা যাবে বলে জানান এবং এ-সংক্রান্ত সংসদের কার্যপ্রণালি বিধি পড়ে শোনান।
কার্যপ্রণালি বিধির ২০৩ ধারায় বলা আছে, কোনো প্রতিষ্ঠানের রেকর্ড, কাগজপত্র এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে তলব করার ক্ষমতা কমিটির থাকবে। কোনো ব্যক্তির সাক্ষ্য বা দলিল-দস্তাবেজ কমিটির কাজে প্রয়োজনীয় কি না, সেই প্রশ্ন উত্থাপিত হলে বিষয়টি স্পিকারের কাছে পাঠাতে হবে এবং স্পিকার যে সিদ্ধান্ত দেবেন, তা-ই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বা স্বার্থ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে সরকার দলিল জমা দেওয়ার বিষয়ে অনিচ্ছা প্রকাশ করতে পারবে।
আবদুর রাজ্জাক বলেন, কমিটি কার্যপ্রণালি বিধি পর্যালোচনা করে দেখেছে, দুদককে ডাকা যাবে। তবে কমিটি এ বিষয়ে স্পিকারের সঙ্গে পরামর্শ করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। তিনি আরও বলেন, একজন লোক হিসাব নম্বর খোলার এক দিন পর ৫০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে চলে গেছেন। ব্যাংকের তদন্তে সেটা প্রমাণিত। অথচ দুদক কিছু খুঁজে পাচ্ছে না, এ অবিশ্বাস্য।
আবদুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটির সদস্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আবদুল মান্নান, আবদুল ওয়াদুদ, টিপু মুনশি, ফরহাদ হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী ও আখতার জাহান অংশ নেন।