পাখিদের আচরণ, ডাকা ও চলাচলের মধ্যে নানা ধরনের বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কোনো পাখি একাকী চলতে ভালোবাসে, কোনো পাখি আবার দলে চলে। বাসা বানানো, গান গাওয়া, খাবার খাওয়া, শত্রুর মোকাবিলা করা, রাত কাটানো, খাবার খোঁজাসহ নানান কাজ অনেক প্রজাতির পাখি দলবদ্ধভাবে করে থাকে। দেশি বাবুইদের আমরা সব সময় দলবদ্ধভাবে সব কাজ করতে দেখি। পুরুষ কোকিল ও পুরুষ দোয়েল একাকী গান গেয়ে গেয়ে আমাদের শহর ও গ্রামের মানুষের মন জয় করে নেয়।
আমাদের পাহাড়ি চিরসবুজ বনে অনেক প্রজাতির গায়কি পাখির বসবাস। শুধু বনে গেলেই সেসব পাখির হৃদয়স্পর্শী গানের সুর শোনা যায়। বড় মালাপেঙ্গা চিরসবুজ বনে দলবদ্ধভাবে বসবাসকারী গায়কি পাখি। এরা গান গাইতে গাইতে বনের পরিবেশে ঘুরে বেড়ায়। বড় কোনো খাবারের উৎস পেলে ১০-২৫টি পাখির দল খুব সকালে ও গোধূলিবেলায় আসে। প্রথমে একটি পাখি উড়াল দিলেই একে একে দলের অন্যান্য পাখি তার পেছনে ছুটে চলে। ডানা দুলিয়ে, সোজাভাবে দুদিকে মেলে ধরে এবং লেজ ছড়িয়ে উড়ে বেড়ায়। ওড়ার সময় প্রশস্ত লেজের সাদা আগা চোখে পড়ে। সাধারণত গাছের ডালে ডালে লাফিয়ে চলে, চলার সময় এবং ওড়ার সময় মধুর সুরে গান গায়।
বড় মালাপেঙ্গা দেখতে সুদর্শন। এর ফিকে পীত বর্ণের গলা ঘিরে রেখেছে কালো প্রশস্ত মালা। সাদা পালকের চারদিকে ঘোরানো এ মালা পাখিটিকে আরও আকর্ষণীয় করেছে। বড় মালাপেঙ্গা সাধারণত প্রশস্ত পত্রবহুল ঘন চিরসবুজ বন, বাঁশঝাড় ও বৃক্ষতলের মাঝারি গুল্মলতায় বিচরণ করে। অন্য পাখিদের সঙ্গে ভালো কোনো খাবারের উৎস পেলে খাবারসন্ধানী দলে যোগ দেয়। বনতলে পতিত পাতায় লাফিয়ে লাফিয়ে খাবার খোঁজে। খাবারের তালিকায় আছে রসাল ফল, পোকা, শামুক, বীজ ও ফুলের রস। সচরাচর ডাকে পুক্রিইইইইই পা-কাক-কাক-কাক, প্রজনন মৌসুমে ডাকে উয়িক, উয়িক…। মার্চ-আগস্ট মাসে ভূমি থেকে ছয় মিটার উঁচুতে ঝোপ কিংবা ছোট গাছে পাতা ও শেওলায় বড় কিন্তু অগভীর মাচার মতো বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। বাধা পেলে চুপিসারে বাসা ছেড়ে পালিয়ে যায়। ডিম গাঢ় নীল। মা-বাবা উভয়ে মিলে সংসারের যাবতীয় কাজ করে। চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের চিরসবুজ বনে এরা বসবাস করে। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে গিয়ে বড় মালাপেঙ্গার (Greater Necklaced Laughingthrush) দেখা পেয়েছি প্রথম এবং দ্বিতীয়বার কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানে।
এটি জলপাই-বাদামি রঙের গায়ক পাখি। দেহের দৈর্ঘ্য ২৯ সেন্টিমিটার, ওজন ১৫৬ গ্রাম। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির ডানার প্রান্ত-পালকের বাইরে প্রান্তদেশ সাদাটে। পিঠ জলপাই বাদামি, ডানার বড় পালক-ঢাকনি কালো। সাদা ভ্রুরেখা চোখের পেছন পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। বগল ফিকে লালচে, বুক ও পেট সাদা। চোখ লালচে কিংবা কমলা-বাদামি। চক্ষুগোলকের চামড়া পীত হলুদ। পা ও পায়ের পাতা স্লেট-ধূসর এবং কালচে বাদামি ঠোঁটের গোড়া অপেক্ষাকৃত ফিকে। ছেলে ও মেয়ে পাখির চেহারা অভিন্ন। চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি বন, হবিগঞ্জের রেমা-কালেঙ্গা বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য, মৌলভীবাজারের সাতছড়ি উদ্যানে গেলে খুব সকালে পাখিটির দেখা পাওয়া সহজ।