আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে ঢাকায় শুরু হচ্ছে দুদিনব্যাপী আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ ঐতিহ্য ও পর্যটন সম্মেলন। সরকার আশা করছে, এই সম্মেলন বাংলাদেশ সম্পর্কে পৃথিবীতে ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে তুলবে। পর্যটন সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এতে দেশে বিদেশি পর্যটক বাড়বে।
জাতিসংঘের পর্যটন সংস্থা (ইউএনডব্লিউটিও) এবং বাংলাদেশ সরকারের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে। জাতিসংঘের পর্যটন সংস্থার প্রধান থেকে শুরু করে বিশ্বের ১৩টি দেশের পর্যটনমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্টরা এতে অংশ নেবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন। ইউএনডব্লিউটিও’র মহাসচিব তালিব রিফাই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ভাষণ দেবেন। সম্মেলনে যোগ দিতে ভারত, ভুটান, নেপাল, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, কম্বোডিয়া, চীন, সিঙ্গাপুর, কোরিয়া, আফগানিস্তানসহ ১৩টি দেশের মন্ত্রী ও কর্মকর্তারা ঢাকায় পৌঁছেছেন।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব খোরশেদ আলম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, এই সম্মেলন বাংলাদেশ সম্পর্কে বিশ্বকে নতুন ধারণা দেবে। বাংলাদেশের বৌদ্ধ পুরাকীর্তি, স্থাপত্য, ঐতিহাসিক নিদর্শন, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বৌদ্ধ নিদর্শনগুলো সম্মেলনে তুলে ধরা হবে। তাঁরা আশা করছেন, বুদ্ধের স্থাপত্যকে ঘিরে যে পর্যটকেরা এই অঞ্চলে আসেন তাদের নতুন গন্তব্য হবে বাংলাদেশ। সম্মেলনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে পর্যটন বর্ষ-২০১৬ ঘোষণা করবেন বলে জানা গেছে। সরকার আশা করছে, আগামী বছর ১০ লাখ বিদেশি পর্যটক আসবে।
বাংলাদেশ টুরিজম বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, পাহাড়পুর, ময়নামতিসহ বাংলাদেশে অন্তত ৫০০ বৌদ্ধ স্থাপনা আছে। এ ছাড়াও মহাস্থানগড়ের বসুবিহার, রাজশাহীর সোমপুর বিহার, কুমিল্লার শালবন বিহার, চট্টগ্রামের পণ্ডিত বিহার, ঢাকার বিক্রমশিলা বিহার উল্লেখযোগ্য।
ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) পরিচালক মাসুদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৪ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশ, বিহার, নেপাল ও মিয়ানমারে বৌদ্ধধর্মীয় পর্যটনস্থান ভ্রমণের সংখ্যা ছিল ৪৮ লাখ। ২০২০ সালের মধ্যে এসব অঞ্চলে প্রায় এক কোটি পর্যটককে আনার লক্ষ্য আছে দেশগুলোর। বাংলাদেশ যদি আগামী পাঁচ বছরে এই পর্যটকের মধ্যে মাত্র দেড় শতাংশ ধরতে পারে তাতেও শুধু এই পর্যটকের সংখ্যা হবে দেড় লাখ। এ ছাড়া আগামী পাঁচ বছরে আয় হবে অন্তত ৬০০ কোটি টাকা।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের বৌদ্ধধর্মের যেসব প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান রয়েছে, তা বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থান। পাহাড়পুরের সোমপুর বিহার নালন্দা বৌদ্ধবিহারের সমতুল্য বিদ্যাকেন্দ্র। অথচ এর কোনো প্রচার নেই। চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাংয়ের হিসাব অনুযায়ী, কুমিল্লার শালবন বিহারে ছিল ৩০টি বৌদ্ধবিহার। এ পর্যন্ত এর মধ্যে কেবল সাতটি বিহার খনন করা সম্ভব হয়েছে। একটি নগরে এতগুলো শিক্ষাকেন্দ্র বিশ্বের আরও কোথাও নেই। যথাযথ পরিকল্পনা নিলে বাংলাদেশও বৌদ্ধ পর্যটকদের অন্যতম গন্তব্যে পরিণত হবে।’