প্রয়োজনে ঢাকাকে নিয়ে এগোবে দিল্লি

চীন ব্রহ্মপুত্র নদে বাঁধ দিয়ে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়িত করায় ভারত এখনই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত নয়। তবে নিম্ন অববাহিকার দেশ হিসেবে ভবিষ্যতে আশঙ্কা দেখা দিলে ভারত অবশ্যই তার মোকাবিলা করবে। সে ক্ষেত্রে ঢাকা ও থিম্পুর সঙ্গে একযোগে কিছু করা যায় কি না, তা তখন ভেবে দেখা হবে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক পদস্থ সূত্র গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে এ কথা জানায়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ভারতের সঙ্গে একযোগে বিষয়টির মোকাবিলা নিয়ে বাংলাদেশ ও ভুটান এখনো কোনো আগ্রহ দেখায়নি। তবে ব্রহ্মপুত্রের প্রবাহ নিয়ে ভারতকে চীন যেসব তথ্য দিয়ে আসছে, তাতে ভারত খুশি। ভারত চাইবে, চীন তথ্যের পরিধি আরও বাড়াক। তিনি বলেন, এ নিয়ে ভারতের সহযোগিতা বাংলাদেশ চেয়েছে বলে তিনি কিছু এখনো শোনেননি।
বাংলাদেশের পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এর আগে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, চীনের এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে কী হবে, সে সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
ব্রহ্মপুত্র নিয়ে বাংলাদেশেও তৎপরতা শুরু হয়েছে—এ কথা জানিয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশনের এক সূত্র গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ বিষয়টি নিয়ে তার মতো করে ভাবছে। তিন দেশের সম্মিলিত কোনো উদ্যোগের কথা বাংলাদেশ এখনই ভাবছে না। সূত্রটি জানায়, ক্ষতির আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশের। কারণ চীন, ভারত ও ভুটান হয়েই ব্রহ্মপুত্র বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
সরাসরি প্রকাশ না করলেও চীনের এই উদ্যোগ ভারতকে চিন্তায় রেখেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রটির কথায়, প্রথম চিন্তা ব্রহ্মপুত্রে পানিপ্রবাহে হেরফের ঘটবে কি না। দ্বিতীয় চিন্তা, নিম্ন অববাহিকায় ভবিষ্যতে ব্রহ্মপুত্র অস্বাভাবিক আচরণ করবে কি না। তিনি বলেন, চীন সময়ে সময়ে এই নদের জলপ্রবাহ, তার সম্ভাব্য গতি-প্রকৃতি এবং অন্যান্য তথ্য ভারতকে দিয়ে আসছে। তাতে ভারতের উপকারই হচ্ছে। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে ভবিষ্যতে ভারতের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ দেখা দেবে না। দিলে ভারত দ্বিপক্ষীয় পর্যায়ে তার মোকাবিলা করবে।
চীন থেকে বেরিয়ে ব্রহ্মপুত্র ভারত, ভুটান ও বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ভারতের কোনো আশঙ্কা থাকলে সেই আশঙ্কায় ভুটান ও বাংলাদেশও ভুগবে। কাজেই তিন দেশ একযোগে বিষয়টি নিয়ে চীনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারে কি না, জানতে চাওয়া হলে সূত্রটি জানায়, এখনই বহুপক্ষীয় তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। ভারত দ্বিপক্ষীয় স্তরে বিষয়টি নিয়ে চীনের সঙ্গে ইতিমধ্যেই কথা শুরু করেছে।
ওই সূত্র আরও বলেছে, ব্রহ্মপুত্র প্রতিবছরেই আসামকে ভাসিয়ে দেয়। এই জলোচ্ছ্বাস ও দুর্গতির আগাম আভাস আরও নিখুঁতভাবে পেতে ভারত আগ্রহী। পাশাপাশি ভারত চায়, এই বিস্তীর্ণ নদের জলপ্রবাহ যেন না কমে। সূত্রটি জানায়, বাংলাদেশও প্রয়োজন হলে নিশ্চয় দ্বিপক্ষীয় স্তরে চীনের সঙ্গে আলোচনা করবে।
বাংলাদেশের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব জাফর আহমেদ খান এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, গত মার্চে বেইজিংয়ে দুই দেশের পানিসম্পদসচিব পর্যায়ের বৈঠকে জাংমু জলবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে পানি প্রত্যাহারের খবরে বাংলাদেশের উদ্বেগের বিষয়টি তোলা হয়েছিল। এ সময় চীনের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, ওই প্রকল্পে পানি প্রত্যাহারসহ এমন কিছু করা হবে না, যাতে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া বৈঠকে বাংলাদেশ অববাহিকাভিত্তিক পানি ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে।

Featured বাংলাদেশ