আজ শনিবার ১০ মহররম, পবিত্র আশুরা। বিশ্বের মুসলিম উম্মাহর কাছে একই সঙ্গে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এবং শোকাবহ দিন। হিজরি ৬১ সালের এই দিনে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা ইয়াজিদের সৈন্যদের হাতে কারবালার প্রান্তরে শহীদ হন।
এই দিনেই হজরত ইব্রািহম (আ.)-কে আল্লাহ পাক নমরুদের অগ্নিকুণ্ড থেকে রক্ষা করেন। হজরত মুসা (আ.) তাঁর অনুসারীদের নিয়ে ফেরাউনের অত্যাচার থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহ পাকের অশেষ রহমতে নীল নদ পার হয়েছিলেন। আর তাঁর পশ্চাদ্ধাবনকারী ফেরাউন সদলবলে নীল নদে ডুবে মারা যায়। আশুরার দিনেই হজরত ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। এমন অনেক মর্তবাপূর্ণ ঘটনা আশুরার দিনটিকে তাৎপর্যমণ্ডিত করে রেখেছে।
তবে মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে কারবালার প্রান্তরে। সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) এবং তাঁর পরিবার ও অনুসারীরা যুদ্ধ করতে গিয়ে ফোরাত নদীর তীরে ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে শহীদ হন। শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম ইসলামের সুমহান আদর্শ সমুন্নত রাখতে তাঁদের এই আত্মত্যাগ মানবতার ইতিহাসে সমুজ্জ্বল হয়ে আছে। কারবালার এই শোকাবহ ঘটনা ও পবিত্র আশুরার শাশ্বত বাণী অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে আজও অনুপ্রেরণা জোগায়। প্রেরণা জোগায় সত্য ও সুন্দরের পথে চলার।
মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আজ যথাযোগ্য মর্যাদায় পবিত্র আশুরা পালিত হবে। নফল রোজা, নামাজ, জিকির-আজকারের ভেতর দিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা দিনটি পালন করবেন। পবিত্র আশুরা উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। পুরান ঢাকার হোসেনি দালান থেকে শিয়া সম্প্রদায়ের উদ্যোগে তাজিয়া মিছিল বের হবে। এ ছাড়া নগরের মিরপুর, মোহাম্মদপুর, পুরানা পল্টনসহ বিভিন্ন স্থান থেকেও বের হবে তাজিয়া মিছিল।
পবিত্র আশুরা উপলক্ষে দৈনিক সংবাদপত্রগুলোর প্রকাশনা বন্ধ থাকবে। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রধানেরা দিনটি উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ পবিত্র আশুরার বাণীতে সাম্য ও ন্যায়ভিত্তিক শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, সংহতি ও অব্যাহত অগ্রগতি কামনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে সব অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে জাতীয় জীবনে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আশুরার মহান শিক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে সবার প্রতি আহ্বান জানান।
আর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তাঁর বাণীতে বলেছেন, বাংলাদেশে এখন মানুষের সুবিচার পাওয়ার সম্ভাবনা সম্পূর্ণরূপে তিরোহিত হয়ে গেছে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়তে ১০ মহররমের আত্মত্যাগের চেতনা বুকে ধারণ করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।