ডেমরার সুলতানা কামাল সেতুর নিচের প্রায় দুই একর জায়গা দখলমুক্ত করার এক মাসের মধ্যে ফের দখল হয়ে গেছে। সেখানে এখন ব্যবসায়ীদের রমরমা বালু-বাণিজ্য চলছে। বালু আনা-নেওয়ার জন্য নদীর পাড়ে বিআইডব্লিউটিএর লাগানো ১০০ গাছের ৭২টি কেটে সেখানে ট্রাক চলাচলের রাস্তা করা হয়েছে।
গত ৩ আগস্ট প্রথম আলোয় ‘ডেমরা সেতুর নিচে বালু-বাণিজ্য’ শিরোনামে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর ১৬ ও ১৭ আগস্ট ডেমরায় বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীর সংযোগস্থলে সুলতানা কামাল সেতুর নিচে অভিযান চালায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।
বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক এ কে এম আরিফ উদ্দিন গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘খবর পেয়েছি স্থানীয় প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ীরা সুলতানা কামাল সেতুর নিচের প্রায় দুই একর জায়গা ফের দখল করে বালু ব্যবসা করছে। লাগানো গাছও কেটে ফেলা হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব সেখানে অভিযান চালানো হবে।’ তিনি বলেন, নদী দখল করে বালুর ব্যবসার কারণে এর আগে ডেমরা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আবদুল মোমিনসহ ১২ জনের নামে জলাধার সংরক্ষণ আইনে নৌ-আদালতে মামলা করা হয়। সেই মামলা বিচারাধীন আছে।
২০১০ সালের মাঝামাঝি ৭৯ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয়ে সুলতানা কামাল সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়। সেতুটির দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৭২ মিটার ও প্রস্থ ১০ মিটার। সেতু তৈরির অনেক আগে থেকেই ঘাট এলাকায় দখলের প্রক্রিয়া চালু ছিল। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, তখন তাদের স্থানীয় নেতাদের দখলে চলে যায় ডেমরা ঘাট এলাকা।
বৃক্ষরোপণ: বালু ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদের পর সেখানে লাগানো হয় গাছের চারা। ১৯ আগস্ট তোলা ছবিগতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীর সংযোগস্থলে নির্মিত সেতুর পূর্ব প্রান্তের স্তম্ভগুলো (পিলার) থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকায় নদীর ঢালে ১০ থেকে ১৫টি গদিঘর বসানো হয়েছে। সেখানে ৩০-৩৫টি ট্রাক, বালু ও ইট স্তূপ করে রাখা হয়েছে। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে সেতুর নিচে বালুভর্তি কয়েকটি ট্রাক দাঁড়ানো অবস্থায় দেখা যায়। নদীর তীরে ট্রাকে বালু তুলছেন শ্রমিকেরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডেমরার স্টাফ কোয়ার্টার এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা প্রথম আলোকে বলেন, সেতুর নিচের জায়গা দখল করে যাঁরা বালুর ব্যবসা করেন, তাঁরা সবাই প্রভাবশালী। তাঁদের বিরুদ্ধে কথা বলার লোক নেই।
আবার দখল: সেতুর নিচে লাগানো গাছের চারা কেটে ফেলে জায়গাটি আবার দখল করেছেন বালু ব্যবসায়ীরা। ছবিটি গতকালের। ছবিগুলো তুলেছেন হাসান রাজাসেতুর পূর্ব প্রান্তের স্তম্ভটির ১০ হাত দূরে বালু উত্তোলনের একটি যন্ত্র বসানো হয়েছে। ওই স্তম্ভটির সঙ্গে একটি বালুবোঝাই বড় ট্রলার বাঁধা হয়েছে। আর স্তম্ভের কাছাকাছি জায়গা থেকে বালু উত্তোলনের কারণে স্তম্ভের একটি অংশ ভেঙেও গেছে। অন্যদিকে বিআইডব্লিউটিএর ২৮টি গাছ বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘেরা রয়েছে। যে ৭২টি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে, তাও বেড়া দিয়ে ঘেরা ছিল। অবশ্য ওই জায়গাগুলোতে কোনো গাছ ছিল কি না, তা এখন আর দেখে বোঝা যায় না।
বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক আরিফ উদ্দিন বলেন, ‘যারা গাছ কেটে বালুর ব্যবসা শুরু করেছে, তারা প্রভাবশালী। আমরা বসে থাকব না। উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।’