রাজধানীর গ্রিন রোডের একটি বেসরকারি ক্লিনিক। কম পয়সায় কিডনি ডায়ালাইসিসসহ সব ধরনের সেবা দেওয়ার কথা বলে রোগী ভর্তি করে প্রতিষ্ঠানটি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি দল গিয়ে দেখতে পায়, ছয়তলা হাসপাতালটির দুটি তলায় মাত্র দুজন চিকিৎসক কাজ করছেন। সেবার মান নাজুক।
ধানমন্ডিতে যন্ত্রপাতি ছাড়া নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র চালিয়ে যাচ্ছিল এক ক্লিনিক। সেটির আইসিইউ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গত ৩০ সেপ্টেম্বর পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দেশের সব বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিককে জনবল ও যন্ত্রপাতির হালনাগাদ তথ্য পাঠাতে ১০ দিনের সময় বেঁধে দিয়েছিল। অধিদপ্তরে পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে কর্মকর্তারা বলছেন, এই প্রতিষ্ঠানগুলো স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা, শল্যচিকিৎসা ও মেডিসিন বিভাগের রোগীদের সেবা দেওয়ার অনুমতি নিয়ে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র, নবজাতকদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র, ডায়ালাইসিস ইউনিট ও করোনারি কেয়ার ইউনিট খুলে বসেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখার পরিচালক শামিউল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোয় যতজন চিকিৎসক থাকার কথা ততজন নেই, একাধিক বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতাল একই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে নিজেদের বলে দাবি করেছে, প্রশিক্ষিত নার্সের পরিবর্তে পাওয়া যাচ্ছে প্যারামেডিকদের।
তবে অধিদপ্তর এখনই সব হাসপাতাল ও ক্লিনিকের তথ্য আলাদাভাবে দিতে পারছে না। দেশে এ মুহূর্তে ৪ হাজার ২৫৫টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক আছে। এর তিন-চতুর্থাংশই ঢাকায়। অধিদপ্তরের বেঁধে দেওয়া সময়ে মাত্র ২৫ ভাগ হাসপাতাল তাদের তথ্য দিয়েছিল। তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি অভিযান শুরু হওয়ায় এখন বাদ থাকা হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোও তথ্য দিতে শুরু করেছে। গতকাল বুধবার পর্যন্ত প্রায় ৬০ শতাংশ হাসপাতাল ও ক্লিনিক তথ্য দিয়েছে।
বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব এ বি এম হারুন সরকারের এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন।
তবে সংগঠনটির অপর এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা আশা করি সরকার সরকারি হাসপাতালে দালালদের উৎপাত কমাতে সক্ষম হবে এবং চানখাঁরপুল, শ্যামলী ও মহাখালীতে সরকারি হাসপাতালের আশপাশে যেসব নিম্নমানের ক্লিনিক আছে সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’
গরমিল যেখানে: নিয়ম অনুযায়ী প্রতি ১০টি শয্যার জন্য একজন চিকিৎসকের আট ঘণ্টা কাজ করার কথা। বেশ কিছু ক্লিনিকে একজন চিকিৎসক টানা ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা কাজ করছেন। ১০ শয্যার হাসপাতালের জনবল দিয়ে ৫০ শয্যার হাসপাতাল চালানোর তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
বাংলাদেশে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রগুলো মূলত চালান অবেদন বিশেষজ্ঞরা। দেখা গেছে, কোনো বিশেষজ্ঞই সার্বক্ষণিক কোনো একটি হাসপাতাল বা ক্লিনিকের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের দায়িত্ব নিচ্ছেন না। গুরুত্বপূর্ণ এই ইউনিটগুলো দিনের বেশির ভাগ সময়ই কনিষ্ঠ চিকিৎসকদের দায়িত্বে থাকে। বেশ কিছু ব্যয়বহুল হাসপাতাল ও ক্লিনিক ঢালাওভাবে সব বিশেষজ্ঞকে নিজেদের চিকিৎসক বলে দাবি করেছে। এঁদের মধ্যে একই বিশেষজ্ঞকে একাধিক প্রতিষ্ঠানের নিজেদের বলে দাবি করার উদাহরণ আছে। কোনো কোনো ক্লিনিক ও হাসপাতাল অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নাম দিলেও বিশেষায়িত সেবার দায়িত্বে আসলে কে আছেন সে তথ্য চেপে গেছে।
শামিউল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে কোনো অবস্থান নিইনি। এগুলোকে একটা নিয়মকানুনের মধ্যে আনা আমাদের উদ্দেশ্য।’