ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি শিশুদের ওপর ‘ব্যাপক সহিংসতা’ চালানোর অভিযোগ এনেছে এক আন্তর্জাতিক শিশু সংগঠন। তারা বলছে, ইসরায়েলি-ফিলিস্তিনি সংঘাতে চলতি মাসে ১০ শিশু নিহত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক শিশু সংগঠন ‘ডিফেন্স ফর চিল্ড্রেন ইন্টারন্যাশনাল’য়ের অ্যাটর্নি ব্রাড পার্কার আল জাজিরাকে বলেছেন, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এবং ইহুদি বসতিস্থাপনকারীদের দ্বারা ফিলিস্তিনি শিশু নির্যাতনের বিষয়টি নিত্ত নৈমত্তিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এ ধরনের হামলা আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সমন্বয় কার্যালয় থেকে প্রচারিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়ছে, গত ছয় দিনে (চলতি মাসের ৬ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত) পশ্চিম তীর ও গাজায় ইসরায়েলি সেনা ও বসতিস্থাপনকারীদের হামলায় কমপক্ষে ২০১টি ফিলিস্তিনি শিশু আহত হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবাধিকার বিষয়ক ফেলো ফেডরিকা ডি আলেকজান্ডার বলছেন, এ ধরনের সহিংসতা ফিলিস্তিনি শিশুদের মনে ‘গভীর মানসিক সঙ্কট’ তৈরি করছে। তিনি আরো বলছেন, ‘বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ইসরায়েলি নির্যাতনের ফলে ওইসব শিশুদের মধ্যে আতঙ্ক, হতাশা, উদ্বিগ্নতাসহ নানা ধরনের মানসিক জটিলতা তৈরি হচ্ছে।’
গত মাসে জেরুজালেমের পবিত্র আল আকসা মসজিদে ইসরায়েলি সেনাদের প্রবেশকে কেন্দ্র করে ইসরায়েল-ফিলিস্তিনিদের মধ্যে এই সংঘাত শুরু হয়। পরে এ সহিংসতা পশ্চিমতীর ও গাজা উপত্যকায় ছড়িয়ে পড়ে। ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে ইসেরায়েলি বাহিনী নিয়মিত টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেটে এবং কখনো কখনো গুলি পর্যন্ত চালিয়ে থাকে। তাদের হামলা থেকে রক্ষা পাচ্ছে না ফিলিস্তিনি শিশুরাও।
চলতি মাসের প্রথম দিন থেকে এ পর্যন্ত তাদের হাতে কমপক্ষে ৫২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন যাদের অধিকাংশই নিরস্ত্র সাধারণ মানুষ। অন্যদিকে ফিলিস্তিনি ছুরিকাঘাতে মারা গেছে মাত্র আট ইসরায়েলি।
এ সম্পর্কে ‘ডিফেন্স ফর চিল্ড্রেন ইন্টারন্যাশনাল’য়ের অ্যাটর্নি ব্রাড পার্কার বলছেন,‘ইসরায়েলি সেনাদের ‘দেখামাত্রই গুলি’ করার নীতি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। অনেক সময় তাদের এই নীতির কারনে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হচ্ছে।’
গত ৫ অক্টোবর বেথলেহামে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছিল ১৩ বছরের শিশু আবদেল রাহমান আবদুল্লাহ। এই হত্যাকাণ্ডকে ‘অনিচ্ছাকৃত’ বলে উল্লেখ করেছে ইসরায়েল। তারা বলছে, এক প্রাপ্তবয়স্ক ফিলিস্তিনিকে গুলি করার সময় ওই বালক মারা যায়। তবে বিক্ষোভকারীদের ওপর আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহারকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছেন পার্কার। তিনি বলেন,‘অথচ আমরা ফিলিস্তিনি শিশুদের অহরহ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার দেখতে পাচ্ছি। বিক্ষোভে অংশ নেয়ার সময় ইসরায়েলিদের হাতে নিয়মিত প্রাণ দিচ্ছে নিরীহ শিশু কিশোররা।
মঙ্গলবার রাতে পশ্চিমতীরের ইয়াবাদ গ্রামের ১৪ বছরের কিশোর সাকির হেরজাল্লাহর ওপর হামলা চালায় একদল ইহুদি বসতিস্থাপনকারী। সাকির তখন তাদের বাগান থেকে জলপাই পাড়ছিল। কিন্তু ইহুদিরা অনর্থক তাকে ধরে প্রহার করে। এতে সে গুরুতর আহত হয়। এরকম ঘটনা একটা নয়। গত পহেলা অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনিদের ওপর এরকম ৪৮টি হামলা চালিয়েছে বসতি স্থাপনকারীরা। এসব ফিলিস্তিনিদের মধ্যে বেশ কয়েকজন শিশুও ছিল। তবে এ ধরনের হামলা ফিলিস্তিনিদের দমিয়ে রাখতে পারেনি। ইসরায়েলি নির্যাতন নিপীড়নের বিরুদ্ধে অধিকৃত অঞ্চলের ফিলিস্তিনিরা নিয়মিতই প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছে।