আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) প্রায় ২৬ কোটি ডলার বর্ধিত ঋণ সুবিধা দেবে বাংলাদেশকে। এর মধ্য দিয়ে চুক্তি অনুযায়ী ইসিএফের মোট ৯০ কোটি ৪২ লাখ ডলার পাচ্ছে বাংলাদেশ। আজ বৃহস্পতবার ঢাকায় প্রাপ্ত আইএমএফ’র এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়। এ সিদ্ধান্তের ফলে শিগগিরই এডিআর (স্পেশাল ড্রয়ের রাইটস)-এর ২৫৮ দশমিক ৩ মিলিয়ন ডলার পাবে বাংলাদেশ। অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি আরো বাড়াতে বিশেষ করে বিদ্যুৎ ও পরিবহন খাতে ব্যবসায়ের পরিবেশ ও শ্রমিক অধিকার ও কর্মব্যবহার উন্নতিসহ অবকাঠামোগত বাধা অপসারণে অধিক গুরুত্ব দিয়েছে আইএমএফ।
এর আগে গতকাল বুধবার ওয়াশিংটনে সংস্থার নির্বাহী পর্ষদের সভায় ৩ বছর মেয়াদী ইসিএফের আওতায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মসূচি ৫ম ও ৬ষ্ঠ কিস্তির বিষয়টি পর্যালোচনা শেষে ২৫ কোটি ৮৩ লাখ ডলার ছাড়ের সিদ্ধান্ত হয়। একই সাথে ২০১৬ সালের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত সব ব্যাংকের সব শাখায় অটোমেশন চালুর কাজ শেষ করার তাগিদ দেয়া হয়েছে
এর আগে আইএমএফ ২০১২ সালের ১১ এপ্রিল ইসিএফ’র আওতায় তিন বছরে ৬ কিস্তিতে এসডিআর ৬৩৯ দশমিক ৯৬ মিলিয়ন (প্রায় ৯০৪ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার) অনুমোদন করে। এর মেয়াদ শেষ হবে আগামী ৩১ অক্টোবর। এর প্রথম কিস্তির ১৪১ মিলিয়ন ডলার ২৫ এপ্রিল ছাড় করা হয়। এই ঋণ ছাড়ের ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরো সুসংহত হবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা এ কথা জানান। বর্তমান বৈদেশিক রিজার্ভের পরিমাণ ২৭ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।
এ সিদ্ধান্তের পর আইএমএফ’র উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিৎসুহিরো ফুরুসাওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, দূরদর্শী সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি ও কাঠামোগত সংস্কারের ফলশ্রুতিতে বর্ধিত ঋণ সুবিধার সহায়তায় বাংলাদেশের অর্থনীতি গত সাড়ে ৩ বছরে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক চ্যানেঞ্জের মধ্যদিয়ে এগিয়ে গেছে।
মন্ত্রর মুদ্রা স্ফীতির সঙ্গে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে এবং রিজার্ভ বৃদ্ধির ফলে সরকারি ঋণ স্থিতিশীল হয়েছে- এ কথা উল্লেখ করে তিনি বর্তমান বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ ও অনিশ্চিত প্রেক্ষাপট এবং টালমাটাল মুদ্রা স্ফীতির ঝুঁকির মাঝে উচ্চ প্রবৃদ্ধি গতিশীলতার লক্ষ্যে বিচক্ষণ আর্থিক ও মুদ্রা নীতি অব্যাহত রাখার পরামর্শ দেন।
ফুরুসাওয়া অর্থনীতির সকল সম্ভাবনা কাজে লাগাতে কাঠামোগত সংস্কারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, ইসিএফ ব্যবহার আওতায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার করতে হবে। তিনি কাঠামোগত চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে জিডিপি’র অনুপাতের চেয়ে নি¤œ কর-এর কথা উল্লেখ করেন। উপ-পরিচালক গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ও শক্তিশালী সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে সরকারি বিনিয়োগের জন্য আর্থিক ও রাজস্ব খাতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার পরামর্শ দিয়ে বলেন, ২০১৬ সালের মধ্যে নতুন মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) বাস্তবায়ন করতে হবে। এতে কর প্রশাসনের কর্মকান্ড ও কম করদাতাদের ‘কমপ্লায়েন্স কস্ট’ সহজতর হবে এবং যা দরিদ্র ও ছোট ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা দেবে।
ফুরুসাওয়া আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে স্থানীয় তেলের মূল্যের সমতা, বিধান, আর্থিক ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করা এবং রাষ্ট্রীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিবেদনসহ অদক্ষতা ও নিবর্তনমূলক জ্বালানি ভর্তুকি হ্রাসের পরামর্শ দেন। এতে পরিকল্পতভাবে সামাজিক ব্যয় নির্বাহের ক্ষেত্র তৈরি হবে বলে তিনি এ কথা উল্লেখ করেন। তিনি ব্যাংক খাতে বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে সংস্কার ও দক্ষ করপোরেট ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সংস্কারের ওপর গুরুত্ব দিয়ে ২০১৬ সালের মধ্যে সব শাখায় অটোমেশন চালুর পরামর্শ দেন।