সাদৃশ্যপূর্ণ বা বিভ্রান্তিমূলক ট্রেডমার্ক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নিবন্ধন না দেয়ার বিধান রেখে আইন সংশোধন করা হচ্ছে। এতে সুপরিচিত কোনো ট্রেডমার্কের অনুরূপ ট্রেডমার্ক আবেদনের সুযোগ থাকছে না। এরই মধ্যে আইনটি পাসের জন্য উত্থাপন করা হয়েছে।
জানা গেছে, সংশোধিত আইনটি ট্রেডমার্ক (সংশোধন) আইন, ২০১৫ নামে পরিচিত হবে। এর আগে ২০০৯ সালে ট্রেডমার্ক আইন করা হয়। আইনটির বেশ কয়েকটি ধারা সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— ১০(৫), ১০(৬), ১৮(৫), ১৮(৬) ও ১৮(৮)।
আইনটির সংশোধনীতে বলা হয়েছে, কোনো পণ্য বা সেবার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে নিবন্ধিত ট্রেডমার্কের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ বা বিভ্রান্তিমূলকভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ, এমন ট্রেডমার্কের আবেদন বিবেচনা করা হবে না। এছাড়া ট্রেডমার্ক যাচাইয়ের ক্ষেত্রে বিক্রেতাদের মতামত নেয়ারও সুযোগ রাখা হয়েছে। এর আগে ভোক্তাসাধারণের কাছ থেকে এ বিষয়ে মতামত নেয়ার বিধান ছিল।
দেশে ট্রেডমার্কসের স্বত্ব মেধাসম্পদ স্বীকৃতিতে কাজ করে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদফতর (ডিপিডিটি)। একই সঙ্গে পেটেন্টস্বত্ব, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিজাইনের অনুমোদন ও মেধাসম্পদ বিষয়ক কার্যক্রমও পরিচালনা করে সংস্থাটি। এছাড়া নিবন্ধনের বিরোধিতা সম্পর্কিত বিষয় নিষ্পত্তিতে সময়ও বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে ১২০ কার্যদিবসে এটি নিষ্পত্তি করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে, যা সংশোধিত আইনে বাড়িয়ে ৩৬০ কার্যদিবস করা হচ্ছে।
ডিপিডিটির সহকারী রেজিস্টার (ট্রেডমার্কস) মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, বিদ্যমান আইনটির বেশকিছু জায়গায় স্পষ্টীকরণের উদ্দেশ্যে সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে বিভ্রান্তিমূলক ট্রেডমার্ক নিবন্ধন নেয়ার সুযোগ বন্ধের বিষয়টি রাখা হয়েছে। এছাড়া বিরোধ নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন করতে সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। সামগ্রিকভাবে এগুলো ট্রেডমার্ক নিবন্ধন প্রক্রিয়াকে আরো গতিশীল করবে।
জানা গেছে, বিদ্যমান আইন, বিধিমালা ও নীতিমালা যুগোপযোগী না হওয়ায় ট্রেডমার্কস, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিজাইন ও পেটেন্ট অনুমোদনের প্রক্রিয়া বিলম্বিত হচ্ছে। তবে এ-সংশ্লিষ্ট আইনটি সংশোধনের প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট সংস্থাটির জনবল ঘাটতিও আবেদন নিষ্পত্তির ধীরগতিতে ভূমিকা রাখছে। অন্যদিকে অনলাইনে আবেদন গ্রহণ ও নিষ্পত্তির সুযোগ তৈরির উদ্যোগ নেয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। সূত্র জানায়, গত পাঁচ বছরে ট্রেডমার্কস নিবন্ধনে পাওয়া আবেদনের মাত্র ২২ দশমিক ৩৭ শতাংশ নিষ্পত্তি হয়েছে।
ডিপিডিটি সূত্রে জানা গেছে, উদ্যোক্তাদের অসেচতনতার কারণে প্রাপ্ত আবেদনের বড় অংশই ত্রুটিপূর্ণ থাকে। ট্রেডমার্কসের স্বীকৃতির জন্য বেশি আবেদন পড়লেও যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে অধিকাংশ প্রতীক নকল বলে প্রতিপন্ন হয়। একই সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিজাইনের ক্ষেত্রে দুর্বল ও মানহীনতার কারণে বড় অংশের আবেদন নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয় না। এছাড়া জনবল সংকটেও আবেদন প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়।