অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আশায় শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় নির্মাণাধীন দুই লেন সড়কের দুই পাশে কাঁচা-পাকা ঘর তৈরির হিড়িক পড়েছে। উপজেলার বাটকামারী এলাকা থেকে কান্দাপাড়া গ্রাম পর্যন্ত এক কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে গত দেড় মাসে তোলা হয়েছে ৮৫টি কাঁচা-পাকা ঘর।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নকলা পৌর শহর থেকে নালিতাবাড়ী উপজেলা নাকুগাঁও স্থলবন্দর পর্যন্ত সাড়ে ২৯ কিলোমিটার দুই লেন সড়কের কাজ চলছে। এই সড়কে বাটকামারী সেতু থেকে কান্দাপাড়া জহির উদ্দিনের বাড়ি পর্যন্ত এক কিলোমিটার এলাকার জমি শিগগিরই অধিগ্রহণ করা হবে। এ সময় একটু বেশি ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আশায় অনেকে সড়কের দুই পাশে এসব ঘর নির্মাণ করছে। এ ছাড়া সড়কের পাশের জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে।
গত বুধবার বিকেলে মুঠোফোনে জানতে চাইলে জেলা ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা দেবাংশু কুমার সিংহ প্রথম আলোকে বলেন, এই দুই লেন সড়ক বাস্তবায়ন করছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। প্রতি শতাংশ জমি অধিগ্রহণে নিচু ও ফসলি জমির জন্য ১২ হাজার টাকা, উঁচু জমির জন্য ১২ থেকে ১৮ হাজার টাকা, টিনের ঘরের জন্য ২০ থেকে ২৫ হাজার, পাকা ঘরের জন্য ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ ধরা হয়েছে। এলাকাভেদে জমির মূল্য কম-বেশি নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।
বাটকামারী গ্রামের রিকশাচালক মো. মারফত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘১০ শতাংশ জমির ওপরে আমগর বাড়িঘর। মাপ অইছে, হুনতাছি বেশি অর্ধেক জমি মাপের মধ্যে পইড়া গেছে। সরকারিভাবে যেই টেহা ধারজ করছে, হেই টেহা দিয়া অন্য কোনো জায়গায় জমি পাওয়া যাইতো না। তাই একটু বেশি ক্ষতিপূরণের আশায় ৫০ হাজার টেহা খরচ কইরা টিনের ঘর তুলছি।’
নয়াকান্দা গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী সুরুজ আলী বলেন, ‘আমগর এলাকায় অহনও জমি একয়ার (অধিগ্রহণ) অইছে না। লেইজ ক্ষতিপূরণ যেন সবাই পায়। হেই লাইগা সবাই ঘর তুলছে। আমিও দেড় লাখ টাকা খরচ কইরা পাকা দালান তুলছি।’
বাটকামারীর গ্রামের মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার জমির যে দাম নির্ধারণ করেছে, এর বাইরে যাওনের কোনো সুযোগ নাই। তাই আমিও চার লাখ টেহা খরচ কইরা পাকা দালান তুলছি। এর আগে সবাই পাইছে। আমরাও পামু।’
এদিকে এরই মধ্যে ক্ষতিপূরণের অর্থ পাওয়া কয়েকজন জমির মালিক প্রথম আলোর কাছে অভিযোগ করেছেন, জমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ পেতে ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় শতকরা পাঁচ টাকা আগাম ঘুষ দিতে হয়।
এ বিষয়ে ছত্রকোনা গ্রামের হারুন অর রশিদ বলেন, ‘আমার ৯ শতাংশ জমি, একটা টিনের ঘরসহ গাছপালার ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১ লাখ ৭০ হাজার টেহা পাইছি। হেই জমি খারিজের পরেও ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় ১০ হাজার টেহা দিওন লাগছে। যারা ঘুষ দেয়, তারা টাকা বেশি পায়।’
শেরপুর সওজের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মাসুদ মাহমুদ বলেন, দুই লেন প্রকল্পের জমি নির্ধারণের জন্য অনেক আগেই জরিপ করা হয়েছে। এর ভিত্তিতেই জমি অধিগ্রহণ করা হবে। যাঁরা বাড়তি টাকার আশায় ঘর নির্মাণ করছেন, তাঁদের বাড়তি ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কথা নয়।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এ টি এম জিয়াউল ইসলাম বলেন, অধিগ্রহণের জন্য জায়গা নির্ধারণের সময় জমির ভিডিও করা হয়েছে। সেই ভিডিও চিত্র দেখেই জমি অধিগ্রহণ করা হবে। বাড়তি টাকার আশায় ঘর তুলে কোনো লাভ হবে না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আগে কী হয়েছে বলতে পারব না। আমরা নতুন এসেছি, এখন জমি অধিগ্রহণে কোনো পারসেন্টেজ লাগবে না। তারপরও কেউ টাকা চাইলে জমির মালিকেরা যেন আমার সঙ্গে কথা বলেন।’