দেশীয় শিল্পবান্ধব শুল্ক ও করকাঠামো নির্ধারণের জন্য একটি জাতীয় পরামর্শক কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেছেন বিশিষ্ট শিল্প উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, দেশে ব্যাপকহারে কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে শিল্পখাতের কর ও শুল্ক কাঠামো নির্ধারণ করা জরুরি। বিশ্বমন্দার মাঝেও এ বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণ বাংলাদেশে শিল্পায়নের জন্য চমৎকার সুযোগ এনে দিতে পারে।
মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে ‘আমদানি বিকল্প পণ্য উৎপাদন ও নতুন শিল্প স্থাপনে উৎসাহমূলক ট্যারিফ কাঠামো’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা একথা বলেন।
আসন্ন ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেটে দেশীয় শিল্পবান্ধব ট্যারিফ কাঠামো সুপারিশের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে শিল্প মন্ত্রণালয় এ সেমিনার আয়োজন করে। শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া এতে প্রধান অতিথি ছিলেন।
শিল্পসচিব কেএইচ মাসুদ সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এবিএম খোরশেদ আলম। এতে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মজিবুর রহমান, এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট একে আজাদ, নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এটিএম নূরুল আমিনসহ বিভিন্ন চেম্বার, ট্রেডবডি ও শিল্প উদ্যোক্তা সংগঠনের নেতারা আলোচনায় অংশ নেন।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওযার জন্য বাংলাদেশের মোট জাতীয় উৎপাদনে শিল্পখাতের অবদান ৪০ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। এক্ষেত্রে জনগণের মাথাপিছু আয় বাড়িয়ে ন্যূনতম ২ হাজার মার্কিন ডলারে পৌঁছাতে হবে।
জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বাড়লে ভোগের প্রবণতা বাড়বে উল্লেখ করে তারা দেশীয় শিল্প উৎপাদন থেকে বাড়তি চাহিদার যোগান দেয়ার সক্ষমতা তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এক্ষেত্রে তারা আমদানি বিকল্প পণ্য উৎপাদন ও রফতানিমুখী শিল্পায়ন প্রসারের সমন্বিত কৌশল গ্রহণের সুপারিশ করেন।
বক্তারা বলেন, ২০০১ থেকে ২০১১ অর্থবছরের মধ্যে একই সঙ্গে বাংলাদেশের আমদানি ও রফতানির পরিমাণ বেড়েছে। এক্ষেত্রে রফতানির চেয়ে আমদানি বৃদ্ধির পরিমাণ অধিক হওয়ায় বাণিজ্যিক ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি হয়েছে। বাণিজ্যের এ ভারসাম্যহীনতার মোকাবিলায় তারা অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি পরিহার করে শিল্প কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক সুবিধা প্রদানের সুপারিশ করেন।
তারা দক্ষ জনশক্তি রফতানির মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে দেশের সকল বিসিক শিল্পনগরীতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের পরামর্শ দেন। পাশাপাশি তারা সরকারের লোকসান কমাতে রাষ্ট্রায়ত্ত বন্ধ কারখানাগুলো সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে চালুর ওপর গুরুত্ব দেন।
বক্তারা বলেন, ব্যাংক ঋণের অতিরিক্ত সুদ বাংলাদেশের শিল্পায়নের ক্ষেত্রে অন্যতম সমস্যা। তারা ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমানোর পাশাপাশি আমদানি বিকল্প শিল্প স্থাপনের জন্য মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে শূন্য শুল্ক নির্ধারণের দাবি জানান।
এছাড়া তারা মৌলিক কাঁচামালের আমদানি শুল্ক শতকরা ৩ ভাগ, মধ্যবর্তী কাঁচামালে শতকরা ১০ ভাগ, কম্পোনেন্টের ক্ষেত্রে শতকরা ১৫ ভাগ ও তৈরি পণ্যের আমদানি শুল্ক শতকরা ২৫ ভাগ নির্ধারণের পরামর্শ দেন। একই সঙ্গে দেশে নতুন নতুন শিল্প কারখানা স্থাপনে উৎসাহিত করতে তারা নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত নির্ধারিত শিল্পের ক্ষেত্রে শুল্ক ও করকাঠামোর স্থায়িত্ব বজায় রাখার সুপারিশ করেন।
শিল্পমন্ত্রী দেশীয় শিল্প বিকাশে শুল্ক ও করকাঠামো নির্ধারণের জন্য জাতীয় পরামর্শক কমিটি গঠনের প্রস্তাব সমর্থন করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়, ট্যারিফ কমিশন, এফবিসিসিআই, বরেণ্য অর্থনীতিবিদসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে এ জাতীয় কমিটি গঠন করা যেতে পারে। এ কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী শুল্ক ও করকাঠামো নির্ধারণ করা হলে দেশে শ্রমঘন ও টেকসই শিল্পায়ন সম্ভব। শিল্পখাতের স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা না করে শুল্ক ও কর নির্ধারণের সনাতনী সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসা প্রয়োজন বলে তিনি অভিমত দেন।
দেশের প্রায় ১৬ কোটি মানুষের অভ্যন্তরীণ বাজারের বিশাল সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে তিনি মানবসম্পদ উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বাংলাদেশ সময় : ১৬৩৭ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০১২