বোধনের মধ্যদিয়ে আগামীকাল রবিবার থেকে শুরু হচ্ছে ৫দিনব্যাপী সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ‘শারদীয় দুর্গাপূঁজা’র আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম। ইতোমধ্যে সারাদেশের সকল পূঁজা মন্ডপের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। বিশুদ্ধ পঞ্জিকামতে, জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার ঘোটকে (ঘোড়া) চড়ে মর্তলোকে (পৃথিবী) আসবেন। আর দেবী স্বর্গালোকে বিদায় নেবেন দোলায় (পালকি) চড়ে। এবছর সারাদেশের ৬৪ জেলায় ২৯ হাজার ৭৪টি মন্ডপে পূঁজার আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্য রাজধানী ঢাকায় ২২৩টি মন্ডপে পূঁজার আয়োজন হয়েছে। উৎসব সফলভাবে সম্পন্ন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে সকল প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। প্রতিটি মন্ডপে থাকবে পুলিশ ও আনসার সদস্য। টহলে থাকবে র্যাব।
দুর্গাপূঁজা উপলক্ষে সারাদেশে চলছে এখন উৎসবের আমেজ। রং-তুলি দিয়ে প্রতিমার গায়ে শেষবারের মতো তুলির আঁচড় দিচ্ছেন নির্মাণ শিল্পীরা। এর পরেই মন্ডপে মন্ডপে প্রতিমাকে আসনে বসানো হবে। চলবে পূঁজার্চনা আর আরাধনা। প্রতিমা ও মন্ডপ ঘিরে সাজ সজ্জা প্রায় সম্পন্ন। সাজানো হয়েছে বাহারি রংয়ের আলোকসজ্জায়। রবিবার থেকে শুরু হবে ৫দিনব্যাপী শারদীয় দুর্গাৎসবের মূল আনুষ্ঠানিকতা। মন্দিরে মন্দিরে বাজবে ঢাক, শঙ্খ আর ঝাজ। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ভক্তদের আগমনে পূর্ণতা পাবে শারদীয় এ উৎসব।
ঢাকা মহানগর পূঁজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ সাহা মনি বলেন, পূঁজার প্রস্তুতি সম্পন্ন। আশাকরি সকলের সহযোগিতায় সুষ্ঠুভাবে উৎসবের সমাপ্তি হবে। তিনি জানান, ২০১৪ সালে রাজধানীতে ২২২টি মন্ডপে দুর্গাপূঁজা অনুষ্ঠিত হয়। এবছর বেড়েছে একটি। আগামীকাল সায়ংকালে দেবীর বোধন অনুষ্ঠিত হবে। ১৯ তারিখ দেবীর ষষ্ঠী বিহিত পূঁজা, সায়ংকালে আমন্ত্রণ ও অধিবাস। ২০ তারিখ দেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ, সপ্তমী ও মহাসপ্তমী বিহিত পূঁজা। ২১ তারিখ মহাষ্টমী। কুমারী পূঁজা, সন্ধিপূঁজা। ২২ তারিখ মহানবমী পূঁজা। সনাতন পঞ্জিকা মতে এবার ২২ অক্টোবর একই দিনে মহানবমী ও বিজয়া দশমী পড়ায় ওই দিন দর্পণ বিসর্জন হবে। তবে সারাদেশে ২৩ অক্টোবরই বিজয়া শোভাযাত্রাসহকারে প্রতিমা বিসর্জনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে মহালয়ার দিন থেকেই মূলত শুরু হয়েছে দেবী দুর্গার আগমনধ্বনি।
এদিকে রাজধানীর ঢাকার বেশ কয়েকটি পূঁজামন্ডপ ঘুরে দেখা গেছে, ইতোমধ্যে শারদীয় দুর্গাৎসবের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের সামনের মাঠজুড়ে প্যান্ডেল স্থাপন ও মন্দিরের সাজসজ্জার কাজও শেষ। প্রতিমার সৌন্দর্য, মন্ডপের চাকচিক্য নিয়ে বিভিন্ন পূঁজামন্ডপের মধ্যে চলছে নীরব প্রতিযোগিতা। প্রতিমা তৈরির পাশাপাশি শুরু হয়েছে চোখ ধাঁধানো পূঁজামন্ডপের মঞ্চ তৈরি ও নানা পরিকল্পনার কাজ। মন্ডপ পরিচ্ছন্ন করার কাজও চলছে। মন্দির প্রাঙ্গণকে দৃষ্টিনন্দন করে তুলতে মন্দিরগুলোতেও চলছে ঘষামাজা ও রঙের কাজ।
বাংলাদেশ পূঁজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি কাজল দেবনাথ জানান, শারদীয় দূর্গাপুজা কেবল হিন্দু স¤প্রদায়ের নয়, গোটা বাঙালিরই সার্বজনীন উৎসব। এই উৎসব সুষ্ঠুভাবে শেষ করতে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে বরাবরের মতো এবারও প্রশাসনসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।